কমিটি প্রত্যাখ্যান, বিএনপি নেতার বাড়িতে হামলা

লালমনিরহাট জেলা ছাত্রদলের কেন্দ্রঘোষিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছেন দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা বিবাহিত ও অছাত্রদের নিয়ে কমিটি গঠন করার অভিযোগ তুলেছেন। এভাবে কমিটি গঠন করায় নতুন কমিটির তিন নেতা পদত্যাগ করেছেন এবং কিছু বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের বাসভবন ভাঙচুর করেছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান ৫ জুন লালমনিরহাট জেলা ছাত্রদলের ছয় সদস্যের কমিটির অনুমোদন দেন। এ কমিটির সভাপতি নাজমুল হুদা, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মিঠুন সরকার, যুগ্ম সম্পাদক আবু সাঈদ, যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ সাদেকুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজুর রহমান।

এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করে গতকাল বুধবার নতুন কমিটির তিন নেতা পদত্যাগ করেছেন। তাঁরা হলেন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মিঠুন সরকার, যুগ্ম সম্পাদক আবু সাঈদ ও সৈয়দ সাদেকুল ইসলাম। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠানো ওই পদত্যাগপত্রে তাঁরা উল্লেখ করেন, ‘৫ জুন লালমনিরহাট জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ কমিটির সভাপতি নাজমুল হুদা বিবাহিত এবং সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম অর্ধশিক্ষিত। একজন নিয়মিত ছাত্রের জন্য বিষয়টি মানহানিকর। এ কারণে স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে আমরা (কমিটি থেকে) পদত্যাগ করছি।’

এর আগে গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় লালমনিরহাট শহরের বিডিআর সড়কের জেলা বিএনপির কার্যালয়ে ছাত্রদলের জন্য নির্ধারিত কক্ষে সংবাদ সম্মেলন সদ্যঘোষিত জেলা ছাত্রদল কমিটির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নতুন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ সাদেকুল ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ৫ জুন ছাত্রদল কর্তৃক লালমনিরহাট জেলা ছাত্রদলের আংশিক (ছয় সদস্যের) কমিটি ঘোষিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রদল মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ নিয়ে বিবাহিত এবং অছাত্রদের নিয়ে ওই কমিটি গঠন করেছে। তাঁরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। সাধারণ ছাত্র ও কর্মীরা ওই কমিটির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। এ অবস্থায় ওই কমিটি বিলুপ্ত করে সৎ ছাত্রদের নিয়ে পুনরায় কমিটি গঠনের দাবি জানানো হচ্ছে।

জেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে লালমনিরহাট শহরের বিডিআর সড়কের জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমানের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।

এ বিষয়ে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি বাসায় ছিলাম না। আমি মসজিদে তারাবির নামাজ পড়ছিলাম। বাসায় এসে দেখি, বারান্দার জানালার কাচ ভাঙচুর করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, যারা জেলা ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত কমিটি মানতে পারছে না, তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

গতকাল বুধবার দুপুরে জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদকের বাসভবন পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যেকোনো কমিটি নিয়ে দ্বিমত বা ভিন্নমত থাকতে পারে। এ জন্য বিএনপি নেতার বাসভবনে হামলাকে গ্রহণযোগ্য ভাবার কোনো কারণ নেই। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করা হবে।

বিএনপি নেতার বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রদল নেতা সৈয়দ সাদেকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নই, ওই কমিটি প্রত্যাখ্যানকারী সাধারণ ও বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল কর্মী-সমর্থকেরা এ ঘটনা ঘটাতে পারেন বলে মনে করছি।’

নতুন কমিটির সভাপতি নাজমুল হুদা বলেন, ‘আমি তিন মাস আগে বিয়ে করেছি। তবে আমি এখনো ছাত্র।’ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাস করেছি। বর্তমানে উন্মুক্ততেই ডিগ্রিতে পড়ছি। আমি অছাত্র হব কেন?’