খালেদা জিয়াকে সন্ধ্যার পরেও হাসপাতালে আনা হয়নি

কারাগার থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধ্যার পরেও হাসপাতালে নেয়া হয়নি। কারাগারে ৫ই জুন দাঁড়ানো অবস্থা থেকে মাথা ঘুরে ফ্লোরে পড়ে যাওয়ার পর ৫-৭ মিনিট সংজ্ঞাহীন ছিলেন তিনি। শনিবার কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পর তার চিকিৎসকরা এমন দাবি করেছেন। খালেদা জিয়ার একটি মাইল্ড স্ট্রোকের মতো হয়েছিল বলে ধারণা করেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল সকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন রোববার বিকালেই খালেদা জিয়াকে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিএসএমএমইউতে নেয়া হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও সাংবাদিকদের জানান বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিএসএমএমইউতে নেয়া হবে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, হাসপাতালে নেয়ার সময় ঠিক করবেন আইজি প্রিজন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল দাবি করেন কারাগারে সংজ্ঞাহীন হননি খালেদা জিয়া। সুগার ফল্ট করায় তার মাথা ঘুরে গিয়েছিল।

এদিকে বিএনপির তরফে দাবি করা হয়েছে, বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়ার ‘যথাযথ চিকিৎসা’ হবে না। বরাবরের মতোই তারা বেসরকারি হাসপাতাল ইউনাইটেডে স্থানান্তরের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবি জানান। এদিকে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবিতে গতকাল সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। ওদিকে গতকাল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেয়া হয়নি। তবে শেষ মুহূর্তে কেন তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়নি- এ ব্যাপারে সরকারের তরফে কোনো বক্তব্য আসেনি।

উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পর ৮ই ফেব্রুয়ারি থেকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ডে কেয়ার সেন্টারে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া। ৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়া সেখানে একমাত্র বন্দি হিসেবে রয়েছেন। কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর ১লা এপ্রিল সরকারি একটি মেডিকেল টিম তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। ৭ই মে তাকে বিএসএমএমইউতে এনে কয়েকটি এক্স-রে করানো হয়।

বিএসএমএমইউতে খালেদার যথাযথ চিকিৎসা হবে না: বিএনপি
খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেয়ার খবর শুনে তার বিরোধিতা করে আবারও সংবাদ সম্মেলন করে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল বিকালে দলের নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দ্বিতীয় দফায় আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, বিএসএমএমইউতে বিএনপি চেয়ারপারসনের ‘যথাযথ চিকিৎসা’ হবে না। কারণ পিজিতে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল) উনার যে চিকিৎসা, সেই চিকিৎসার ব্যাপারে উনি (খালেদা জিয়া) সন্তুষ্ট নন। সেখানে তার যথাযথ চিকিৎসা হবে না। সেখানে তিনি চিকিৎসা করাতে চান না এবং সেখানে তিনি চিকিৎসা নেবেন না।

রিজভী বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আমরা আবারও আহ্বান জানাচ্ছি। রিজভী বলেন, আমরা বলেছি- বিশেষায়িত হাসপাতাল ইউনাইটেড। যেখানে খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা করাতেন। যেখানে চিকিৎসকরা তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতেন, সেখানেই তিনি চিকিৎসা করাতে চান। এই হাসপাতালে আধুনিক ও উন্নতমানের যন্ত্রপাতি রয়েছে। খালেদা জিয়ার যে শারীরিক অসুস্থতা, সেটা নিরীক্ষা করার জন্য সেসব যন্ত্রপাতি রয়েছে তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো অত্যন্ত নির্ভুুল হবে। তার ডায়াগনস্টিক যথাযথ হবে, সেটা সেখানে আছে। এর আগে সকালে আয়োজিত প্রথম দফা সংবাদ ব্রিফিংয়ে রিজভী বলেন, দেশনেত্রীর চিকিৎসায় কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে, ডাক্তারদের নয়।

তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শনিবার বলেছেন, কারাগারে বেগম খালেদা জিয়া যে পড়ে গিয়েছিলেন সেই সম্পর্কে কারা কর্তৃপক্ষ অবগত নয়। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও অসুস্থতা নিয়ে কতটা অবহেলা করা হচ্ছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে সেটা পরিষ্কার হয়ে গেল। কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে বলেই বন্দি খালেদা জিয়ার গুরুতর শারীরিক অসুস্থতার বিষয়ে ভ্রূক্ষেপহীন থেকেছে- সেটিই প্রমাণিত হলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যদিয়ে। রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার জরুরি চিকিৎসা দরকার এবং সে বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আহ্বান জানালেও সরকার এবং কারা কর্তৃপক্ষ সব সময় এড়িয়ে চলছে।

এ বিষয়ে এখনও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। দেশনেত্রীর স্বাস্থ্যের অবস্থা জেনে শুধু বিএনপিই নয়, দেশবাসীও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিষয়টি নিয়ে এখনও সরকার বা কারা কর্তৃপক্ষ অবগত নয় বলে যে কথা বলা হয়েছে সেটি দেশনেত্রীর অসুস্থতাকে আরও গুরুতর করে তাকে রাজনৈতিক ময়দান থেকে সরিয়ে দেয়ার সুগভীর চক্রান্ত কি না তা নিয়ে মানুষের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শনিবারের বক্তব্য দেশনেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে টালবাহানারই নামান্তর।

রিজভী বলেন, অতীতেও আওয়ামী লীগের সভানেত্রীসহ অনেক নেতাকে কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হয়েছে। তাহলে খালেদা জিয়াকে তার পছন্দমতো চিকিৎসা করতে না দেয়া একজন বন্দির প্রতি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন নয় কি? তিনি বলেন, আমরা বারবার তার সুচিকিৎসার দাবি জানিয়ে আসছি। চিকিৎসকরাও সুচিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ ও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেই, কোনো প্রতিকার নেই। সরকারের এহেন নিমর্ম আচরণের আমরা ধিক্কার জানাই। রিজভী বলেন, অবিলম্বে দেশনেত্রীকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা না দিলে তার বড় ধরনের ক্ষতি হলে এর দায় সরকারকেই বহন করতে হবে। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি জানাচ্ছি- অতিদ্রুত ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করে দেশনেত্রীকে চিকিৎসার সুযোগ দিন। অবিলম্বে ঈদের আগেই তাকে মুক্তি দিন। সেই সঙ্গে আমরা দেশবাসীসহ দলের নেতাকর্মীকে দেশনেত্রীর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে সরকারের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহবান জানাচ্ছি।

খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে নেয়া হবে: আইনমন্ত্রী
কারাগার থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে কয়েকজন জেলা জজের গাড়ির চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একথা জানান।

আইনমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে সরকার অবগত। যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে নিয়ে যাওয়া হবে। আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি রোজা রেখেছিলেন। রোজা রাখার পরে বেলা তিনটা-সাড়ে তিনটার দিকে একটু হেলে পড়ে যাচ্ছিলেন। কারাগারে খালেদা জিয়াকে যে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে, সেই ফাতেমা, উনাকে ধরে ফেলে এবং তাৎক্ষণিক জেলের ডাক্তাররা তাকে দেখেন। খালেদা জিয়া যেহেতু রোজা রেখেছিলেন, তার সুগার লেভেল কমে গিয়েছিল বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

বিএসএমএমইউতে নেয়ার সময় ঠিক করবেন আইজি প্রিজন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী 
কারাগার থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কখন হাসপাতালে নেয়া হবে সেটা আইজি প্রিজন ঠিক করবেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল। গতকাল বিকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়ার ব্যাপারে তার চিকিৎসকরা আমাদের জানিয়েছেন উনি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। আমরা রোববার দুপুরেই তাকে হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছি। পরীক্ষার জন্য কখন হাসপাতালে নেয়া হবে, তা ঠিক করবেন আইজি প্রিজন। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তাকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন, কিন্তু তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) কেন নেয়া হচ্ছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখানেও বড় বড় চিকিৎসক রয়েছেন, গবেষক রয়েছেন। আবার তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরাও রয়েছেন। ওনার ব্যক্তিগত ও কারা চিকিৎসকরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা জানিয়েছেন, আমরা ব্যবস্থা করেছি। তাকে বিএসএমএমইউতে পরীক্ষা করানো হবে। সুতরাং এখানেই চিকিৎসা হবে। খালেদা জিয়ার যদি এর বেশি কিছু প্রয়োজন হয়, আমরা তা দেখবো।’ তার মাইল্ড স্ট্রোকের বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বোঝা যাবে। বিএনপির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। তার চিকিৎসার বিষয়ে সরকার শতভাগ আন্তরিক।

খালেদা জিয়ার সুগার লেভেল কমে গিয়েছিল: অ্যাটর্নি জেনারেল
ওদিকে কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন সংজ্ঞা হারাননি, তার সুগার লেভেল কমে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। গতকাল দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অ্যাটর্নি জেনারেল এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন- এটি ঠিক নয়। সুগার লেভেল কমে যাওয়ায় উনি দাঁড়ানো থেকে ঘুরে গিয়েছিলেন। চকলেট খাইয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ঠিক করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, আমি জানি এ বিষয়টি নিয়ে তারা অনেক কিছু বলবেন। তাই আমি আদালতে যাওয়ার আগে আইজি প্রিজনের সঙ্গে আলাপ করেছি। তিনি আমাকে যে তথ্য দিয়েছেন, তা হলো ৫ই জুন ইফতারের ঠিক আগে আগে ওনার সুগার লেভেল কমে গিয়েছিল। সে জন্য যে তিনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন তা ঠিক নয় বা অজ্ঞান ছিলেন এটিও ঠিক না। এ বয়সে যার ডায়বেটিস আছে, তার সুগার লেভেল সারা দিন পরে একটু এদিক-সেদিক হতেই পারে। মাহবুবে আলম বলেন, এটা আমার কাছে বিশেষ রকম ব্যাপার মনে হয়, গতকাল একটি মামলার তারিখ, আর তার আগের দিন তার চিকিৎসকরা কারাগারে গেলেন। আর এসেই তারা এমন একটা প্রেস কনফারেন্স করে ফেললেন যে, তিনি অজ্ঞান ছিলেন। তিনি যদি অজ্ঞান থাকতেন তাহলে নিশ্চয়ই আইজি প্রিজনের কাছে রিপোর্ট থাকতো, সিভিল সার্জন জানতো। আদালতের সহানুভূতি পাওয়া এবং জনমতের আশায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ও আইনজীবীরা এসব কথা বলছেন। এগুলো নিয়ে তারা (খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও চিকিৎসকরা) একটি জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।

খালেদা জিয়ার মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছে- এমন বক্তব্যও ঠিক নয় উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, উনার যদি মাইল্ড স্ট্রোক হতো তাহলে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এনে সিটিস্ক্যান করা হতো। তার চিকিৎসায় সরকার কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, কোনো আসামির ব্যাপারে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের জেলে যেতে দেয়া হয়? কিন্তু তারা যাতে সরকারকে কোনরকম দোষারোপ করতে না পারে এজন্যই সরকার বেশ কয়েকবার তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের জেলে যেতে অনুমতি দিয়েছে। তিনি বলেন, দুঃখজনক ব্যাপার হলো, চিকিৎসকরাও যদি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান এবং এ ধরনের কথা বলেন, এটা দুঃখজনক। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আজকে মামলার শুনানি অথচ ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা রোববার তার সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। ৫ই জুন যদি তিনি অজ্ঞান হতেন তাহলে সেদিনই বিষয়টি মিডিয়াতে আসতো। কিন্তু তা আসেনি। এ বিষয়টি নিয়ে ঘোলাটে করার চেষ্টা হচ্ছে। বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া হচ্ছে। আদালতের সহানুভূতি পাওয়ার জন্যই তারা এমন করছেন।

‘অ্যাটর্নি জেনারেলের সম্মতি হলেই খালেদা জিয়ার জামিন মিলবে’- বিএনপির চেয়ারপারসনের আইনজীবীদের এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এটি শুধু মিথ্যা কথা নয়, দুঃখজনক এবং আদালত অবমাননাকর। আদালত কারো কথায় চলে না। আমার কথা বা সরকারের কথায় চলার তো প্রশ্নই আসে না। কাজেই এ কথাগুলো বলছেন তাতে মনে হচ্ছে, তারা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি বলেন, আমাদের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং তারা তাদের নিজেদের বিবেক, বিচার, বিশ্লেষণ দ্বারা পরিচালিত হন। খালেদা জিয়াকে তারা (হাইকোর্ট) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় জামিন দিয়েছেন। সুতরাং এ রকম কোনো অভিযোগ করা অহেতুক।

হয়তো মানুষ একদিন নিজের হাতে আইন তুলে নেবে: খন্দকার মাহবুব
গতকাল আদালতের কার্যক্রম শেষে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের কখন সুমতি হবে যে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন হবে- আমাদের সেই অপেক্ষায় থাকতে হবে। এ ধরনের অবস্থায় কত দিন আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের ওপর আস্থা রাখতে পারবেন? মানুষ হয়তো আমাদের ঘৃণাভাবে প্রত্যাখ্যান করে আইন নিজেরাই হাতে তুলে নেবে। আমরা সেই দিনের অপেক্ষায় আছি। খন্দকার মাহবুব বলেন, আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, খালেদা জিয়া জেলে আছেন, ফলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি বা না জারির কোনো প্রশ্ন আসে না। এই একই আদেশের বিরুদ্ধে ভিন্ন একটি সিনিয়র বেঞ্চ আদেশ দিয়েছেন যে, বিচারক ভুল পথে অগ্রসর হয়েছেন। ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জামিন আবেদনের সঙ্গে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কোনো সম্পর্ক নেই। অতএব অবিলম্বে তার জামিনের আবেদনের শুনানি করা হোক। এই একই ধরনের একটি আদেশ নিয়ে আমরা এই কোর্টে আবেদন করেছি।

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেলের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, কুমিল্লায় একই ঘটনার মামলায় দু’টি চার্জশিট (অভিযোগপত্র) হয়েছে। তার মধ্যে একটি ৩০২ ধারায় আরেকটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে। ৩০২ ধারার মামলায় আমরা জামিন পেয়েছি, যা আপিল বিভাগে মুলতবি (শুনানির জন্য) আছে। এর আগে বৃহস্পতিবার অ্যাটর্নি জেনারেল সম্মত হয়ে গিয়েছিলেন যে, আদেশের কপি দেখেননি। কিন্তু গতকাল তিনি ভিন্নরূপে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি (অ্যাটর্নি জেনারেল) বলেছেন, সরকারের নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত হলো হাইকোর্টের সিনিয়র বেঞ্চ যে আদেশ দিয়েছে ওই আদেশের বিরুদ্ধে তারা আপিল দায়ের করবেন। আমরা ক্ষুব্ধ, লজ্জিত এই কারণে যে, অ্যাটর্নি জেনারেল যেহেতু আপিল বিভাগে যাবেন সেহেতু আজকে এটা মুলতবি করা হলো। খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের সম্মতি ছাড়া আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত কোনো আদেশ দিচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল রোববার সময় চেয়েছেন। আদালত সময় দিয়েছেন। হয়তো সোমবারও সময় চাইবেন এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের কখন সুমতি হবে যে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন হবে, আমাদের সেই অপেক্ষায় থাকতে হবে।

তিনি বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হচ্ছে আমরা আর আস্থা রাখতে পারছি না। তিনি আরো বলেন, আমরা আইনের লোক। সুপ্রিম কোর্টের প্রতি আস্থা রেখে বলছি যে, এই ধরনের অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা কতদিন আস্থা রাখতে পারবেন, মানুষ হয়তো বা আমাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে নিজেদের আইন নিজেদের হাতে তুলে নেবে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেবেন কি না- এমন প্রশ্নে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা তো আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছি। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, রেকর্ড দেখে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। আমরা আশা করবো মানবিক কারণে এ বিষয়টি তাদের দেখা উচিত এবং অবিলম্বে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার যা বলেছেন তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়ার জন্য। কেননা যে ধরনের পরীক্ষা ও চিকিৎসা তার দরকার সেটি একমাত্র ইউনাইটেড হাসপাতালে হতে পারে।