নির্বাচনকালীন সরকারের মাধ্যমেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যা অক্টোবরেই গঠন হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের সেই ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ এর রূপরেখা কেমন হবে তা নিয়ে অনেক আগেই কিছু কথা হয়েছে। দলটি বরাবরই বলে আসছে সেটা হবে সংবিধান অনুযায়ী। সে হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে। সেক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরা স্বপদে বহাল থাকবেন। তবে মন্ত্রিসভা সংকুচিত করা হবে।
এদিকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে নিয়ে গঠিত সরকারের অধীনে চায় বিএনপি। এক্ষেত্রে নির্বাচনের তিন মাস আগে সরকার ভেঙে দিয়ে অন্তরবর্তীকালীন সরকার গঠনের কথা বলছেন দলটির নেতারা। যুক্তি হিসেবে তারা বলেছেন, কোনও দলের ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হলে, সেটা কারও কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এ সরকার গঠিত হতে হবে দল নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে। যেসব যোগ্যতা বিবেচনায় নিয়ে আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হতো, এখন সেরকম যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে। কোনও দলীয় লোক দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হলে, সেটা নিরপেক্ষ থাকবে না। তা দলীয় সরকারই হয়ে যাবে।
প্রমান হিসেবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে তুলে ধরে বিএনপির নেতারা বলেছেন, কোনও দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। তার প্রমাণ স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পালাবদল হয় না। নির্বাচনগুলো দলীয় সরকারে অধীনে হওয়ায় সুষ্ঠুও হয় না। সেখানে কিভাবে জাতীয় নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু হবে। তাই নির্বাচনকালীন সরকার হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যক্তি দিয়ে।
এ প্রসঙ্গে বুধবার (২০ জুন) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এ বছরের অক্টোবরেই নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হতে পারে। নির্বাচনকালীন সরকারের আকার ছোট হবে। তবে বিষয়টি পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারে।’
কাদেরর কথার সূত্র ধরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নির্বাচকালীন সরকার নিয়ে এর আগেও আওয়ামী লীগের নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন। এটা তাদের নিজস্ব বক্তব্য। তবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে সব দলের মতামত নিয়ে এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এমন ব্যক্তিদের নিয়ে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হতে হবে দল নিরপেক্ষ লোক দিয়ে। রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত নেই দেশের এমন বিশিষ্টজনদের নিয়ে ওই সরকার গঠন করতে হবে। সেটা আইনজীবী বা বিচারপতি হতে পারে। উচিত হবে বিগত তিনবারের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামোতে যেভাবে ছিল, সেই রকম ব্যক্তিদের দিয়ে গঠন করা। আমরা সেই দাবি করছি।’
২০১৪ সালের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দলীয় লোক দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হলে সেটাকে বলতে হবে— নির্বাচনকালীন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের সরকার। আমরা তো কোনও দলীয় সরকারের কথা বলি নাই। যদি দলীয় লোকের নির্বাচনকালীন সরকারের নির্বাচনে যেতে হয়, তবে তো বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনেই অংশ নিতো। সেখানে তো সর্বদলীয় সরকার হওয়ার কথা ছিল। তখনকার নির্বাচনকালীন সরকারে খালেদা জিয়াকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় দিতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার।’
বিএনপির একটি সূত্র বলছে, নির্বাচনকালীন সরকারের একটি রূপরেখা দেওয়ার কথা ছিল খালেদা জিয়ার। সেই রূপরেখার খসড়া প্রস্তুত করা আছে। নির্বাচনের আগে যদি খালেদা জিয়া মুক্তি পান, তাহলে তিনি নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করবেন। আর তিনি মুক্তি না পেলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বাইরে অন্য দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠলে, তখন সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দেওয়া হবে।