“কোনোরকম দলীয় কোন্দল যেন না হয়, যে সমস্ত ইউনিয়ন কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব সেগুলো মিটিয়ে ফেলতে হবে”

আগামীতে নির্বাচন,সেখানে কোনোরকম দলীয় কোন্দল যেন না হয়। যে সমস্ত ইউনিয়ন কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে খুব দ্রুত সেগুলো মিটিয়ে ফেলতে হবে। নিজেদের লোক করতে গিয়ে যারা আমাদের নেতা-কর্মীদের হত্যা ও নির্যাতন করেছে, তাদেরকে টানাটানি না করে, নতুন নতুন কর্মী সৃষ্টি করেন।বলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ন।

শনিবার (৩০ জুন) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বিশেষ বর্ধিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বেলা এগারটায় ৪০মিনিটে সভা শুরু হয়। সভা সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তার আগে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। এ ছাড়া সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন নৌকা মার্কায় হয়। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার বিজয় হয়েছে। গাজীপুরে সিটি করপোরেশনেও নৌকার বিজয় হয়েছে। নৌকা ভাষার অধিকার দিয়েছে। নৌকা স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। নৌকা দারিদ্রমুক্ত করে যাচ্ছে। নৌকা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিচ্ছে। বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে, যখন নৌকা মার্কায় আমরা ভোট পেয়েছি। কাজেই এই নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য আমাদের উন্নয়নের কথাগুলি আপনারা প্রতিটি গ্রামে, প্রতি ঘরে ঘরে প্রতি পরিবারের কাছে পৌঁছে দেবেন। সেটাই আমি চাই। কারণ মানুষকে বলতে হবে। মানুষ সুখ পেলে কিন্তু দুঃখের দিনের কথা ভুলে যায়। কিন্তু এই সুখটা পেল কীভাবে সেটা আপনাদেরকে মনে করিয়ে দিতে হবে। আপনাদের বলতে হবে, একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় এবং পরিবর্তন হবে।

জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষে দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে সহযোগিতা কামনা করে বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একমাত্র এই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। এই সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। এই সংগঠনের জনসমর্থন বাড়াতে হবে। আমরা এখন আমাদের প্রত্যেকটি ইউনিয়ন থেকে শুরু করে, সমস্ত কমিটিগুলো আমরা কম্পিউটারে ডাটাবেজ করে রাখবো। যাতে আমরা জানতে আমাদের কোনো কর্মী কোথায় কি করে,সেটা জানতে পারি। সে লক্ষ্যেও কাজ চলছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। নবনির্বাচিত মেয়র ও নৌকাকে বিজয়ী করায় গাজীপুরবাসীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। সংক্ষিপ্ত ভাষণ এই বিজয়কে আওয়ামী লীগের ঐক্যের বিজয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। তার কথায়, ‘গাজীপুরের জয়ে প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে কিংবা আওয়ামী লীগ কোনও কিছু অর্জনের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলে কেউ বাধা দিয়ে থামিয়ে রাখতে পারে না।’

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের খণ্ডচিত্র তুলে ধরেন। উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার জন্য আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আসার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। এজন্য দলে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

তৃণমূলকে নিজ নিজ এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো যথাযথভাবে নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এই দেশ কখনো পিছিয়ে থাকতে পারে না। আমরা পিছিয়ে নেই। ‘তবে ওই স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, জাতির পিতার খুনীদেরকে বিচারের হাত থেকে রেহাই দানকারী, তাদের লালন-পালনকারী, দুর্নীতি, মাদক সন্ত্রাসের সাথে জড়িত মানিলন্ডারিং-এর সঙ্গে জড়িত; এই সমস্ত গোষ্ঠী যেন আর কোনদিন বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসতে না পারে, সেটা আপনাদের দেখতে হবে।’

শনিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন গাজীপুরে নবনির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, দলের নির্বাচিত কমিশনার, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও সহযোগী সংগঠনের সদস্যরা। নৌকার বিজয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান নবনির্বাচিত মেয়র।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান ও নবনির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।