আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যাকে নৌকা দেয়া হবে, তার পক্ষে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, নৌকা যেন না হারে। নৌকা হারলে কী হবে একবার ভেবে দেখেছেন?
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আজ শনিবার আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি সিটে না জিতলে কী হবে—এমন মনোবৃত্তি যেন কারও মধ্যে না থাকে। একটি আসনও হারানো যাবে না, সবাইকে এই মনোবৃত্তি নিয়ে কাজ করতে হবে। দল কাকে মনোনয়ন দিলো আপনাদের সেটা দেখার দরকার নেই। আপনারা শুধু নৌকায় ভোট চাইবেন। কারও চেহারা দেখার দরকার নাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের জন্য চিন্তা করে। দেশের উন্নয়নে কাজ করে। কিন্তু মানুষ ভুলে যায়। এ জন্য আমাদের মানুষকে গিয়ে বোঝাতে হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের মানুষের উন্নতি হয়। গ্রামের মানুষ এখন কাজ করে খায়। তারা এখন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারে। এই কথাগুলো সবাইকে বোঝাতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ব্যতীত কোনও রাজনৈতিক দল দেশের দরিদ্র মেহেনতি জনগণের জন্য কিছু করেনি। আওয়ামী আবার ক্ষমতায় এলে একটা মানুষও আর ক্ষুধায় কষ্ট পাবে না, গৃহহীন থাকবে না। সকলেই প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পাবে।
দল ও সহযোগী সংগঠনের অভ্যন্তরীণ মতভেদ এবং দ্বন্দ্ব এখনই মিটিয়ে ফেলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে আগামী নির্বাচন অতীতের যেকোনও সময়ের চাইতে কঠিন হবে। কোনও আসন নিয়ে অমনোযোগী হবার সুযোগ নেই। কোনও আসন নিয়ে অমনোযোগী হবার মানেই হবে সে আসনে পরাজয়। যার কারণে আমাদের সরকার গঠনের সুযোগ ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।
তার সরকারের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ টেনে এনে এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন- ‘মনে রাখবেন, আওয়ামী লীগ যদি আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে, তাহলে এই বিচার বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তারা (বিএনপি-জামায়াত) আবার মানুষের ওপর, তাদের জানমালের ওপর আক্রমণ শুরু করে দেবে, দারিদ্র্য বাড়িয়ে শিক্ষার হার কমিয়ে ফেলবে, সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের কর্মসূচি, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সব বন্ধ করে দেবে, অতীতে যেমনটি করেছিল। কাজেই আপনাদের শুধু আওয়ামী লীগকেই নয়, এর সহযোগী সংগঠনগুলোকেও শক্তিশালী করে তুলতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন- দেশের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে আপনারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে জনগণের কাছে আগামী ডিসেম্বরের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় জনগণ যেন ভোট দেয় সেই আবেদন করবেন। আর অন্যরাতো দেশের স্বাধীনতাই চায়নি, তাই দেশের কোনও উন্নয়ন তারা করবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে, সারাদেশে ইন্টারনেট সার্ভিস চালু করেছে। লার্নিং অ্যান্ড আর্নিংয়ের প্রশিক্ষণ দেয়ায় এখন ঘরে বসেই ছেলে-মেয়েরা অর্থ উপার্জন করতে পারছে।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির আরও মামলা থাকার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি কিন্তু হাজিরা দেন না। হাজিরা দিলেই ধরা খাবে।’খালেদা জিয়া অসুস্থ হলেও মামলায় হাজিরা দিতে না পারার মতো অতটা গুরুতর অসুস্থ কি না এ বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
মানবিক কারণে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় সারা বিশ্বের সমর্থন আমরা পেয়েছি, সেই সমর্থন নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনকে সমর্থন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু আমরা নির্বাচন নিয়ে জোট করেছিলাম। আমাদের সেই নির্বাচনী জোটকে বজায় রাখতে হবে। সাথে সাথে যাদেরকে আমরা নমিনেশন দেবো, যাকে নৌকা মার্কা দেব তাঁর পক্ষে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। যেন নৌকা কোনোমতে না হারে। নৌকা হারলে কী হবে একবার ভেবে দেখেছেন?’
‘দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে একটা ধর্ম হয়ে যায়, সবগুলোতেতো জিতবো এই একটা সীটে না জিতলে আর কি হবে, ২০০৮ সালে এই চিন্তাধারাটা ছিল- এটার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়’ সতর্ক করেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের তৃতীয় ও শেষ বর্ধিত সভা আজ অনুষ্ঠিত হলো। এই সভার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ তৃণমূলে দলীয় কোন্দল ও বিভেদ দূর করে আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিজেদের সংগঠিত করার পরিকল্পনা করছে।
সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাগত বক্তৃব্য দেন। দলের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ শোক প্রস্তাব পাঠ করেন। দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।