চোখ রাঙাবেন না: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গয়েশ্বর

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘জনগণের টাকায় আপনাদের বেতন হয়। অতএব জনগণের ওপর চোখ রাঙাবেন না। আপনাদের সম্পত্তি দিয়ে আপনারা বেতন পান না। আপনারা জনগণের সেবক, সেই জন্য আপনাদের সকলকে অনুরোধ করবো আপনারা জনগণের সাথে চোখ রাঙাবেন না।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘কোনও ব্যক্তিকে চিরস্থায়ী করার জন্য নিয়মনীতি বাদ দিয়ে আপনারা কাজ করবেন না। যাকে বাঁচাতে চান তিনি যখন খাদে পড়বেন আপনারা তখন যাবেন কোথায়? রাজনীতিবিদরা আপনাদের কিছু বলবে না। কিন্তু জনগণ যারা সরাসরি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তারা যদি হাত তুলে তাদেরকে থামাবে কে? সেজন্য বলব যার যা দায়িত্ব সেভাবে পালন করুন।’

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনটির গোলটেবিল মিলনায়তনে দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন আয়োজিত নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার জনগণের প্রত্যাশা শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ‘বিনাভোটে ১০ বছর তো চালালেন। এখন একটাবার একটু দেখেন জনগণ আপনাকে কতটুকু চায়? দেশের জনগণের সাথে তো আপনার দূরত্ব কমছে, প্রতিবেশী দেশের সাথে কিন্তু দূরত্ব বাড়ছে। আমরা তো প্রতিবেশী দেশের সাথে বন্ধুত্ব চাই। একাত্তরে তারা আমাদের পাশে ছিল। এজন্য তাদের বন্ধুত্ব অতি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ তো এ বন্ধুত্বকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। শ্রীলংকা মালদ্বীপ ওরাও একটা সময় ভারতের কথা শুনতো, কিন্তু এখন তারা ভারতের ধার ধারে না। ভারত আগে যা দিয়েছিল তা-ও ফিরিয়ে নিতে বলছে।’

গয়েশ্বর বলেন, ‘আসলে ভারতের সাথে ‘বাংলাদেশের’ বন্ধুত্ব না, বন্ধুত্ব হলো একজন ‘ব্যক্তির’ ‘একটি দলের’। কারণ কোনও দেশ তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে পারে না। বর্তমান সরকারকে দেশের জনগণ চাক বা না চাক আমাদের প্রতিবেশী দেশ তাঁকে (শেখ হাসিনা) চায়। আমাদের এতেই সন্তুষ্ট হতে হবে এবং প্রতিবেশী দেশের খুশির জন্য এদেরকে ক্ষমতায় রাখতে হবে।’

আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতারা ভারত সফর শেষে এসে বললেন দিল্লী বিএনপিকে পাত্তা দেয় না। বিএনপিকে পাত্তা দিক বা না দিক আপনাদের কি? মালদ্বীপ তো দিল্লিকে পাত্তা দেয় না। তা তো বলবেন না। আর তাছাড়া দিল্লি তো বাংলাদেশের মালিক না। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য যেই কাজ করুক না কেন তাদেরকে বিশ্ব দরবারে একদিন আসামি হয়ে দাঁড়াতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাব না। আরে আজ যদি খালেদা জিয়াকে ছেড়ে দিয়ে সরকার কাল নির্বাচন দিয়ে দেয় তবে কি সেই নির্বাচনে আমরা যাবো? খালেদা জিয়ার সাথে সম্পর্ক হলো গণতন্ত্রের, তিনি রাজনৈতিকভাবে জেলে গেছেন, রাজনীতিকভাবেই মুক্ত হবেন। এখানে কোর্টের দেওয়া দাখিলের কোনও কারণ নেই। তার সকল প্রক্রিয়া উদ্দীপ্ত। এটা সবাই জানেন। খালেদা জিয়ার প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রে যদি জনগণ ভোট দিতে পারে তারা খালেদা জিয়ার ওপরে অসন্তুষ্ট হবে না। সুতরাং খালেদা জিয়া ছাড়া এদেশে গণতন্ত্র মুক্তি পাবে না।’ খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে কোন নির্বাচন হবে না। সেই জন্য খালেদা জিয়ার মুক্তি জাতির জন্য অপরিহার্য।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে এবং প্রচার সম্পাদক গোলাম সরোয়ার সরকারের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন-বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-তথ্য ও গভেষণা বিষয়ক সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, জিনাফের সভাপতি লায়ন মিয়া মো: আনোয়ার, ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক আরিফা সুলতানা রুমা ও ঢাকা মহানগর মৎসজীবী দলের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ সেলিম মিয়া প্রমুখ।