পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে জনগণের জন্য যেন কোনো ঝুঁকি সৃষ্টি না হয়, সেই বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কে কোনো কোনো মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকেন। বিশেষ করে এ নিরাপত্তা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরাও এ বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। এটি নির্মাণে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার গাইডলাইন এবং আন্তর্জাতিক মান অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হচ্ছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই।
আজ শনিবার পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের প্রথম কংক্রিট ঢালাই কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আজকে বাংলাদেশে প্রায় ১৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমরা সফলতা অর্জন করেছি। এই বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমরা দুই দশক আগেই বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। ওই সময় প্রথম বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। আজ আমরা প্রায় ৯৩ ভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিদ্যুৎ উৎপাদন শুধু গ্যাসের ওপর নির্ভর ছিল। আজ আমরা গ্যাস, তেল, কয়লা, পরমাণু, বায়ুসহ বহুমুখী ব্যবহার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছি। যেখানে যেটা বাস্তবায়ন করা যায়, তা করেছি। এর মাধ্যমে মাধ্যমে আমরা জনগণের চাহিদা পূরণ করছি।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ঠ সফলতা অর্জন করেছি। আমরা চাই আমাদের দেশ আধুনিক প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাক।
তিনি বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ নাই। পরমাণু শক্তি আমরা শান্তির কাজে ব্যবহার করবো। রাশিয়ার সর্বশেষ জেনারেশন থ্রি-প্লাস প্রযুক্তির রিঅ্যাক্টর দিয়ে তৈরি হচ্ছে এ কেন্দ্র। পারমাণবিক নিরাপত্তা ও বিকিরণ নিয়ন্ত্রণের সর্বাধুনিক ব্যবস্থা আছে এ রিঅ্যাক্টরে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ ও প্রশিক্ষত জনবল তৈরির কার্যক্রম আমরা গ্রহণ করেছি। জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের ভারত ও রাশান ফেডারেশনে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। শুধু পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়, স্যাটেলাইট পরিচালনার জন্য আমরা নিজস্ব জনবল তৈরি করছি।
তিনি বলেন, আমাদের মেধাবি ছেলেমেয়েদের অভাব নেই। যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে পারলেই আমাদের ছেলেমেয়েরাই এ উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি পরিচালনা করতে সক্ষম হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পারমাণবিক শক্তির নিরাপদ এবং সুরক্ষিত প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য আমরা বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২ প্রণয়ন করেছি। এছাড়া বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ নামে একটা স্বাধীন পারমাণবিক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে। এ সংস্থা সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্যে আইএইএ, রাশিয়া এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছি।
তিনি বলেন, যেকোনো দুর্যোগে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে দিকটি বিবেচনা নিয়েই এ প্ল্যান্টের ডিজাইন নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ানোর মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। আশাকরি ২০২৩-২৪ সাল নাগাদ এ কেন্দ্রের দুইটি ইউনিট থেকে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে আমাদের জাতীয় গ্রিডে। ২০২৪ সালের মধ্যে আমাদের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের কমপক্ষে শতকরা ১০ ভাগ এ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে আসবে।