অবৈধ সরকারের বিদায়ের সাইরেন বাজা শুরু হয়েছে, তাই সরকার এখন প্রলাপ বকতে শুরু করেছে, গুজবের আশ্রয় নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। বুধবার (৮ আগস্ট) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
‘কোথায় কি হচ্ছে আমরা জানি। দেশে যখন শান্তিময় অবস্থা বিরাজ করছে ঠিক সে সময়ে ১/১১ এর কুশীলবরা আবার রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অশুভ খেলায় মেতে উঠেছে’- ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘আমার প্রশ্ন ১/১১’র কুশিলব কারা? তাহলে আপনারা (আ.লীগ) কে? আপনাদের আন্দোলনের ফসলই তো ১/১১। আপনিই তো ১/১১’র প্রক্রিয়াকে মহিমান্বিত করে তা ‘পাঠশালা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।’
‘আপনাদের আন্দোলনের ফসলের বিরুদ্ধে এখন বিরূপ মন্তব্য করছেন কেন? তারা আপনাদের এতো প্রিয় ছিল যে, তাদের সব অপরাধ ও বেআইনি কাজ বৈধ করে দেবেন বলেছিলেন এবং ক্ষমতায় এসে তা করেছেন। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ১০ বছর আপনারা ক্ষমতায়। জনগণের ইচ্ছাকে হানাদার বাহিনীর মতো পদদলিত করে, র্যাব-পুলিশকে নিজেদের মতো সাজিয়ে, ছাত্রলীগ-যুবলীগ-শ্রমিক লীগকে বেআইন অস্ত্রে সজ্জিত করে গণতন্ত্রকে নিশ্চিহ্ন করার পরও ১/১১’র কুশীলব নিয়ে আপনারা কথা বললে মানুষ মুখ টিপে হাসে। কারণ জোরে হাসলে গুম হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেবরা শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে পারছেন না বলেই এখন প্রলাপ বকতে শুরু করেছেন, গুজবের আশ্রয় নিয়েছেন। ক্ষমতাসীন নেতারা তাদের নিজস্ব মিডিয়া দিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে নোংরা অপপ্রচারে মেতে উঠেছেন। ছাত্র আন্দোলনের সহিংসতায় বিএনপিকে জড়াতে তারা কুৎসিত অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। ৬ আগষ্ট দৈনিক জনকণ্ঠে একটি ছবি ছাপা হয়েছে, যে ছবিটি ৬ বছরের পুরোনো ২০১২ সালের ২৫ জানুয়ারি দৈনিক ভোরের কাগজে প্রকাশিত একটি ছবি। ছবিতে দেখানো হয়েছে ছাত্রদলের এক নেতার নাম, আসলে সে ছাত্রদলের নেতা নন এটা ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের ছবি।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নীরব মানুষের ক্ষোভ যে ছাই চাপা আগুনের মতো ধিকিধিকি জ্বলছে এবং সেটা যেকোনো সময় কুণ্ডলী পাকিয়ে বিরাট আকার ধারণ করতে পারে। সেটির আঁচ পেরেই বেসামাল কথা বলছেন ওবায়দুল কাদের।’
ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, ‘গতকাল আপনাদেরই একজন সাবেক প্রতিমন্ত্রী পরোক্ষে আপনাদের উদ্দেশ্য করেই স্বৈরাচারী চেহারার কিছু বৈশিষ্ট তুলে ধরেছেন। মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই, উল্টো গণমাধ্যমের ওপর চলছে দমন-নিপীড়ন, সশস্ত্র হামলা ও রক্তাক্ত আক্রমণের শিকার হচ্ছেন তারা। ধমক দেয়া হচ্ছে ইলকট্রনিকস মাধ্যমকে। প্রতিনিয়ত মানুষ গুম হচ্ছে, বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হচ্ছে মানুষ। মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। ন্যায় বিচারের বাণী গুমরে গুমরে কাঁদছে। দেশজুড়ে লুটের রাজত্ব চলছে সবই আছে সাবেক ওই প্রতিমন্ত্রীর (কাদের) বক্তব্যে। এই বিভৎস অনাচারমূলক অরাজক পরিস্থিতিকেই কি ওবায়দুল কাদের শান্তিময় পরিবেশ বলতে চাচ্ছেন।’
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ শিক্ষার্থীকে কোমরে দড়ি লাগিয়ে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। এ যেন গোটা ছাত্রসমাজের কোমরে দড়ি বেঁধে টেনে নেয়া হচ্ছে। এটা জাতির জন্য শুধু লজ্জার নয় এ দৃশ্য দেখে মানুষ ধিক্কার জানাচ্ছে। সরকার কতটা নিষ্ঠুর নির্মম হতে পারে যে, কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের ন্যায্য আন্দোলনের দাবি দমন করতে তাদের গ্রেফতার করে পায়ে ডান্ডা বেড়ি ও কোমরে দড়ি দিয়ে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে।। অবৈধ সরকার টিকিয়ে থাকতে কতটা নির্মমতার পথ বেছে নিতে পারে, এটি তার একটি নিকৃষ্ট উদাহারণ।’
রিজভী বলেন, ‘চলমান ছাত্র আন্দোলন সরকারি সহিংসতার ছোবলে রক্তাক্ত। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে না নিয়ে- এখন অবলম্বন করা হয়েছে নির্যাতনের পথ। দেখানো হচ্ছে নানা ধরনের নাটক ও প্রহসন।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবি এম মোশাররফ হোসেন, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।