প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরাতে ড. কামাল হোসেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার সঙ্গে জুডিশিয়াল ক্যু’তে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের উদ্যোগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতায় এমন মন্তব্য করেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সাবেক বিচারপতি এস কে সিনহাকে নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেছেন তাদের সবার নাম কিন্তু আমরা জানি, ড. কামালের নাম আপনারা জানেন না। শেখ হাসিনা তো বাংলাদেশের উন্নয়ন করেই ফেলেছেন। এখন কি করার? প্রথম ষড়যন্ত্র হলো একটি জুডিশিয়াল ক্যু (বিচারিক অভ্যুত্থান)) করে শেখ হাসিনাকে কী করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে সরানো যায়। আপনারা দেখেছেন, প্রথমে শ্রীলঙ্কায় রাজাপাকশে যখন তার প্রধান বিচারপতিকে নামিয়ে দিয়েছিলেন তখন রাজাপাকশেকেও নেমে যেতে হয়েছে। তারপর পাকিস্তানের নওয়াজ শরিফকে নামিয়ে দিয়েছেন তার প্রধান বিচারপতি। এরপর নেপালে এবং আমাদের সাবেক বিচারপতি এস কে সিনহাকে নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেছেন তাদের সবার নাম কিন্তু আমরা জানি।’
এ সময় উপস্থিত অতিথিরা উচ্চস্বরে ষড়যন্ত্রকারীদের নাম জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা তাদের তো চিনবেনই। ড. কামাল হোসেনকে আপনারা চিনেন না? তারপর এই ষড়যন্ত্র যখন বিফলে গেছে, আমি জানি আমাকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিটিং জাজেরা বলেছেন যে, তারা (জাজেরা) একটি অনুষ্ঠানের জন্য ড. কামাল হোসেনকে ডাকতে গিয়েছিলেন। তখন তিনি (ড. কামাল হোসেন) তাদেরকে (জাজদের) সিনহার (এস কে সিনহা) ব্যাপারে বকাঝকা করেন, ‘কেন সিনহার ব্যাপারে তারা (জাজরা) প্রতিবাদ করেননি, কেন সিনহাকে তারা সরিয়েছেন?’
তিনি আরও বলেন, ‘তারপরে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের কথা যেই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শুনেছেন, তিনি বলেছেন- ঠিক আছে। কোটার ব্যাপারে যদি এ রকম কিছু হয়ে থাকে, তাহলে আমি নিশ্চয়ই দেখবো। দরকার হলে কোটা সম্পূর্ণ বাতিল করে দেব। তারপরেও তো আন্দোলনের কোনো প্রয়োজন হয় না। এই আন্দোলন যাতে চলমান থাকে, এই আন্দোলনের ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করা যায়, সেইজন্য এই কামাল হোসেন (ড. কামাল হোসেন), এই ইউনূছ (ড. মুহাম্মদ ইউনূছ), এই খালেদা জিয়ার যারা সহযোগী তারা কিন্তু এটার মধ্যে নাক গলানো শুরু করেন।’
‘তারপরে সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে। ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছে। তাদের যৌক্তিক দাবি কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মেনে নিয়েছেন। ঠিক আছে, সব ঠিক করে দেব। তারাও ফিরে যেতে চেয়েছে এবং তারা ফিরে গেছে। এর মধ্যেও একটা ষড়যন্ত্র, সরকারকে ফেলে দিতে হবে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘এগুলো কিসের আলামত? এগুলো হচ্ছে, উনারা কোনো একটা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চান। যাতে আবারও যে উন্নয়নের পথ, যে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে, সেটাকে আবারও সেই জায়গা থেকে ফেলে দিতে হবে। পাকিস্তানের নিচে নামাতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের এক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘মওদুদ সাহেব বলেন, আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের দরকার নাই, আমাদের সেইভ (নিরাপদ) বাংলাদেশ দরকার। ওনাদের সেইভ বাংলাদেশের নমুনা হলো- হত্যার বিচার হবে না, আর ক্যান্টনমেন্টে প্রত্যেক শুক্রবার হত্যাযজ্ঞ চলবে। এটা হচ্ছে ওনাদের সেইভ বাংলাদেশ। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ হলে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে উন্নত হয়ে যাবে। তাহলে তো ওনাদের ঘুম হবে না। এটা হচ্ছে ওনাদের নিয়মনীতি।’
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের সঞ্চালনায় এবং পরিষদের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শ. ম. রেজাউল করিম, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান, আব্দুল বাসেত মজুমদার, বারের সাবেক সম্পাদক ও অতিরিক্ত অ্যার্টনি জেনারেল মো. মমতাজ উদ্দিন ফকির, নজিবুল্লাহ হিরু, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল প্রমুখ।