আগামী ১৬ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল।
তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে চাই না। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে আমরা আলোচনায় বসব। সেদিন সমাবেশে বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে আলোচনা হবে। পরদিন (১৬ আগস্ট) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হবে। তার কার্যালয়ে সাংবাদিকরা অবস্থান করবে।’ এ সময় তিনি বলেন, দেখি কেও আমাদের ঠেকাতে পারেন কিনা।
শনিবার (১১ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)।
বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা সাব-এডিটর কাউন্সিল ও ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতাকর্মী ও সদস্যরা।
সমাবেশে মোল্লা জালাল বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় সাংবাদিক সমাজ বিক্ষোভে নেমেছে। আমাদের দাবি একটাই, আমরা নিরাপত্তা চাই। সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের জন্য কাজ করেন। তাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাই সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার করতে হবে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে বিএফইউজে সভাপতি বলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে, আপনারা অদক্ষতার প্রমাণ দিচ্ছেন। পুলিশের দায়িত্ব নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকরা না লিখলে আপনারা বোবা হয়ে যাবেন। সাংবাদিকরা চান না আপনারা বোবা হয়ে যান।’
বিএফইউজে’র সহ-সভাপতি সৈয়দ ইসতিয়াক রেজা বলেন, ‘সাংবাদিকরা সময় বেঁধে দিয়েছিল, সেই সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনে হয় বাসের ধাক্কা খাওয়ার পর এখনও নড়তে পারছেন না।’
তিনি আরও বলেন, লাঠি ও হেলমেটধারীদের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নিউজ বর্জন করব।’
বিএফইউজে মহাসচিব শাবান মাহামুদ বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপর দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে। যারা হামলার নগ্ন উল্লাসে মেতে উঠেছে, তারা কারা— জাতি জানতে চায়।’ প্রশাসনের আড়ালে তারা নিজেদের নিরাপদে রেখেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু মন্ত্রী তা না করে উপহাস করে চলেছেন।
সাংবাদিকদের কাজ করতে দিন, রাজপত্রে ঠেলে দেবেন না— এমন আহ্বান জানিয়ে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি আবু জাফর সূর্য বলেন, দুর্বৃত্তরা চিহ্নিত হলে তাদের গ্রেফতার করুন। এসব হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে পারলে তা দৃশ্যমান করুন।
ডিইউজে সভাপতি আরও বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত আমলে এখনকার চেয়েও বেশিবার সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছিল। তখন বিচার চাইনি। কারণ, জানতাম বিচার পাব না। কিন্তু আমরা এখন বিচার চাচ্ছি। কারণ, বর্তমানে ক্ষমতায় আছেন সাংবাদিকবান্ধব শেখ হাসিনার সরকার।’ সাংবাদিকদের কর্মসূচির কারণে সরকার বিব্রত হলে দায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেই নিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষ দীপ আজাদ বলেন, ‘সাংবাদিকরা কখনও রাস্তা বন্ধ করবে না, গাড়ি ভাঙচুর করবে না। কিন্তু আমরা এমন কর্মসূচি দেব, যা সামাল দিতে পারবেন না।’
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যারা এখন পর্যন্ত চিহ্নিত হয়েছে, তাদের কেন গ্রেফতার করা হয়নি? সাংবাদিকরা যখন তাদের সংবাদ বর্জন করবে, তখন তাদের টনক নড়বে।’
বিক্ষোভ সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী। এছাড়া বক্তব্য রাখেন ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক শুক্কুর আলী শুভ, ঢাকা সাব-এডিটর্স কাউন্সিলের সভাপতি কে এম শহীদুল হক, বিএফইউজে দফতর সম্পাদক বরুণ ভৌমিক নয়নসহ অন্যরা।