বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বিএনপির সঙ্গে সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে সম্মতি প্রকাশ করেছেন। তবে এ ঐক্য প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে তিনটি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন তিনি।
প্রথম শর্ত হলো, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপিকে সম্পর্ক ত্যাগ করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী থাকলে তিনি সেই জোটে থাকবেন না বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন।
এ ছাড়া আরও দুটি শর্ত দেয়া হয়েছে। এসবের পাশাপাশি কোন কোন ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে জোট হতে পারে এ বিষয়টিও পরিষ্কার করেছেন তিনি। এর অংশ হিসেবে গণফোরামের পক্ষ থেকে সাত দফা লিখিত প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছে।
জানা গেছে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এবং ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকের পর সরকারবিরোধী জোট গঠনে সায় দিয়েছেন ড. কামাল হোসেন।
গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, ভোটাধিকার রক্ষায় সব দলের অংশগ্রহণে আগামীতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে বিএনপির সঙ্গে জোট গঠনে আপত্তি নেই তার। তবে বিএনপিকে শর্তগুলো মেনে চলতে হবে।
ড. কামাল হোসেনের তিন শর্তের বিষয় নিশ্চিত করেছেন গণফোরামের নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। তিনি শনিবার বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কোনোভাবেই আমরা (গণফোরাম) জোট করব না। বিষয়টি বিএনপিকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা প্রথম শর্ত।
অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ড. কামাল হোসেনের দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে, জোটগতভাবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করা যাবে না। বিএনপি নিজেদের মতো করে তাদের দলের প্রধানের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার থাকতে পারে, প্রয়োজনে আইনি লড়াইও অব্যাহত রাখতে পারে।
এ ক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেনকে জড়ানো যাবে না। সুব্রত চৌধুরী বলেন, তৃতীয় শর্ত হচ্ছে জোটগতভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া যাবে না। বিএনপি চাইলে দলগতভাবে তারেক রহমানের প্রসঙ্গটি সামনে আনতে পারে।
কিন্তু এর সঙ্গে জোটের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। তিনি বলেন, বিএনপি তিন শীর্ষ নেতা আমাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। আমরা আমাদের কথা বলেছি, তারাও তাদের কথা বলেছে। আশা করি, যোগ-বিয়োগ করে আমরা একটি ঐকমত্যে পৌঁছুতে পারব।
সূত্র জানায়, গণফোরামের পক্ষ থেকে বিএনপির তিন শীর্ষ নেতাকে সাত দফা লিখিতভাবে দেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে সংবিধানকে সমুন্নত রেখেই রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে। ক্ষমতায় এসে স্থানীয় সরকারসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে, স্বাধীনতাবিরোধী ও ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে বাইরে রাখা, নির্বাচন কমিশনকে আরও স্বাধীন এবং শক্তিশালী করা, না ভোটের বিধান যুক্ত করাসহ নির্বাচনী ব্যবস্থায় আমূল সংস্কার করতে হবে।