বিরোধীদলের ভূমিকা ধরে রাখাই জাপার বড় চ্যালেঞ্জ

জাতীয় পার্টি

জাতীয় পার্টির জন্য আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলের অবস্থান ধরে রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলটির নেতা-কর্মীরা মনে করছেন বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে  জাতীয় পার্টির বর্তমান অবস্থান ধরে রাখাটা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ দলে ভোট যুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকার মত যোগ্য প্রার্থীর খুবই অভাব। দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে আলোচনা করে এসব তথ্য জানা গছে।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচন ও রাজনীতি হচ্ছে রণকৌশল। রাজনৈতিক রণকৌশলেই জাতীয় পার্টি মহাজোট করেছে। মহাজোট এখন রাষ্ট্রক্ষমতায়। আগামী নির্বাচন বর্তমান সরকার ও জাতীয় পার্টিও জন্য রণকৌশল। ওই রণকৌশলেও  জাতীয় পার্টি জয়ী হবে।’

‘আগামী নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টি  কি জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে পারবে, এটাকে কি আপনারা চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করেন’, এমন প্রশ্নের জবাবে  রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘জাতীয় পার্টি ৯০ সালের পর থেকে সব কিছু চ্যালেঞ্জ করে এ পর্যন্ত এসেছে। অবশ্যই জাতীয় পার্টির কাছে সব কিছুই মহাচ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে জাতীয় পার্টি তার লক্ষ্য উদ্দেশ্যে পৌঁছাবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভালো ফলাফল অর্জনের মাধ্যমে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় নেওয়া হচ্ছে আমাদের টার্গেট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর বেশি দেরি নেই। দেখতে দেখতে নির্বাচন চলে আসবে। তাই আমরা আগেভাগেই নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছি।’

এদিকে দলীয় নেতা-কর্মীরা জানিয়েছে, আসন্ন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনই তাদের নেতা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও তার স্ত্রী জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের জীবনের শেষ নির্বাচন। তারা দুজন বার্ধক্যজনিত রোগে কাবু হয়ে পরেছেন। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের দেহে কৃত্রিম বাল্ব লাগানো। আর তার স্ত্রী ভুগছেন নানা ব্যাধিতে।

দলের কার্যালয়ে বসে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এরশাদও বলেছেন, ‘আমি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছি। হয়তো এটাই আমার জীবনের শেষ নির্বাচন।’

দলটির অপর এক সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সভা-সমাবেশ যদিও বলে থাকেন আগামী নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করবেন। তার এই প্রত্যাশা যে পূরণ হবে না, তাও নিশ্চিত হয়ে গেছেন। তাই তারা এখন অস্তিত্ব ধরে রাখতে প্রভাবশালী ক্লিন ইমেজের যোগ্য প্রার্থী খুঁজছেন। যাতে করে আসন সংখ্যা বাড়িয়ে বিরোধীদলের পদ বা ভূমিকা টিকিয়ে রাখতে পারে। এজন্য জাতীয় পার্টির নীতি-নির্ধারকরা মহাজোটের নেতৃত্বাধীন সরকারি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গেও ভাল সু-সর্ম্পক রেখে দলীয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

পাশাপাশি নির্বাচনের আগে বিভক্ত জাপাকে একীভূত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন নেতারা। দলছুট নেতাদের পদ-পদবী দিয়ে দলে ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও করছেন। দলছুট নেতাদের সঙ্গে সরাসরি এরশাদ নিজেই কথা বলছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আরও জানায়, জাতীয় পার্টির টার্গেট জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকা ও ক্ষমতার অংশীদার হওয়া। এ জন্য বেশ কিছু কর্মপরিকল্পনা ও রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করেছেন দলের চেয়ারম্যান।  জাতীয় পার্টির নির্বাচনী কৌশলের মধ্যে রয়েছে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন জোটকে সম্প্রসারিত করা, প্রায় দেড়শতাধিক আসনে  প্রভাবশালী যোগ্য প্রার্থী দেওয়া। এছাড়া মহাজোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে দর কষাকষি করা। জাতীয় পার্টি মহাজোট থেকে নির্বাচন করলেও শতাধিক আসন চাইবে জোটের কাছে।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম এমপি বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো জেতার জন্য। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩৫টি আসন পেয়েছিল। ওই সময়ের জাতীয় পার্টি আর এখনকার জাতীয় পার্টি এক নয়। জাতীয় পার্টি সব কিছু  চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে।’

সূত্র ঃ সারা বাংলা