বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন যে পথে এগোচ্ছেন সে পথ হচ্ছে একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করার পথ। এখানে জনগণের রায় দেয়ার কোনও পথ দেখছি না আমরা। আর জনগণের রায় নেয়ার কোনও ইচ্ছেও নেই তাঁর।’
সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রধানমন্ত্রীর গতকালের সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাংবাদিকেদের তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আগামী নির্বাচন যে সবদলের অংশগ্রহণে হবে সেটির কোনও সদিচ্ছা বর্তমান সরকারের নেই। সামনে নির্বাচন, অথচ আজও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে। আর এর মধ্য দিয়েই সরকার আরও একটি নির্বাচন করতে চাইছে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন দেশে গণতন্ত্র আছে, এটি কোন গণতন্ত্র? যেখানে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার নির্যাতন করা হবে আর সরকারি দল নির্বাচনী প্রচারপ্রচারণা চালিয়ে যাবে। এভাবে তো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।’
সংবাদ সম্মেলনে দেয়া শেখ হাসিনার বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য গোটা জাতিকে হতাশ করেছে। কারণ দেশের এই ক্রান্তিকালে, বিশেষ করে যখন সামনে নির্বাচন সেই সময় জনগণের যে অধিকারগুলো নিয়ে প্রশ্ন সেই অধিকারগুলো আর নির্বাচন নিয়ে তিনি যে কথা বলেছেন তাতে গোটা জাতি হতাশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন যে সংকট চলছে তার মধ্যেসবচেয়ে বড় সংকট হলো অবাধ নিরপেক্ষ সরেকারের অধীনে নির্বাচন। সেটি সমগ্র জাতির দাবি, সমগ্র দেশের মানুষের দাবি। অথচ সেই গণদাবিকেই নাকোচ করছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী সবকিছু হবে। সংবিধানতো মানুষের তৈরি। ইতোপূর্বে যে সংবিধান ছিলো সেটিও তাদের তৈরি। সেটিকে তো তারা অনেকবার পরিবর্তন করে নিজেদের দলের সুবিধা মত করে নিয়েছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ জাতি আশা করেছিলো জনগণের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী একটি ইতিবাচক কথা বলবেন। সব দলের সমান সুযোগ সৃষ্টি করে একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু সেটি তিনি করতে পারেননি। এর সম্পূর্ণ ব্যর্থতা তাদের, এর দায়-দায়িত্বও তাদেরকেই নিতে হবে।’
বিএনপির সঙ্গে কোনও সংলাপ হবে না বলে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটির সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘এর আগে ২০১২-১৩ সালেও তারা সংলাপের দাবি উপেক্ষা করেছিলো। পরে বাধ্য হয়েছিল সংলাপে বসতে।’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমরা জনগণের দাবি নিয়ে লড়াই করছি। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন এসব তো বিএনপির দাবি নয়, জনগণের দাবি। আমরা জনগণের ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে লড়াই করে যাচ্ছি। আমরা সংসদে জনগণের প্রতিনিধিত্ব চাই, আর সেটি জনগণেরই দাবি। আমরা শুধু জনগণের দাবির প্রতি সমর্থন রেখে একটি প্রতিধিত্বশীল সংসদের জন্য আন্দোলন করছি। যেখানে সবাই জনগণের কাছে জবাব দিতে বাধ্য থাকবে। আর এজন্য খালেদা জিয়া কারাগারে। বিরোধী দলের বহু রাজনীতিক আজ কারাগারে। এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য জনগণই ব্যবস্থা নেবে, জনগণই জবাব দেবে।’
‘তাড়াহুড়ো করে ইভএম চাপিয়ে দেয়া উচিত হবে না’- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটাতো আমরা আগেই রিজেক্ট করে দিয়েছি। উনার কথার সাথে কি সম্পর্ক?’
‘নির্বাচন যথাসময়ে হবে, কে আসবে না আসবে তাতে কিছু করার নেই। নির্বাচন বাধা দেয়ার শক্তি কারো নেই’- শেখ হাসিনার এসব কথার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এ কথাগুলো বলেই তারা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করছে, রাষ্ট্রীয় যন্ত্রগুলো ব্যবহার করে একদলীয় শাসন কায়েম করছে। তাই এসবের জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণের দাবি জনগণই আদায় করে নেবে।’
এর আগে সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে ইয়ুথ ফোরান আয়োজিত বাংলাদেশ ইয়ুথ পার্লামেন্ট ২০১৮ অনুষ্ঠানেও বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘এ দেশ সেই দেশ যেখানে হুমায়ূন আহমেদের মত লেখকের বই আদালতের মাধ্যমে বাতিল করা হয়, শহিদুল আলমের মত লোককে কারাগরে থাকতে হয়। অথচ এই শহিদুল আলম সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। আজ তিনি কারাগারে। রিমান্ডে নিয়ে তার ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে।’
বিএনপি মমহাসচিব বলেন, ‘আজ যারা যুবক আছে তারা আগামী প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখাবেন। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আগামীর বাংলাদেশ হবে সত্যিকারের একটি সুখি-সমৃদ্ধ-গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে যুবসমাজকেই আজ গুরু দায়িত্ব নিতে হবে।’
‘ইয়ুথ ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নয়ন বাঙালি ভালো একটা দেশের স্বপ্ন দেখতে গিয়ে যুবকদের জাগ্রত করতে গিয়ে আজ দেশছাড়া। এটা শুধু নয়ন বাঙালির ক্ষেত্রে নয় সবার ক্ষেত্রে’- যোগ করেন মির্জা ফখরুল।