বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলছেন, ‘দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হলেও এখনও পর্যন্ত তাঁর সুচিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর দুদিন পার হয়ে গেলেও বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিষয়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি।’
মঙ্গলবার (১১ সেপ্টেম্বর) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন দ্রুত বেগম জিয়ার চিকিৎসা না দেয়া হলে তার বাম পা ও হাত অবশ হয়ে যেতে পারে। তার শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতি যাচ্ছে। তাঁর চিকিৎসা নিয়ে ছলচাতুরী চলছে এবং কালক্ষেপণ করা হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। আমি দলের পক্ষ থেকে বিলম্ব না করে বেগম খালেদা জিয়াকে বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালে সুচিকিৎসার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে গতকাল দেশব্যাপী মানববন্ধন পালনকালে পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড়, নির্বিচারে গ্রেফতার ও হামলা করার পরও সকল বাধা উপেক্ষা করে মানববন্ধন কর্মসূচি সফল করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। মানববন্ধনের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশি হামলা, গুলি ও নির্বিচারে গ্রেফতারের ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।’
রিজভী বলেন, ‘দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় থানায় গায়েবী মামলা দায়ের অব্যাহত রয়েছে। সরকারের নীলনকশার অংশ হিসেবে আগামী নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ও সক্রিয় নেতা-কর্মী এবং সমর্থকদের বিরুদ্ধেও ঢালাওভাবে মামলা দেয়া হচ্ছে। দেশব্যাপী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষকদের তালিকা করা হচ্ছে, কারা বিএনপি করে বা বিএনপি পরিবারের সঙ্গে যুক্ত। অর্থাৎ বেছে বেছে আওয়ামী সমর্থিত লোকদেরকে নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার কার্যক্রম চলছে।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল জাতিসংঘের পক্ষ থেকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহবান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এটা অপরিহার্য। সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে। মানহানির অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এসব সহিংসতার জন্য হেলমেট পরা যেসমস্ত আওয়ামী ক্যাডাররা দায়ী তাদেরকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। সুতরাং দেশ-বিদেশের কারো দৃষ্টিকেই আর ফাঁকি দিতে পারবে না এই ভোটারবিহীন অত্যাচারী সরকার।’
কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওর এখনও গ্রেফতার-নির্যাতন চলছে, তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না বলে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ১২ জন শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে গিয়ে গতকাল গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এই দৃষ্টান্ত সম্পূর্ণভাবে সন্ত্রাসীদের দ্বারাই সম্ভব। রাষ্ট্রের মালিকানা এখন বেআইনি সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে। যতদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবৈধ সরকারের গৃহজাত বাহিনী হয়ে থাকবে ততদিন আইনের শাসন অদৃশ্যই থেকে যাবে।’
রিজভী বলেন, ‘অবৈধ সরকারের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। জনগণের মধ্যে আওয়ামী নির্যাতনে যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে, যেকোনো সময় তার বিস্ফোরণ ঘটবেই। কারণ অবৈধ সরকারের প্রধানের ‘বর্বর অহমিকার’ প্রতি ঘৃণা মিশ্রিত রোষে দেশের জনতা আজ উত্তাল। দাঁড়ানোর কোনো শক্ত জমিন তাদের নেই। তাই গাছের পাতা নড়লেও সরকার এখন চমকে উঠছে।তবে এই অবৈধ সরকারের পতনের খবর আলোর গতিবেগের ন্যায় চরম ক্ষিপ্রগতিতে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এই ফ্যাসিস্ট রাত্রির অন্ধকার পোহাবেই।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবীর মুরাদ, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, মো. মুনির হোসেন, আব্দুল আউয়াল খান প্রমুখ।