বিরোধী দলের কর্মসূচিকে জনগণের সামনে নানাভাবে বিভ্রান্ত ও কালিমালিপ্ত করার জন্য সরকার ‘গোপন সহিংস পরিকল্পনার ছক’ আঁটছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র-যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, ‘যেভাবে তারা (সরকার) ২০১৪ ও ১৫ সালের আন্দোলনে নিজেরাই নাশকতা করে বিএনপির ওপর এর দায় চাপিয়েছে। যেটির সুষ্পষ্ট তথ্য প্রমাণন আমরা বারবার আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। আইন, বিচার, মামলা, মোকদ্দমা সবই শেখ হাসিনার করায়ত্বে। দেশের কোণে কোণে তল্লাশী, গ্রেফতার, গ্রেফতারের পর রিমান্ডের নামে পুলিশি নির্যাতন, বাড়িতে বাড়িতে পুলিশি হানা এবং মিথ্যা মামলার ছড়াছড়ি- সবকিছুই শেখ হাসিনার নির্দেশেই হচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘শোনা যাচ্ছে-সামনের দিনগুলোতে সরকার নিজ দলের ক্যাডারদের দিয়ে নাশকতা সৃষ্টি করে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর এর দায় চাপাবে। ককটেল বিষ্ফোরণসহ নানা ধরনের জ্বালাও-পোড়াওয়ের নাশকতা করা হবে পরিকল্পিতভাবে। আর বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে এই নাশকতার দায়ে জড়ানো হবে। এজন্য নাকি আওয়ামী ক্যাডারদের সহযোগিতা করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এইচ টি ইমাম বলেছেন-যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকতে হবে। যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকার ‘ডকট্রিন’ এর ওপর ভিত্তি করে চলা এইচ টি ইমামকে তার জীবনে অনেক সাফল্য এনে দিয়েছে। এই মতবাদের অর্থ হলো-রক্ত গঙ্গা বইয়ে দেশ অন্ধকারে তলিয়ে দিয়ে হলেও ক্ষমতায় থাকতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমর বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার এই বক্তব্য জনগণের মধ্যে হাসির খোরাক যুগিয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান অন্তরায় প্রধানমন্ত্রী নিজে, সুতরাং ইসিকে তাঁর সহযোগিতা দেয়ার অর্থ হলো-আগামী জাতীয় নির্বাচনে ফন্দি ফিকির করার জন্যই যে তিনি সহযোগিতা দেবেন সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার কমিশনকে সহযোগিতা করার অর্থ হলো ইসির আত্মসমর্পন নিশ্চিত করা। সেই ইসির নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের বাড়িতে বসে থাকতে হবে, ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার অধিকার থাকবে না। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের একমাত্র গ্যারান্টি শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকার পুলিশি চাপ দিয়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নৈঃশব্দের ভীতিকর পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিবেকবর্জিত অমানবিক নিষ্ঠুরতায় বিরোধীদলের বিরুদ্ধে আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও পাইকারী গ্রেফতার ও প্রবল বন্যার স্রোতের মতো মিথ্যা মামলার অভিঘাতে মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন দুঃস্বপ্নের মধ্যে কাটছে। আগামী নির্বাচন সরকারি দলের নাগালের মধ্যে রাখার জন্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপিকে দমন করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।’
রিজভী অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘সরকারের বানোয়াট ও হাস্যকর মামলার শিকার করা হয়েছেন দেশের বর্ষিয়ান নেতা ও গুরুতর অসুস্থ বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, রেজাক খান, নিতাই রায় চৌধুরী এর মতো প্রবীণ ও বরেণ্য রাজনীতিবিদ-আইনজীবীরা।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, আব্দুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।