আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্যে করে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ও কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ‘আপনারা এতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কেন? আপনারা এতো ভয়ে আছেন কেন? বেগম খালেদা জিয়া তো কারাগারে যাওয়ার আগে আপনাদেরকে মাফ করে দিয়ে গেছেন, তখন বোঝেন নাই কেন মাপ করেছে? আপনারা বাংলাদেশকে ৯৮ ভাগ পাকিস্তান বানিয়ে ফেলেছেন। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল গণতন্ত্রের জন্য, কিন্তু এখন গণতন্ত্রের ছিটেফোটাও নাই, মানুষ একটা ভোট দিতে পারে না।’
মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে বাংলাদেশ লেবার পার্টির উদ্যোগে ‘বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে’ সংহতি সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
কাদেরকে ‘সার্কাসের হিরো’ আখ্যায়িত করে সাম্প্রতিক সময়ে তার বিভিন্ন বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যিনি আমাদের বয়সে জ্যেষ্ঠ ছাত্রনেতা, তার বিরুদ্ধে কিছু বলাও ঠিক না, তবে তিনি যে অঙ্গভঙ্গিতে বক্তব্য দেন মনে হয় তিনি সার্কাসের হিরো।’
আওয়ামী লীগের বর্তমানে আর কোনো ভবিষ্যত নাই এমন দাবি করে দুদু বলেন, ‘আমরা যেভাবে আর যেদিক থেকেই আলোচনা করি না কেন প্রধানমন্ত্রী যে ভাষায় যে বডি ল্যাঙ্গুয়েজে মিডিয়ার সামনে হাজির হচ্ছেন তাতে আর যাই হোক দেশের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা আর বেশি দিন নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রীরা যে ভাষায় বক্তব্য দিচ্ছেন তাতে বুঝা গেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিশেষ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশে আর কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের জাতিসংঘের সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে দলটির এই ভাইস-চেয়ারম্যান বলেন, ‘জাতিসংঘের মহাসচিব আমাদের দলের মহাসচিবকে আমন্ত্রিত জানিয়ে ছিলেন। এতে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে জাতির কাছে মিথ্যা কথা উপস্থাপন করছেন যে- জাতিসংঘের মহাসচিব তাকে (ফখরুলকে) ডাকেননি।’
এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা যে যখনই বিদেশে যায় তাকে এয়ারপোর্টে আপনারা আটকিয়ে দেন তাহলে মির্জা ফখরুলকে কে আটকিয়ে দেন নাই কেন? তার বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারটাও তো আপনারা জানতেন।’
প্রধানমন্ত্রী ও আইজিপির উদ্দেশ্যে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আমাদেরকে যদি গ্রেফতার করতে চান তাহলে আমাদেরকে বলেন- আমরা নিজেরাই গিয়ে হাজির হব, এভাবে বাসা বাড়ি তছনছ করিয়েন না, ছেলেমেয়েদেরকে আর ভয় দেখাবেন না। আমরা মিছিল করে হাজির হব দেখবো কত লক্ষ কোটি মানুষকে-নেতাকর্মীদেরকে আপনারা কারাগারে রাখতে পারেন, জায়গা দিতে পারেন। এভাবে আতঙ্কগ্রস্ত করেন কেন? বাংলাদেশ যুদ্ধ হয়েছে তো গণতন্ত্রের জন্য, কথা বলার জন্য, লেখার জন্য।’
ডিজিটাল আইনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আপনারা (প্রধানমন্ত্রী) কি ডিজিটাল আইন করেছেন? পাকিস্তান আমলেও এত বড় নির্মম আইন হয় নাই।’
দুদু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর রাগ অভিমান যাই থাকুক না কেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী (খালেদা জিয়া) যাকে দেশের মানুষ, বিশ্বের মানুষ শ্রদ্ধা করে তাকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে রেখেছেন? কারাগারে যখন রেখেছেন তার পছন্দের ডাক্তার এবং তাকে সুচিকিৎসা দিচ্ছেন না কেন? এটা কি ধরনের নির্মমতা?’
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘শেখ হাসিনা আপনি যত চেষ্টাই করুন না কেন বিএনপি নির্বাচনে যাবে। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। আর আপনাদেরকে এমন হারানো হারাবে যে, আঞ্চলিক একটা কথা আছে যে- গো হারানো হারাবে। আর এসব ঘটবে আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে।’
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরানের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুবদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আলবার্ট পি কস্তা, জিনাফের সভাপতি লায়ন মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ।