সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের যৌথ উদ্যোগে যাত্রা শুরু করা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার যে পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছেন, তা অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
তিনি বলেন, এ প্রস্তাব মেনে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাদের পাঁচ দফা মেনে নিলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে। তাদের প্রস্তাব মানতে গেলে সরকারের সময়সীমা শেষ হবে, সংসদ শেষ হবে, সংবিধানও শেষ হবে। তখন একটি সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। এ সুযোগে একটি অস্বাভাবিক ভুতের সরকার বাংলাদেশের ওপর আছর করবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে যে ব্যবস্থা বাতিল হয়েছে, সেখানে বিচার বিভাগকে সরকার গঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত না করার সুষ্পষ্ট আদেশ রয়েছে। তাই এই অবস্থায় বিচার বিভাগকে বাদ দিয়ে নিরপেক্ষ ব্যক্তি খুঁজতে হবে। তাহলে এখানে পরিষ্কার, সবগুলো রাজনৈতিক দল একমত না হলে নির্দলীয় সরকার গঠন সম্ভব হবে না। তা কিভাবে সম্ভব হবে?
ইনু বলেন, নির্বাচনের যখন তিন মাস বাকি, কিছু ব্যক্তি নির্বাচনের প্রস্তুতি না নিয়ে, নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা না করে সংবিধান বহির্ভূতভাবে শেখ হাসিনা সরকারের পতদ্যাগ ও সংসদ বাতিলের দাবি করছে। এটা সাংবিধানিক একটি শূন্যতা তৈরি করবে। এই মুহূর্তে যদি একটি নির্বাচিত সরকার পতদ্যাগ করে এবং সংসদ বাতিল হয়ে যায়, তাহলে দেশ একটি সাংবিধানিক শূন্যতায় পড়ে যায়। তাহলে এই অন্তর্বর্তী সময়ে কে দেশ চালাবে? কোনো আলোচনা ছাড়াই আগে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বাতিল করতে হবে, নির্বাচন কমিশন সংস্কার করতে হবে, তারপর তারা আলোচনায় যাবেন— এটা হয় না।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের মনে আছে, বিএনপি এর আগে বলেছিল বাংলাদেশে যতগুলো দল আছে সব দলের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করতে হবে ঐক্যমত তৈরি না হওয়া পর্যন্ত। তাহলে এভাবে আলোচনা করে যতক্ষণ পর্যন্ত ঐক্যমতে পৌঁছানো না যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত তথাকথিত নির্দলীয় সরকারের ১০ জন ব্যক্তি মনোনয়ন দিতে পাচ্ছেন না। অন্যদিকে সাংবিধানিকভাবে নির্বাচনটা নির্দিষ্ট সময়ে করতে হবে। পাঁচ বছরের আগে করার বিধান আছে, কিন্তু এ সময় অতিক্রম করতে পারবেন না। এমনকি ৫ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। তাই তারা যে নির্দলীয় ব্যক্তিদের দিয়ে সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন, তা যৌক্তিক নয়। তারা বলেছে নির্দলীয় ব্যক্তি। আসলে কারা নির্দলীয় ব্যক্তি? সবাই তো কোনো না কোনো দলকে সমর্থন করে।’
যুক্তফ্রন্টের করা দাবির বিষয়ে ইনু বলেন, এই দাবিগুলো বিএনপি জামায়াতের দাবির ফটোকপি মাত্র। সেনা মোতায়েনের দাবি আমরা নাকচ করছি। আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব বা দাবি নেই। এটা শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক দাবি।
সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতাকৃতদের মুক্তির যে দাবি তারা করছে, তাও যৌক্তিক নয় বলে দাবি করেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলে’র নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। এখানে ‘সব রাজনৈতিক দল’ শব্দের আড়ালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মামলা, গ্রেফতার, দণ্ডিত একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা, জঙ্গি, সন্ত্রাস ও আগুন সন্ত্রাসের অভিযোগে আটক বা দণ্ডিতদের মুক্তি চাওয়ার নামান্তর।