সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তার প্রকাশিত বইয়ে সত্য কথা লেখাতে সরকারের অন্তর্জালা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বন্দুকের নলের মুখে তাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এটা কোনও বীরের কাজ নয়, এটি কাপুরুষের কাজ।’
শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা দেশে বসেই সৎ সাহসের সঙ্গে কাজ করছিলেন। কিন্তু তার কাছে তো বন্দুক নেই। রাষ্ট্রের বন্দুকধারীরা তার দিকে বন্দুক তাক করে দেশের বাহিরে যেতে বাধ্য করে। আওয়ামী লীগ সরকারের লোকেরা একজন নিরস্ত্র প্রধান বিচারপতিকে সন্ত্রাসীদের কায়দায় বন্দুকের নলের মুখে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়। এটা কোনও বীরের কাজ নয়, এটি কাপুরুষের কাজ।’
তিনি বলেন, ‘সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে বিচার বিভাগ একটি স্বাধীন সংস্থা। অথচ বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী-উপদেষ্টারা কথা বলার নামে এমন আচরণ করেছেন যেন তারা প্রধান বিচারপতিকে রিমান্ডে নিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব তাকে বঙ্গভবনে ডেকে নিয়ে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সামনে যেভাবে প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীরা ধমকাধমকি করেছেন তা সন্ত্রাসী আক্রমণেরই সমতূল্য।’
সাবেক হওয়ার অন্তর্জালা থেকেই সিনহা এটি লিখেছেন-সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘নির্যাতিত এস কে সিনহা সাহেব কি আওয়ামী লীগের মৌসুম দেখে বই প্রকাশ করবেন? আপনারা তো বন্দুকের নল ঠেকিয়ে এস কে সিনহাকে সন্ত্রাসী কায়দায় সাবেক হওয়ার আগেই সাবেক করেছেন। তাই সত্য কথা লিখাতে অন্তর্জালা হচ্ছে আপনাদের।’
তিনি বলেন, ‘ভোটারবিহীন এই সরকার যদি দেশের প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগে ও নির্বাসনে যেতে বাধ্য করতে পারে, তাহলে প্রশাসন, আইন আদালতকে বাধ্য করে বিচারকের কাছ থেকে মামলা ফেরত এনে সম্পূরক চার্জশিটে তারেক রহমানের নাম জড়ানো তো কঠিন কাজ নয়। গণবিরোধী অবৈধ সরকার যেকোনও কাজই করতে পারে। আজ জনগণের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ২১ আগস্টের বোমা হামলার আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে। ১/১১ এর সরকার বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম তদন্ত করে পেলো না। তদন্তকারী কর্মকর্তারা কোথাও সন্দেহবশতঃ তারেক রহমানসহ সরকারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখ করেনি, অথচ আওয়ামী লীগ ২০০৯ এ ক্ষমতায় এসে নজীরবিহীনভাবে পছন্দের তদন্তকারী কর্মকর্তা কাহার আকন্দকে অবসর থেকে ডেকে এনে ২১ আগস্ট বোমা হামলা মামলার পুনঃতদন্তের ভার দেয়। সে বিচারকদের কাছ থেকে মামলাটি ফেরত এনে পুনঃতদন্তের নামে তারেক রহমানকে মামলায় জড়িয়ে ষড়যন্ত্রের যাত্রা শুরু করে।’
রিজভী বলেন, ‘আদালত দিয়ে প্রতিশোধ গ্রহণের রমরমা রাজনৈতিক সফলতায় ক্ষমতাসীনরা উল্লসিত। এই অবৈধ সরকার আইন, বিচার সবকিছু কুক্ষিগত করে দেশকে ‘মগের মুল্লুক’ এ পরিণত করেছে। সরকারের ‘গাইডলাইন’ অনুযায়ী ২১ আগস্ট বোমা হামলা মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছে কি না, তা নিয়ে জনগণের মনে বড় ধরণের সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।’
সরকারের উন্নয়নের ফানুস ফেটে গেছে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকারের সব ধরনের বক্তব্য, বিবৃতি ও প্রচারকেই জনগণ বাকোয়াস বলে মনে করে। গণতন্ত্রকে বন্দী করে, বিরোধী দলের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত দমনের পথ বেছে নিয়ে, মামলা-হামলা-গ্রেফতার করে সরকার বিরোধী দলের নেতাদের ঘুম কেড়ে নিতে চাচ্ছে। তবে আমি আবারও প্রত্যয়দৃঢ় কন্ঠে বলতে চাই-সরকারের এই সমস্ত অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের সম্মিলিত কণ্ঠস্বরে সরকার ও সরকারপ্রধান কতটুকু শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন তা দেখার জন্য জনগণ অপেক্ষা করছে।’
খালেদা জিয়াকে ইচ্ছাকৃতভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘গতকাল কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার স্বজনরা দেখা করেছেন। দেশনেত্রী এখনও গুরুতর অসুস্থ। তার হাত, পায়ের ব্যথা আরও তীব্র হয়েছে। শারীরিক অসুস্থতাকে আরও অবনতির দিকে ঠেলে দিতেই তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। অসুস্থতা লাঘবের জন্য বেগম জিয়ার আস্থার হাসপাতাল ও চিকিৎসকদেরকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।’
নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিন আহমেদকে পুলিশ গতকাল গ্রেফতার করে। নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রনিকে নতুন করে আরও একটি অস্ত্র মামলায় ৩ দিনের রিমান্ড দেয়। আমি দলের পক্ষ থেকে শাহিন আহমেদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। মশিউর রহমান রনি’র রিমান্ড বাতিল ও বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন – বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবীব, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, মৌলভীবাজার বিএনপির সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট আবেদ রেজা প্রমুখ।