২১ আগস্ট বোমা হামলায় হীন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রতিহিংসার মনোভাব নিয়েই মাঠে নেমেছে সরকার এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, ‘তারেক জিয়াকে ফাঁসাতেই হবে-এই প্রতিহিংসা চরিতার্থের জন্যই ক্ষমতা হাতে পেয়েই বেছে আনা হয় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতা কাহার আকন্দকে। তাকে দিয়ে তারেক রহমানের নাম বোমা হামলায় জড়ানো হয়েছে। সরকারপ্রধান তার পুঞ্জিভূত ক্রুরতা, চাতুরী, কুটিলতা ও রক্তঝরানো কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সেটির প্রথম টার্গেট করেছেন জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে। এই মামলায় তারেক রহমানের নাম জড়ানো বর্তমান সরকারপ্রধানের প্রতিহিংসা পূরণের মাস্টারপ্ল্যান।’
বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘শত চেষ্টা করেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ২১ আগস্ট বোমা হামলা মামলায় জড়াতে পারেনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আন্দোলনের ফসলরা। তাদের সময় আদালত চার্জশিট একসেপ্ট করে ৬১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। কেউ জনাব তারেক রহমানের কথা বলেনি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার মনপসন্দ কাহার আকন্দ কেরামতি দেখাতে শুরু করে মামলাটি পূণ:তদন্তের নামে বিচারিক আদালত থেকে ফিরিয়ে এনে এক নজীরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। উদ্দেশ্য একটাই তারেক রহমানকে মামলায় জড়ানো।’
তিনি বলেন, ‘অত্যাচার, নিষ্ঠুর পীড়নের মাধ্যমে একমাত্র যার জবানবন্দীর উপর ভিত্তি করে তারেক রহমানকে অভিযুক্ত করা হয়, সেটি ছিল মুফতি হান্নানের। ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক এমন জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার পর থেকেই তা প্রত্যাহারের জন্য সুযোগ খুঁজছিলেন মুফতি হান্নান। কিন্তু তদন্তকালীন সময়ে তা প্রত্যাহার করলে তাকে পুনরায় রিমান্ডে নিয়ে ‘ক্রসফায়ারে’ মৃত্যুবরণ করতে হবে আশঙ্কায় সে প্রহর গুনতে থাকে চার্জশিট দাখিলের। কেননা, কোন মামলায় চার্জশিট প্রদানের পর সেই আসামিকে আর ঐ মামলায় রিমান্ডে নেয়ার সুযোগ পুলিশের থাকে না। অবশেষে সেই সুযোগ তিনি পেয়ে যান ২০১১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক আদালতে চার্জশিট দাখিলের পর। তারই বিবরণ এখন উল্লেখ করছি। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিনের আদালতে পূর্বের জোর করে নেয়া জবানবন্দী প্রত্যাহার করে নিয়ে লিখিতভাবে তিনি জানান।
মুফতি হান্নানকে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে রিজভী বলেন, ‘অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে তার কাছ থেকে জোরপূর্বক জবানবন্দি নেয়া হয়েছিল। পূর্ববর্তী জবানবন্দিতে উল্লিখিত সমস্ত তথ্য তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আকন্দের লেখা। নির্যাতনের মাধ্যমে তার নিকট থেকে জোরপূর্বক এতে স্বাক্ষর নেয়া হয়। ম্যাজিস্ট্রেটের সামনেই অন্য এক ব্যক্তি তার হাত ধরে তাতে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। হান্নান বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতা এবং নিজের জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিতে তার ওপর অমানুষিক বর্বর নির্যাতন চালানো হয়েছে। উলঙ্গ করে বৈদ্যূতিক শক; নাকে, কানে, জিহবাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বৈদ্যুতিক চার্জ, বেধড়ক লাঠিপেটা ছাড়াও তার দু’হাতের ৯টি আঙ্গুলের নখ তুলে ফেলা হয়। তার আগে প্রত্যেকটি আঙ্গুলের মাথায় আলপিন ঢোকানো এবং আঙ্গুলের অগ্রভাগ গ্যাস লাইট দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। পায়ের আঙ্গুলগুলো তারা পাথর দিয়ে থেঁতলে দেয়।’
‘সম্মুখভাগে হাজার ভোল্টের বাল্ব জ্বালিয়ে রেখে মুখসহ বিভিন্ন জায়গা ঝলসে দেয়া হয়। পা ওপরের দিকে দিয়ে মাথা নিচের দিকে রেখে ঝুলিয়ে রাখা হতো জিজ্ঞাসাবাদের সময়। এছাড়া ভেজা গামছা নাকে ও মুখে রেখে মরিচ মিশ্রিত গরম ও ঠান্ডা পানি ঢালা হতো। অনেক সময় আদিম বর্বর যুগের মতো নির্যাতন করা হতো। বর্বরতার চূড়ান্ত পর্যায়ে কাটিং প্লায়ার্স দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গার চামড়াও তুলে ফেলা হতো। দাঁত টেনে তুলে ট্রে’র উপর রাখা হতো। বৈদ্যুতিক ঘুরন্ত চেয়ারে তাকে ঘোরানো হতো। তিনি আরও বলেন-আমি (হান্নান) উপরোক্ত গ্রেনেড হামলা মামলার ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানিনা। কোনো প্রকারে জড়িতও নই এবং কারা এর সাথে জড়িত তাও আমি জানি না। আমি কখনোই এই মামলার আসামি ছিলাম না এবং আমাকে উক্ত মামলার আসামি হিসাবেও গ্রেফতার করা হয় নাই।” এভাবে মুফতি হান্নানকে ভয়-ভীতি, নৃশংস শারীরিক নির্যাতন, লোভ-লালসাসহ ২০৩ দিন রিমান্ডে নিয়ে উপরোল্লিখিত নির্যাতন করা হয়। সরকারের নির্দেশে নির্যাতনের সর্বোচ্চ মাত্রা প্রয়োগ করা হয় মুফতি হান্নানের ওপর। ফলে সে ২১ আগস্ট বোমা হামলায় তারেক রহমানের নাম বলেন।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বোমা হামলার মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে বিরোধী দল ও মতকে নির্মূলের চূড়ান্ত সীমায় উপনীত হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।