সরকারের উন্নয়নবার্তা গণমানুষের কাছে পৌছাতে কাজ করছি: আমিনুল ইসলাম
আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির উপ প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার সন্তান আমিনুল ইসলাম । ছাত্র জীবন থেকে জেল-জুলুম, মামলা, হামলা ও বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয়ে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন নিয়মিত। ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি সহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। অতঃপর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটির উপ প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
সমসাময়িক রাজনীতি, লোহাগড়া-সাতকানিয়া নিয়ে ভাবনা ও সাম্প্রতিক নানা ইস্যু নিয়ে তিনি কথা বলেছেন পলিটিক্সনিউজের নির্বাহী সম্পাদক সালেহ মোহাম্মদ রশীদ অলকের সাথে।
পলিটিক্সনিউজ: রাজনীতিতে কিভাবে আসলেন? রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে জানতে চাই..
আমিনুল ইসলাম: আমার জন্ম আওয়ামী পরিবারে । বাবা চিটাগাং দেওয়ান বাজার আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। রাজনীতিতে হাতেখড়ি বাবার হাত ধরে। ছোটবেলা থেকে চিটাগাং শহরে বড় হয়েছি। ১৯৭৯ সালে যখন নির্বাচন হয়েছিল তখন আমার বয়স ১৩ বছর। তৎকালীন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন এম এ মান্নান। তখন আমার বাবা তার জন্য কাজ করেছিলেন, সাথে আমিও ছিলাম। স্কুলে ফাইভ এ উঠার পরে নানার নির্দেশে আমি মাদ্রাসায় গেলাম । বিভিন্ন মাদ্রাসায় আমি ছাত্রলীগের কমিটি করেছি। মহিউদ্দিন ভাই আমাদেরকে নিজেই উৎসাহিত করেছেন। তিনি তখন চিটাগাং মহানগর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ছিলেন। চট্টগ্রামের বর্তমান মেয়র নাসির ভাই আমাদের সাথে ছিলেন ।
১৯৮২ তে মার্শাল ল ছিল, বাংলাদেশের ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন জালাল ভাই। তখন ঘরোয়া রাজনীতির অনুমতি ছিল না। কিন্তু জালাল ভাই ছাত্রলীগের কমিটি করেছিলেন এবং সেই কমিটিতে আমি সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলাম। আমার বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। ১৯৮৪ সালে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সহ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই।
আমার রাজনৈতিক জীবনে আমি আমার পরিবার থেকে কোন বাধা-বিপত্তি পাইনি। পরিবার থেকে রাজনীতির জন্য সবসময় উৎসাহ পেয়েছি এবং বাবার একটাই আদেশ বুকে ধারণ করে রেখেছি। সেটা হচ্ছে কখনো মিথ্যা বলবা না, মিথ্যাকে প্রশ্রয় দিবা না। মিথ্যার যাতে কোন ঠাঁই না হয় এই নিয়েই আমার রাজনৈতিক জীবন, এই নিয়ে রাজনীতি করি ।
তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই এবং ১৯৮৯ সালে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হই। ১৯৯২ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক, ১৯৯৪ সালে সহ সভাপতি এবং ১৯৯৮ সালে সিনিয়র সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করি । ২০০২ সালে আমি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সম্পাদক, ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, ২০১২ সালে সদস্য এবং ২০১৬ তে এসে উপ প্রচার সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হই ।
পলিটিক্সনিউজ: কিছুদিন পরেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গত প্রায় সাড়ে নয় বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। অনেকেই মনে করেন, একটি দল অনেকদিন ক্ষমতায় থাকলে জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে। এই বিষয়টাকে কিভাবে দেখেন?
আমিনুল ইসলাম: মানুষ চায় জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন। ২০০৮ সালে আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ব, আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করব, আমরা তার আগেই সেটা করতে পেরেছি। আজ শিক্ষিতের হার ৭৩ শতাংশ যেখানে আমরা ক্ষমতায় আসার আগে শিক্ষিতের হার ছিল ৩৭ শতাংশ। আমরা যখন ক্ষমতা নেই তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৩২০০ মেগাওয়াট যেটা এখন প্রায় বিশ হাজার মেগাওয়াট, উৎপাদন হচ্ছে ১২০০০ মেগাওয়াট। একসময় আমাদের দেশে শত শত প্রসূতি মা চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করতেন। আমরা মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে পেরেছি। আমাদের শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার অনেক কমে গেছে। আজকে যেসব ডাক্তাররা বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি চাকরিতে আসছে একসময় তারা হয়তো নামকাওয়াস্তে চাকরি করতেন, আজকে সরকারের বাধ্যবাধকতার কারণে গ্রামের মানুষকে চিকিৎসা দিচ্ছেন তারা।
গ্রামের অর্থনৈতিক কাঠামো সহ সার্বিক অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য যে অভূতপূর্ব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এ বিষয়গুলো আমরা যদি মানুষের কাছে ঠিকমত পৌঁছাতে পারি তাহলে মানুষ আওয়ামী লীগকে অবশ্যই ভোট দেবে।
সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপগুলোর উপকার ১৬ কোটি মানুষ পাচ্ছে, যারা অসহায় পীড়িত তারাও পাচ্ছে। মানুষ এগুলো চিন্তা করলে আওয়ামী লীগ তৃতীয় বার ক্ষমতায় না আসার পেছনে কোন কারণ দেখছি না। সামগ্রিকভাবে জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের ফলে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে ইনশাল্লাহ।
পলিটিক্সনিউজ: সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ছাত্র আন্দোলনে অনেকগুলো গুজব ছিল। ভবিষ্যতে এরকম অনেক গুজব ছড়াতে পারে। উপ প্রচার সম্পাদক হিসেবে এসব গুজব প্রতিরোধে অনলাইনে আওয়ামী লীগের প্রচার কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলে মনে করেন কিনা?
আমিনুল ইসলাম: একটা হচ্ছে প্রচার আরেকটি অপপ্রচার। প্রচার এবং অপপ্রচারের মধ্যে পার্থক্য আছে। মিথ্যা একটা ধোঁয়াশা তৈরি করে অসম্ভব সুন্দর করে গুছিয়ে যেটা মানুষের কাছে পৌঁছানো হয় সেটাই অপপ্রচার। আমার স্বীকার করতে দ্বিধা নেই জন্ম থেকেই আওয়ামী লীগ অপপ্রচারের শিকার।
আমাদের কাজ হচ্ছে প্রচার করা। আমরা প্রচার করবো আমাদের দল জনগণকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তা আমরা কতটুকু পরিপূর্ণ করতে পেরেছি, আমরা যদি আবার ক্ষমতায় আসি তাহলে আমরা কতটুকু কাজ করবো, কাজগুলো বাস্তবায়নযোগ্য কিনা এবং সেগুলো বাস্তবায়নে আমাদের পদক্ষেপ কি কি।
মাঝে মাঝে অপপ্রচারের বিরুদ্ধেও আমাদের কাজ করতে হয়। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটি গদবাধা নিয়মের বাইরেও অনলাইনে বিভিন্ন মাধ্যমে সত্য তুলে ধরার চেষ্টা করছে। ডিজিটাল যে প্রচার মাধ্যম গুলো আছে সেগুলো আমরা বাদ দিচ্ছি না, তবে সেখানে প্রচার কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করার জন্য আমরা কাজ করছি। ইতিমধ্যেই প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি বিভাগ ভিত্তিক অনলাইন সেল গঠন হয়েছে।
বাস্তবতা হচ্ছে একটি মিথ্যা কথা ছেড়ে দিলে মানুষ যত সহজে গ্রহণ করে তার বিপরীতে যুক্তিটা মানুষ গ্রহণ করতে চায় না। বিএনপি জামাত-শিবির এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশে অরাজকতা তৈরী করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করে কারণ তাদের কোন শক্তি নেই। এই আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে অন্ধকার জগতের বাসিন্দারা যারা নির্বাচনে আসতে ভয় পায়, তার এসব অপপ্রচার চালিয়েছে। আমরা এই অপপ্রচারের হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
পলিটিক্সনিউজ: চট্টগ্রাম-১৫ আসন নিয়ে আপনার ভাবনা কি? মনোনয়ন নিয়ে কতটা আশাবাদী?
আমিনুল ইসলাম: বাংলাদেশের যে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয় নির্বাচনের আগে সেও বলে যে আমাকে মনোনয়ন দেন, আমি বিজয়ী হব। আমি প্রতিশ্রুতির রাজনীতিতে বিশ্বাস করিনা। আমার কাছে দলের সভানেত্রী শেষ কথা, দলের প্রতি আনুগত্য শেষ কথা। আমি অতীতে মানুষের জন্য কি করেছি, কতটুকু মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি, সেটা এলাকার সাধারণ জনগণ সবচেয়ে ভাল বলতে পারবেন। যদি দল আমাকে যোগ্য প্রার্থী মনে করে মনোনয়ন দেয়, তবে আমি গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে ব্যতিক্রমী কিছু করার চেষ্টা করব। রাস্তাঘাটের রুটিন উন্নয়ন কাজের পাশাপাশি মানুষ অনেক বেশি চায় একটি শান্তিপূর্ণ জীবন। আমার একটা পরিকল্পনা আছে।
আমি অন্য অনেকের মত শুধু প্রতিশ্রুতি দিতে চাই না। আমি কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চাই।
এদেশের মানুষ অনেক সহজ সরল। তারা নেতার কাছ থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য চায় না, তারা দেখে নেতা তাদের কে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করছে কিনা, দুঃসময়ে তাদের খোঁজ খবর নিয়েছে কিনা । আপনি যদি তা করতে না পারেন তাহলে রাজনীতি করার কি দরকার। আমি ছাত্রজীবন থেকে তা করার চেষ্টা করেছি।
আমি যার হাতে গড়া রাজনৈতিক কর্মী প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, তিনি আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যেখানে যাও মানুষকে সম্মান করবা, মানুষের পাশে থাকবা। সেটা আমি করেছি বলেই আমার মাঝে বিশ্বাস জন্মেছে যে লোহাগড়া, সাতকানিয়ার মানুষের আমার প্রতি একটি পক্ষপাত আছে। সেই পক্ষপাতই আমাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ ।