বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তির পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতই আছে। অবস্থার কোনও পরিবর্তন না হওয়ায় আজ থেকে বেগম জিয়াকে ফিজিও থেরাপি দেয়া হচ্ছে। সকালে খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধানসহ তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি টিম হাসপাতালে নিয়মিত রাউন্ডও দিয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল হারুন।
তিনি বলেন, ‘আজ সকালে খালেদা জিয়ার অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছি। উনি (খালেদা জিয়ার) যেহেতু হাসপাতালে ভর্তি আছেন, তাই তাঁর চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ড. এম এ জলিল ও ড. সৈয়দ আতিকুল হক তার ব্যাপারে সাবজেল (খালেদা জিয়া হাসপাতালের যে কেবিনে আছেন, ওই এলাকাটাকে সাবজেল ঘোষণা করা হয়েছে) থেকে সব আপডেট তথ্য সংগ্রহ করেছেন। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে। ৬ অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তির পর এখনও পর্যন্ত তাঁর শারীরিক অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি।’
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আগামীকাল বুধবার বিকেল ৪টায় খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চারজন সদস্য তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন এবং চিকিৎসার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন। তার কী কী শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে সে ব্যাপারেও খোঁজ নেয়া হয়েছে। আজ থেকে ফিজিওথেরাপি দেয়া হতে পারে।’
খালেদা জিয়া সুস্থ হবেন কি-না কিংবা কবে নাগাদ পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেন জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বলেন, ‘যদি উনাকে উন্নত চিকিৎসা দেয়া যায়, তাহলে উনি অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠবেন। বিএসএমএমইউতেই খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।’
আগে থেকেই খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস ছিল কিনা সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘গত ২০ বছর ধরে তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. মো. নজরুল করিম এবং উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম।
এর আগে গতকাল সোমবার বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিএসএমএমইউ-এর মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল জলিল চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। তিনি ব্যথাজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন। খালেদা জিয়া রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (গিটে গিটে ব্যাথা বা বাত) রোগে আক্রান্ত। ওনার হাত বাঁকা হয়ে গেছে, হাত তুলতে পারছেন না। এছাড়া ঘাড়ে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, বাম উরুর জয়েন্টে ব্যথা ও বাম হাঁটু ফুলে গেছে।’
এর আগে উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সুচিকিৎসার জন্য গত ৬ অক্টোবর বিকেলে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একটি প্রাইভেটকারে করে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে হাসপাতালের ভিআইপি ব্লকের ৬১২ নম্বর কেবিনে আছেন তিনি। সেখানে থেকেই পছন্দের চিকিৎসদের দিয়ে চিকিৎসা করাবেন বেগম জিয়া।
উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করে গত ৮ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। রায় ঘোষণার পর ওই দিনই তাঁকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর থেকে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী সেখানেই কারাবন্দি ছিলেন।