বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন,‘বরাবরই সন্ত্রাসের উর্বর জমি হচ্ছে আওয়ামী লীগ। তাদের বক্তৃতা, আচরণ, দেশ শাসন সর্বত্রই রক্তাক্ত সন্ত্রাসের চিহ্ন দৃশ্যমান। আওয়ামী সন্ত্রাসের ধারা জেনেটিক্যাল। তারা শুধু গুম, খুন আর ক্রসফায়ারের ব্যাপক বিস্তার ঘটাতে আইন আদালতকে গড়ে তুলেছে রাষ্ট্রীয় টেররিজমের হাতিয়ার হিসেবে’।
শনিবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী অভিযোগ করে বলেন,‘২১শে আগস্ট বোমা হামলা মামলায় বিরোধী দলের প্রতি সরকারের আচরণ নিয়ে উচিৎ-অনুচিতের নানা বিষয় রায়ের পর্যবেক্ষণে তুলে ধরা হয়েছে, সেখানে কিন্তু বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যার হুমকি দেয়া উচিৎ কিনা সেটা উল্লেখ করা হয়নি। ‘তোমরা চুড়ি পড়ে থাকো, আমাদের ১টা মারলে ওদের ১০ জনকে মারতে হবে’-বিরোধী দলের প্রতি এই বিপজ্জনক হুমকি কি একজন প্রধানমন্ত্রী দিতে পারেন ? ওবায়দুল কাদের সাহেবকেও বলতে চাই-বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য কি ‘বিশ্বব শান্তি সম্মেলনের বাণী’ ?
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন,‘সরকারের হুকুমে প্রতিদিনই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বিনা বিচারে মানুষ হত্যার হিড়িক চলছে-এই হিড়িক কি উন্নয়নের নমূণা নাকি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ? এগুলো রায়ের পর্যবেক্ষণে না থাকলেও এর দায় তো বর্তমান সরকারের কাউকে নিতেই হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর দর্পী মানসিকতা কেন রায়ের পর্যবেক্ষণে আসেনি ?
সাগর-রুনীসহ ৩৩ জন সাংবাদিককে হত্যার দায় কার ? এটা কেন রায়ের পর্যবেক্ষণে আসেনি ? বোমা হামলা শুরুই হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে। যশোরে উদীচি’র অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, রমনা বটমূলে বোমা হামলা, কমিউনিষ্ট পার্টির জনসভায় পল্টনে বোমা হামলাসহ অসংখ্য বোমা হামলা হয়েছে আওয়ামী লীগের শাসনামলে। তাহলে এগুলোর রায়ের পর্যবেক্ষণে এলো না কেন ? এগুলোর জন্য আওয়ামী লীগ কেন দায়ী নয় ? তনু, মিতু, রিশা-দিশাসহ অসংখ্য নারী পাশবিক নির্যাতন ও হত্যার শিকার হচ্ছে। শুধু টাঙ্গাইল জেলাতেই কলেজ ছাত্রী রুপাসহ চলন্ত বাসে তিন জন নারীকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এগুলি দু:শাসনেরই ফলশ্রুতি। নারী নির্যাতনের এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি কেন রায়ের পর্যবেক্ষণে আসেনি। রায়ের পর্যবেক্ষণে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের কথা নাই কেন ?’
বিএনপির এই নেতা বলেন,‘বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রুপালী ও পূবালী ব্যাংক, ফার্মার্স ব্যাংক, বেসিক ব্যাংকসহ শেয়ার মার্কেট হরিলুটের কথা রায়ের পর্যবেক্ষণে নেই কেন ? এগুলো নিয়ে জনগণের মনে নানা প্রশ্ন দানা বাঁধছে।নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের মামলার প্রধান আসামি আওয়ামী মন্ত্রীর জামাই, উপজেলা চেয়ারম্যান নুর হোসেন বাবু’র হত্যাকারিরা ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মী। প্রকাশ্য দিবালোকে কিশোর শ্রমিক বিশ্বজিতের হত্যাকারিরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সশস্ত্র ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। ঔদ্ধ্যতের চরম সীমা অতিক্রম করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। গণমাধ্যমে তথ্যানুযায়ী ছাত্রলীগের হাতে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির ভাগাভাগি নিয়ে খুন হয়েছে ২৭ জন’।
এসয় তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরেরর উদ্দেশ্যে বলেন,‘ওবায়দুল কাদের সাহেবের উদ্দেশ্যে বলতে চাই-আপনাদের লোকদের কর্তৃক এত খুন-জখমের পরেও কি আওয়ামী লীগের রেজিস্ট্রেশন থাকা উচিৎ ? আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বৈরাচারের টিকে থাকার মূল ভিত্তিই হচ্ছে সহিংস সন্ত্রাস’।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা বিএনপি দলটিকেই নিশ্চিহ্ন করার খেলায় মেতে উঠেছেন। তা না হলে তাঁর গদি রক্ষা বিপজ্জনক হতে পারে বলে তিনি আশংকা করছেন। শেখ হাসিনার মনে ন্যুনতম সাহস নেই, আছে শুধু ভয়। ক্ষমতা হারানোর ভয়। বিলকুল সব হারিয়ে যাওয়ার ভ ‘।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম, সানাউল্লাহ মিয়া, কবি আব্দুল হাই শিকদার, মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।