২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুরু থেকেই সামঞ্জস্যহীন ও রহস্যাবৃত বলে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার(১৬ অক্টোবর) নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
রিজভী বলেন, ‘২১শে আগস্টে মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ ৩ দিন ধরে প্রচার-প্রচারণা চালালো। আর সমাবেশের দিন হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদল করে কেন দলীয় অফিসের সামনে গেল ? এতে কারো বুঝতে বাকি থাকে না যে, এর মধ্যে কোন দুরভিসন্ধি কাজ করেছে। পুলিশ যখন দেখলো তাদের না জানিয়ে সমাবেশ করছে তখন মতিঝিল থানার ওসি নিয়মমাফিক একটি জিডি করে। অল্প সময় হাতে পেলেও অনুযায়ী পুলিশ সেখানে যায়।মামলার বিচারিক কার্যক্রমে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়নি। অথচ ফরমায়েশি রায় চাপিয়ে দেয়া হলো।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আইন, বিচার ও প্রশাসনকে প্রতিহিংসা পূরণের হাতিয়ার করে আওয়ামী লীগের ক্রমান্বয়ে দানবীয় আত্মপ্রকাশ জাতির জীবনপ্রবাহ রুদ্ধ করার অভিঘাত। সত্য ঘটনাকে মিথ্যা হিসেবে অভিহিত করা আর মিথ্যাকে সত্য বলা আওয়ামী লীগের আদর্শিক চেতনা। জনগণকে তারা এতটাই অপাংক্তেয় মনে করে যে, তাদের ধোঁকাবাজি জনগণ টের পাবে না।’
রিজভী বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় বাতিল করতে হবে এবং আওয়ামী লীগ নেতা ও নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী কাহার আকন্দকে বাদ দিয়ে নিরপেক্ষভাবে পুনরায় তদন্ত করে পুনরায় বিচার কার্যক্রম শুরু করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি সরকারের সময় বাংলাদেশ পুলিশি রাষ্ট্র ছিল না। অবারিত ছিল গণতন্ত্র। ফলে রাজধানীতে জনসভার জন্য সিটি কর্পোরেশনের নিকট থেকে অনুমতি গ্রহণের পর নিয়ম ছিল মাইক ব্যবহারের অনুমতি নিতে হতো পুলিশের থেকে।’
২১ শে আগস্টের তদন্ত নিয়ে রিজভী বলেন, ‘মূল চার্জশিট দাখিলকারী কর্মকর্তা এএসপি ফজলুল কবিরের কাছে গত ২০০৭ সালের ২২ নভেম্বর জবানবন্দি প্রদানকালে সমাবেশে পুলিশের অনুমতি না দেয়ার কথা বলেন। অথচ সমাবেশে পুলিশের অনুমতি প্রদান না করার বিষয়টি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৪ সালের ২০ আগস্ট হতে ২০০৭ সালের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় সোয়া তিন বছর সময়কালে কখনোই কোন সভা-সমিতি-সাক্ষাৎকার-আলোচনা-বিজ্ঞপ্তি-প্রচারণা ইত্যাদি কোথাও তিনি উল্লেখ করেননি। অথচ সমাবেশের আগের দিন বিকেলে তিনি মহানগরের বেরাইদ স্কুল মাঠে এক জনসভায় দীর্ঘ বক্তৃতা করেন। সেই বক্তৃতায়ও তিনি অনুমতি না প্রদানের বিষয়ে কোন কথা বলেননি। একটিবারের জন্যও বলেননি যে, পুলিশি অনুমতি না পাওয়ার কারণে তাঁকে মুক্তাঙ্গনে সভা না করে এখানে করতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মর্মান্তিক ঘটনার পরবর্তী সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকার দেন। সেই সাক্ষাৎকারেও তিনি এমন অনুমতি না প্রদানের বিষয়ে কোন শব্দই উচ্চারণ করেননি।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘প্রশ্নাতীতভাবে সত্য যে, পুলিশ ১৯ আগস্ট ২০০৪ তারিখেই তাদের অনুমতি দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে প্রকৃত ঘটনা মিলছে না।এই অবস্থায় ২০০৪ সালের ১৭ আগস্ট আওয়ামী লীগ মুক্তাঙ্গনে সমাবেশের জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে অনুমতি গ্রহণের পর পুলিশের নিকট মাইক ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে লিখিত আবেদন করে। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ মুক্তাঙ্গনে আওয়ামী লীগের সমাবেশের লিখিত অনুমতি দেয় ২০০৪ সালের ১৯ আগস্ট। তবে রহস্যজনক ও গভীর সন্দেহের বিষয় হলো-মুক্তাঙ্গনে পুলিশের অনুমতি নিয়ে কেন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করলো ? ’
এসময় তিনি সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, হামলা ও মামলার তথ্য তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ,সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।