আন্দোলনকে ব্যাহত করতেই মইনুলকে গ্রেফতার, মুক্তির দাবি

বেগম জিয়ার সাজা বাড়ানোর আবেদন বেআইনি বললেন রিজভী

গণতন্ত্র পুণরুদ্ধারের আন্দোলনকে ব্যাহত করতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে দাবি করে অবিলম্ব তাঁর মুক্তির দাবি করেছে বিএনপি।

দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘গতকাল মানহানির মামলায় দেশের প্রতিথযশা আইনজীবী ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে সরকার। মানহানি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা নজিরবিহীন ঘটনা। গণতন্ত্র পুণরুদ্ধারের আন্দোলনকে ব্যাহত করতেই এ গ্রেফতার।’

মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১ টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ব্যারিস্টার মইনুল জামিনে ছিলেন, তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একজন ব্যক্তিও। শুধুমাত্র অপশাসনের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলাটাকেই অপরাধ হিসেবে গন্য করছে সরকার। রাতে কোর্ট বসিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশে যে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা সকলের কাছে পরিষ্কার। কারণ গতকাল প্রধানমন্ত্রী যখন সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন- মইনুল হোসেন একটি মামলায় জামিন পেয়েছেন, তার বিরুদ্ধে আরও মামলা করেন বাকিটা আমরা দেখছি। এ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলো, তাকে গ্রেফতার করা হলো।’

এ প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘মানহানি মামলায় তো প্রথমেই গ্রেফতারি পরোয়ানার নজির নেই। প্রথমে সমন জারি করে আসামি পক্ষের বক্তব্য নেয়া হয়। আসামিপক্ষ উপস্থিত না হলে পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের গ্রেফতার সম্পূর্ণ বেআইনি। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অবিলম্বে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মুক্তি দাবি করছি।’

‘দেশে সময়মতো নির্বাচন হবে। বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ বহাল থাকবে। যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলার ক্ষমতা আওয়ামী লীগ ও সরকারের আছে’- সংবাদ সম্মেলনে গতকাল দেয়া প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ইতিহাসই হলো ভোট ডাকাতির নির্বাচন, ভোটারবিহীন নির্বাচন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে পরিষ্কার তিনি সুষ্ঠু ও সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চান না, গায়ের জোরে নির্বাচন করতে চান। জোর করে ক্ষমতাকে আকঁড়ে ধরে রাখতে চান। এ সরকারের আমলে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, হবেও না।’

এসময় তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমি পরিষ্কার বলে দিতে চাই আরেকটি একতরফা নির্বাচন হবে না, এদেশের মানুষ হতে দিবে না। সিটি নির্বাচনের স্টাইলে নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে চুড়ান্ত ক্র্যাক ডাউন শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ যেন বাতি নিভে যাওয়ার আগে হঠাৎ জ্বলে উঠা। গুপ্তহত্যা, বিচারবর্হিভূত হত্যা, গুম, খুন, বিরোধী মত দলন-নিপীড়নের সঙ্গে দেশজুড়ে চলা গণগ্রেফতারের গতি এখন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্ধুরা আমরা গতকালই বলেছিলাম দেশজুড়ে ফের গুপ্তহত্যা শুরু করেছে সরকার এবং নারায়ণগঞ্জে ৪ জনকে হত্যার পর গুলিবিদ্ধ লাশ ফেলে রাখা হয় সড়কের পাশে। আজকে গণমাধ্যমের শিরোনাম হলো- রাতে ফাঁড়িতে, সকালে সড়কে লাশ। ৪ জনকেই ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছিল বলে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। ফাঁড়িতে গিয়ে তাদের স্বজনরা তাদের খাবারও দিয়ে এসেছিল। সকালে গুলিবিদ্ধ, থেঁতলানো লাশ মিলল সড়কের পাশে। এটা কতটা মর্মান্তিক ও বিভৎস ঘটনা?’

সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা শিরিন সুলতানা, মো. মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।