ফরিদপুর-১ আসনে নৌকার বিজয় ঠেকাতে চার বির্তকিত নেতার ঐক্যজোট

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুর রহমান ওমরাহ পালনে রয়েছেন সৌদি আরব। ঠিক তখনই বোয়ালমারী উপজেলা মিলনায়তনে উপজেলা আওয়ামীলীগের একাংশের বর্ধিত সভায় বসেছিলেন ষড়যন্ত্রকারীদের মিলনমেলা। দীর্ঘদিন ধরে আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্রের গন্ধ  পাওয়া গেছে তারই বহি:প্রকাশ ঘটেছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা আ’লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।

শনিবার (২০.১০.১৮) উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম এম মোশাররফ হোসেন মুশা মিয়ার সভাপতিত্বে একাংশের বিশেষ বর্ধিত সভায় আব্দুর রহমান হঠাও শপথে জড়ো হন ষড়যন্ত্রকারী কাজী সিরাজ-লিয়াকত শিকদার- আরিফুর রহমান দোলন। উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সদস্য মো. ওবায়দুর রহমান মৃধা বলেন,  (বোয়ালমারী-মধুখালী-আলফাডাঙ্গা) ফরিদপুর-১ নির্বাচনী এলাকার নির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. আব্দুর রহমান। এখনও সংসদ বহাল, রবিবার (২১.১০.১৮) বিকালে এ সংসদের শেষ অধিবেশন শুরু হয়েছে। নির্বাচনের তফশীল এখনও ঘোষিত হয়নি। এমন একটি মুহুর্তে প্রধানমন্ত্রীকে জানান দিতে মুশা মিয়ার নেতৃত্বে উপজেলা আ’লীগের একাংশ আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের দ্বার উন্মোচন করতে একত্রে মিলিত হয়েছিলেন। তাদের ওইসব ষড়যন্ত্র কোন কাজে আসবে না। পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক মো. আহাদুল করিম বলেন, দল বদলকারী ষড়যন্ত্রকারীদের ওই পদক্ষেপ সরকারের উন্নয়ন এবং আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকেই আঘাত করেছে। মুশা মিয়ার ডাকা আ’লীগের এক অংশের বর্ধিত সভায় যারা যোগ দিয়েছিলেন তাদের অনেকেই বোয়ালমারী উপজেলার বাইরে থেকে আসা। যা দলের গঠনতন্ত্র পরিপন্থি। পক্ষান্তরে উপজেলা আ’লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবী ধারী নেতাকর্মীদের বর্ধিত সভার দাওয়াত পর্যন্ত দেয়া হয়নি।

সেখানে আ’লীগের বর্ধিত সভায় সহযোগি সংগঠনের কিছু নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন কিভাবে? যে কারণে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, নির্বাচনের আগমূহুর্তে  কেন এই ষড়যন্ত্রকারীদের ঐক্য? উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. দাঊদুজ্জামান ঐক্য সম্পর্কে বলেন, তাদের এই অভিযোগ শুধু আব্দুর রহমানকেই হেয় করে নাই, তারা খুব সুক্ষ্মভাবে দলীয় প্রধানকে নি:ষ্পেষিত করেছেন। নির্বাচনী এলাকার মানুষই বলে থাকেন, স্বাধীনতার ৪১ বছরে যে উন্নয়ন হয়নি আব্দুর রহমান এমপি হয়ে ১০  বছরে তার দ্বিগুন উন্নয়ন করেছেন। গ্রামের মানুষ বলাবলি করছে আব্দুর রহমান আরেকবার এমপি হলে, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলে এলাকায় আর রাস্তা ঘাট পাকা  করার জন্য খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই ১০ বছরে আব্দুর রহমান যে উন্নয়ন দিয়েছেন তা অভাবনীয়।

প্রতিপক্ষরাও এমনটি বলতে পারবে না যে, আব্দুর রহমান উন্নয়ন করেন নাই, যা ষড়যন্ত্রকারীরা বলেছেন। এদের সস্পর্কে মানুষ নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে, কেন  এমন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে তারা। ড. কামাল, ফকরুল, ব্যারিস্টার মঈনুল, আ.স.ম আব্দুর রব, মান্নাদের ঐক্য প্রক্রিয়ার সাথে সাথেই ফরিদপুর-১ এর উন্নয়নকে মিলান করতে কেন এই ষড়যন্ত্র? ওদের সাথে এসব ষড়যন্ত্রকারীদের আতাঁত রয়েছে কি? চার নেতার ঐক্য সম্পর্কে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক শরীফ সেলিমুজ্জামান লিটু তার
প্রতিক্রিয়ায় জানান, ষড়যন্ত্রকারীরা অধিকাংশই ডিগবাজির খেলোয়াড়, সুবিধাবাদী। যিনি এদের আহবান করেছেন, তিনি জাতীয় পার্টি হয়ে আওয়ামীলীগে পুনর্বাসিত। প্রাক্তন  ছাত্রলীগ নেতা তারেক জিয়ার সাথে সখ্যতার কারণে জননেত্রী শেখ হাসিনার চক্ষুশূল। সাবেক সাংসদ কাজী সিরাজ নিজ স্বার্থরক্ষায় জনগনের ভোট বিক্রি করে শেখ হাসিনাকে কটুক্তি করে বিএনপিতে যোগদান করেন। এ ছাড়াও উদীয়মান এক নেতা বিএনপি ঘরনার রাজনীতি থেকে উঠে এসে এখন আওয়ামী প্রীতিতে গদগদ। এরা সকলেই একই বৃন্তের কুটিল ফল। এরা আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে তথা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।

তিনি আরও বলেন, তিনি হয়তো ভুলে গেছেন, কাজী সিরাজ দল ত্যাগের পর তাঁর শো-ডাউনে মধুখালী আর আলফাডাঙ্গার জনতা প্রতিশোধ স্পৃহায় ফেটে পড়ে অথচ দলবল নিয়ে বোয়ালমারীর নেতা ঠাঁয় দাড়িয়ে থাকেন। গণভবনে গেলে ওই নেতাকে শেখ হাসিনা কি বলেছিলেন, সেটা তিনি ভুলে গেলেও শেখ হাসিনা কিন্তু ভুলে যান নাই। জনগণকে এতদিন যে ধোকা দেয়া হয়েছে, সেদিনের ষড়যন্ত্রের ফল হচ্ছে বিপরীত; উল্টো থলের বিড়াল বেড় হয়ে যাচ্ছে। ওনারা দীর্ঘদিন নিজেদের মনোনয়ন কনফার্ম করে কর্মীদের ভুল বুঝিয়ে আব্দুর রহমানের জন জোয়ারকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। যখন মনোনয়ন পাচ্ছেন না, বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন, তখন সকলে এক হয়ে মাঠে নেমেছেন। তবে সচেতন জনগন খাবে-দাবে, ভোট দেবে নৌকায়; এই সত্যটা তাদের জেনে রাখা দরকার। আর সে নৌকা শেখ হাসিনার হাত দিয়ে মো. আব্দুর রহমানের কাছেই আসবে।

বোয়ালমারী উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মীরদাহ্ পিকুল মনোনয়ন প্রত্যাশী চার নেতার ঐক্য সম্পর্কে বলেন, উপজেলা আ’লীগের সভাপতি এমএম মোশাররফ হোসেন বর্ধিত সভা ডেকেছেন, অথচ আমি সাধারণ সম্পাদক হয়েও কিছু জানি না।

বর্ধিত সভা সাধারণ সম্পাদক ডাকে, মন্তব্য করে তিনি বলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের ৬৯ জন সদস্যের মধ্যে ৪০ জনকেই দাওয়াত দেয়া হয়নি। আসলে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বুঝে গেছেন আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাচ্ছেন আব্দুর রহমান। এজন্য তারা আব্দুর রহমানের মনোনয়ন ঠেকাতে এক জোট হয়ে বর্ধিত সভার নামে একটি নাটক মঞ্চস্থ করেছেন।এই ঐক্যে কোন কাজ হবে না।শনিবার বোয়ালমারী উপজেলা আ’লীগের একাংশের বিশেষ বর্ধিত সভায় ফরিদপুর-১ আসনের উন্নয়নের রূপকার
মো. আব্দুর রহমানকে নিয়ে ষড়যন্ত্র এবং ষড়যন্ত্রকারীরা যে বক্তব্য দিয়েছেন তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন মধুখালী উপজেলা ও পৌর আওয়ামীলীগ।

রোববার বিকেলে উপজেলা আ’লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মির্জা মনিরুজ্জামান বাচ্চুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত যৌথ বর্ধিত সভায় প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়।সাধারন সম্পাদক রেজাউল হক বকুর সঞ্চালনায় বর্ধিত সভায় বক্তব্য রাখেন মধুখালী পৌরসভার মেয়র খন্দকার মোরশেদ রহমান লিমন, উপজেলা আ’লীগের সহ সভাপতি রতন বিশ্বাস, আঃ ছালাম মিয়া, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো. ইলিয়াছ মিয়া, এ্যাড. আলিউজ্জামান খোকন, শহিদুল ইসলাম ,সাংগঠনিক সম্পাদক
এম.এম বাবুল আক্তার, পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি হাজী মোহাম্মদ আলী মিয়া, সাধারন সম্পাদক মির্জা আকতারুজ্জামান খোকন, উপজেলা আ’লীগের প্রচার সম্পাদক আতিয়ার রহমান মিয়া, তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক শাহ মো. ফারুক হোসেন, সহ দপ্তর সম্পাদক আঃ রাজ্জাক রাজা, সহ প্রচার সম্পাদক রেজাউল করিম তুহিন, কোরকদী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান খানসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানবৃন্দ। উপজেলা আওয়ামীলীগের আয়োজনে সকল অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা ও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গিকার ব্যক্ত করা হয়।

এ ঘটনায় আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম, হোমিও প্যাথিক বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. দিলীপ রায়, কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক ও তিতাস গ্যাস লিঃমিঃ পরিচালক খান মঈনুল ইসলাম মোস্তাক ও আলফাডাঙ্গা উপজেলা আ’ লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীদের মাঝে মিশ্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।