যদি জনগণ ভোট দেয়, আমরা আবার ক্ষমতায় আসতে পারি তাহলে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করা হবে’- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ভোটারবিহীন সংসদে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে আবারও প্রমাণিত হলো তাঁর মন রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ভরা। উনি রাষ্ট্র ক্ষমতা আটকে রেখেছেন জনগণের কল্যাণে নয়, শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করাটাই হচ্ছে মূল লক্ষ্য। প্রশাসনিক ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, আইনি ব্যবস্থায় প্রতারণামূলক নীতি কার্যকর আছে কেবলমাত্র ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে। সুতরাং সেটিরই প্রতিফলন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। সেজন্য তিনি যা ইচ্ছা তাই করার হুমকি দেন।’
বৃহস্পতিবার (২৫ অক্টোবর) নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির এই মুখপাত্র এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘শুধুমাত্র ন্যায্য ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো বীর মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলার হিড়িক চলছে। গতকাল তাঁর বিরুদ্ধে চুরির মামলাও দায়ের করা হয়েছে। কতটা অসংস্কৃত ও হিংস্র আচরণ করা যায় তার সবটাই প্রয়োগ করা হচ্ছে গণতন্ত্রকামী মানুষদের ওপর। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো একজন খ্যাতিমান মুক্তিযোদ্ধা, মানবধিকার কর্মীরাও আজ সরকারের সহিংস আচরণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। তবে আমরা সুস্পষ্টভাবে বলে রাখি জনগণের এজলাসে বিচারের মুখোমুখি হতে ক্ষমতাসীনরা যেন প্রস্তুত থাকে।’
তিনি বলেন, ‘৫ জানুয়ারির পর জাতীয় সংসদে ভোটারবিহীন সংসদ সদস্যদের এখন পর্যন্ত ২৩টি অধিবেশন বসেছে। এর মধ্যে প্রায় দুই শত আইন পাস করেছে তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে নিরঙ্কুশ একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যই এ গণবিরোধী খারাপ আইনগুলো পাস করিয়েছেন। চলতি অধিবেশনেও চলছে নতুন নতুন আইন পাসের তোড়জোড়। মানুষ এখন নিজের ছায়াকে দেখলেই ভয় পায়। ঘুমের ঘোরের কথাতেও আতকে উঠে। আজকে গণমাধ্যমে এসেছে আরও আইন পাসের জন্য সংসদের চলতি অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। দেশের রাজনীতিসহ গোটাদেশকে কব্জায় নিতে অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী এত কালো আইন পাস করে রেকর্ড গড়তে চলেছেন। তাই তিনি নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব তুলেছেন যা, চলতি সংসদে পাস করতে তোড়জোড় চলছে। এর পিছনে যে চুড়ান্ত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে তা জাতির সামনে পরিষ্কার।’
শেখ হাসিনা পিতার সৃষ্টি বাকশালকে ব্যর্থ হতে দিতে চান না। তাই ভিন্ন কায়দায়, ভিন্ন পন্থায় মৃত বাকশালকে জীবিত করতে অমৃত পান করানো হচ্ছে এ সমস্ত কালো আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘শেখ হাসিনা যত দিন ক্ষমতায় আছেন ততদিন গণবিরোধী কাজের সমালোচনাও করা যাবে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না, ব্যাংক লুটের কথা বলা যাবে না, অপকর্মের কথা বলা যাবে না, গুম ও গুপ্তহত্যার কথা বলা যাবে না।’
‘গত দুদিন আগে তিনি বলেছেন, ৪০টি টেলিভিশন আমি দিয়েছি অথচ তাদের দিয়ে সবচেয়ে ভুক্তভোগি আমরা। তিনি কি গণমাধ্যম দেয়াকে কি ব্যক্তিগত সম্পদ দেয়ার মতো মনে করছেন যে, তিনি তাঁর নিজস্ব গোডাউন থেকে টেলিভিশন চ্যানেল সরবরাহ করেছেন। সেখানে কিছুটা ব্যতিক্রম হলেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছেন। এটিই হচ্ছে গণতন্ত্র বিরোধী বাকশালী চেতনা।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সহ সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম পটু প্রমুখ।