সম্মিলিত জাতীয় জোটের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপ সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার।
তিনি বলেন, আলোচনা অত্যন্ত সন্তোষজনক। সংলাপে আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলেছি। তবে নির্বাচন অবশ্যই সংবিধানের আলোকে হতে হবে। কোনো অনির্বাচিত সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচন চাই না। কারণ এর আগেও তথাকথিত অনির্বাচিত সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারেনি। তাছাড়া ওয়ান-ইলেভেন সরকার দেশের শীর্ষ নেতাদের রাজনীতির মাঠ থেকে বিতাড়িত করতে চেয়েছে।
সোমবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সংলাপ শেষে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী অফিসে এক ব্রিফিংয়ে রুহুল আমিন হাওলাদার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। সংলাপে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে আট দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে, তার কথাও বলেন তিনি।
জাপা মহাসচিব বলেন, একটি দলীয় বা জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের অধীনে যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে, আমরা তার প্রতিশ্রুতি চাই এবং তার বাস্তব প্রতিফলন আশা করি। আমরা নির্বাচনের সময়ের জন্য বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছি। নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন করার প্রস্তাব করেছি। তবে তাদের হাতে বিচারিক ক্ষমতা থাকবে না।
রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে সরকারের পক্ষ থেকেও প্রস্তাব রাখার কথা বলেছি। নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে জনমনে দ্বিধা-সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এটি একটি আধুনিক পদ্ধতি হলেও ভোটাররা এখনও ইভিএম ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি। তাই এবার ইভিএম ব্যবহার না করার পক্ষে আমরা বলেছি।
জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে সংস্কার কর্মসূচির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে জাপা মহাসচিব বলেন, আমরা প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা বলেছি। দেশের সচেতন মানুষ মাত্রই এই প্রস্তাব সমর্থন করেন। আমরা এই প্রতিশ্রুতির প্রত্যাশা করি— আগামী সংসদে আমরা এই প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের আইন পাশ করব।
তিনি আরও বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তা দেওয়ার পর কে নির্বাচনে আসবে বা কে আসবে না— তা দেখার কোনো অবকাশ নেই। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে সারপ্রাইজ আসতে পারে বলেও জানান তিনি।
এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আলোচনা একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের প্রেসিডিয়ামে আলোচনা শেষে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি ছোট্ট পরিসরে আলোচনা করব এবং দলের চেয়ারম্যান সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।
সংলাপ শেষে প্রধানমন্ত্রীকে মধ্যহ্নভোজ অথবা নৈশভোজে অংশ নিতে জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলেও জানান জাপা মহাসচিব। তিনি বলেন, জবাবে প্রধানমন্ত্রী সময়-সুযোগ মতো এই আমন্ত্রণে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির পেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সুনীল শুভ রায়, এস এম ফয়সল চিশতী, সুলেয়মান আলম শেঠ, আতিকুর রহমান আতিক, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব এমএ মতিন, মো. নোমান মিয়াসহ অন্যরা।