বর্জ্য: সমস্যা না সম্ভাবনা?

            বর্জ্য: সমস্যা না সম্ভাবনা?

ঘনবসতিপূর্ণ কয়েকটি শহরের মধ্যে বাংলাদেশের রাজধানী, ঢাকা,  অন্যতম জনবহুল শহর যেখানে গড়ে প্রতিবর্গ কি:মি এ ৪৭০০০ জন মানুষের বাস। জনবহুল এই মেগাসিটিতে সুষ্ঠ  বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকবে এমনটা কল্পনা করাই বাঞ্ছনীয়। পরিতাপের বিষয় এই যে, সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশন এর জন্য নেয়া কিছু নীতিমালা ব্যতীত উল্লেখযোগ্য কোন নীতিমালা গৃহীত হয় নি। এমনকি বর্জ্য পুন:প্রক্রিয়াকরণ নিয়েও কোন পরিকল্পনা গৃহীত হয়নি। ঢাকা উত্তর সিটি-কর্পোরেশন এর সংশ্লিষ্ট মহল এর ভাষ্যমতে ২০১৬-২০১৭ বছরে উৎপাদিত সামগ্রিক বর্জ্যের পরিমাণ ও তাদের জানা নেই। সংগতিপূর্ণ তথ্য না থাকায় শুধুমাত্র সংগ্রহের পরিমাণের উপর নির্ভর করে সিটি-কর্পোরেশন এর দক্ষতা নিরূপণ করা যায় না।

রাজধানী ঢাকার মধ্যেই অবস্থিত ক্যান্টনমেন্ট নিয়ন্ত্রিত এলাকা সমূহের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড দীর্ঘদিন ধরে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে আসছে। ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট সফলতা থাকলেও সর্বশেষ মাত্রায় সিটি-কর্পোরেশন এর উপরেই নির্ভরশীল। বিষয়টি আরও পরিষ্কারভাবে বললে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এর সংগৃহীত বর্জ্য মিরপুর-১২ থেকে ফিলিং ল্যান্ড আমিনবাজার পর্যন্ত সিটি-কর্পোরেশন-ই নিয়ে থাকে। তথাপি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অবদান প্রশংসনীয়।

ঢাকা উত্তর সিটি-কর্পোরেশন এর তথ্যমতে, এটি প্রতিদিন গড়ে ২৮৫৫ টন বর্জ্য সংগ্রহ করে থাকে যা সিটি-কর্পোরেশন কর্তৃক প্রকাশিত রিপোর্ট ২০১৭-২০১৮ তে পাওয়া যায়। প্রতিনিয়ত আমাদের যাত্রাপথে লক্ষ্য করে থাকি যে, সিটি-কর্পোরেশন এর মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত কর্মীরা নানা ধরনের বর্জ্য সংগ্রহ করে উন্মুক্ত বা অর্ধ-উন্মুক্ত কনটেইনারে জমা করে থাকে। এলাকাভিত্তিক নির্ধারিত টাকার পরিমাণ বিভিন্নরকম হলেও একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, সিটি-কর্পোরেশন দ্বার থেকে দ্বারে বর্জ্য সংগ্রহ করে না যে কাজটি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড গুরুত্বের সহিত করে থাকে। যেখানে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড দিনে দুই-বার বর্জ্য সংগ্রহ করে সেখানে কিছুটা ব্যতিক্রম ব্যতীত সিটি-কর্পোরেশন কালেকশন পয়েন্ট থেকে দুই-তিন দিনে একবার সংগ্রহ করে থাকে। যেই কারণেই মোট উৎপাদিত ও সংগ্রহীত বর্জ্যের পরিমাণের মধ্যে ব্যবধান থেকে যায়। অন্যদিকে, কনটেইনার এ জমে থাকা ময়লা ভীষণভাবে পরিবেশকে দুষিত করছে।

এমতাবস্থায়, পরিবেশ রক্ষা ও নগরী বসবাসযোগ্য রাখার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহল গুরুত্বের সহিত নিয়েছে। তবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি মডেল এমন হতে পারে যে, সময়মত পলিথিন ব্যাগে (হাউসহোল্ড লেভেল) বর্জ্য মাঠ পর্যায়ের কালেক্টর দিয়ে কালেকশন পয়েন্টে নিতে হবে। যেখান থেকে হাইড্রলিক-ট্রাক দ্বারা ল্যান্ডিং ফিল্ড আমিনবাজার এ স্থানান্তর করতে হবে। আমাদের মতে, গাণিতিক হিসাব অনুযায়ী প্রতি ওয়ার্ডে পরিমিত সংখ্যক কালেকশন পয়েন্ট প্রয়োজন।  প্রাথমিক ভাবে বিভিন্ন ওয়ার্ড যেমন ওয়ার্ড নং ১, ২, ৫ ১৩,১৪, ১৯ এবং ২০ এ যথাক্রমিক ভাবে ২২ টি, ১৮ টি, ১৪টি, ১৯টি, ১৭টি, ১২টি, ১২টি কালেকশন পয়েন্টে প্রয়োজন। উপরোক্ত হিসাবে, এড়িয়ে ও জনসংখ্যা র ঘনত্ব, ২০১৬-২০১৭ এ প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে প্রাপ্ত সংগ্রহীত বর্জ্যের পরিমাণ বিষয়গুলো বিবেচিত হয়েছে।

রাজধানী সহ অন্যান্য সিটি-কর্পোরেশন গুলোতেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়টি সরকার কর্তৃক অনুদান ও সিটি-কর্পোরেশন এর নিজস্ব উপার্জিত অর্থেই হয়ে থাকে। উপমহাদেশে অভিনব হলেও বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি চীন সহ আমেরিকা,  দক্ষিণ-আফ্রিকা তে বিদ্যমান যা কিনা লাভজনকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিটন বর্জ্য থেকে ৫৫০-৭৫০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। যথাযোগ্যভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য অপরিমিত বর্জ্য নিয়ে আসতে পারে অপার সম্ভাবনা। এর মাধ্যমে মেটাতে পারে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ এর অনেকাংশ।

# শেহনাজ পারভীন, এম বি এ, আইবিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।