নৌকার প্রার্থীদের বিজয়ী করতে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের প্রতিনিয়ত গোপন বৈঠক চলছে এমন দাবি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ধরপাকড় বাড়ানো হবে, প্রার্থী গুম-খুন করে এমন অবস্থা তৈরি করা হবে যেন, নির্বাচন থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হই।’
তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) রাতে ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের ৪ তলার পিছনের কনফারেন্স রুমে এক গোপন মিটিং করে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।’
ওই মিটিংয়ের বিষয়টি জানানোর জন্য শনিবার (২৪ নভেম্বর) নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন রিজভী।
গোপন মিটিং এ পুলিশের ডিআইজি হাবিবের বক্তব্যের কিছু অংশ সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন রিজভী।
গোপন মিটিং এর বিষয়ে জানান, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টকে চরম অসহযোগিতা করা হবে যা ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
ডিআইজি হাবিবের কথা উল্লেখ করে রিজভী জানান, ‘পুলিশ সূত্রের খবর অনুযায়ী ৩৩টি সিট নৌকার কনফার্ম আছে এবং ৬০-৬৫ টিতে কনটেস্ট হবে, বাকী আর কোনো সম্ভাবনা নেই। কাজেই সাংঘাতিক কিছু করা ছাড়া এটি উৎরানো যাবে না।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে আড়াই ঘন্টা ধরে চলা এ মিটিংয়ে সারাদেশের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং সেট-আপ ও প্ল্যান রিভিউ করা হয়।’
ওই গোপন বৈঠকের উপস্থিতির বিষয়ে অবগত করে তিনি জানান, সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সচিব সাজ্জাদুল হাসান, জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহমদ, নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালউদ্দীন আহমদ, পানিসম্পদ সচিব (প্রধানমন্ত্রীর অফিসের প্রাক্তণ ডিজি) কবির বিন আনোয়ার, বেসামরিক বিমান পরিবহন সচিব মহিবুল হক, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও মহানগরী রিটার্নিং অফিসার) সদস্য সচিব আলী আজম, প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-১ (বিচারক কাজী গোলাম রসুলের মেয়ে) কাজী নিশাত রসুল।
এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন র্যাব, ডিএমপি ও কাউন্টার টেররিজমের কর্মকর্তারা।
রিজভী জানান, ‘বৈঠকে আরো বলা হয়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যদি শেষ পর্যন্ত ভোটে থেকে যায় তাহলে ভোটের দিন পর্যন্ত ধরপাকড়ের তাণ্ডব চালানো হবে নির্দয়ভাবে, যেনো ভোট কেন্দ্রে কেউ হাজির হতে সাহস না করে।’
‘আর যদি ধানের শীষের অনুকুলে ভোটের হাওয়া ঠেকানো না যায়, তবে মিডিয়া ক্যু করে নৌকাকে জিতানো হবে, বিটিভির মাধ্যমে ফলাফল ঘোষণা করে সব মিডিয়াতে তা রিলিজ করার ব্যবস্থা করা হবে। একবার ফল ঘোষণা করতে পারলে তারপরে নির্মমভাবে সব ঠান্ডা করা হবে।’
প্রশাসন এবং পুলিশের বির্তর্কিত ও দলবাজ কর্মকর্তারা জনসমর্থনহীন আওয়ামী লীগকে ফের ক্ষমতায় বসানোর জন্য নানা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে উল্লেখ করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘বিস্তারিত আলোচনা শেষে মূল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, নির্বাচন কমিশন থেকে বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টকে চরম অসহযোগিতা করা হবে, যতই চাপ দেয়া হোক প্রশাসনে হাত দেয়া যাবে না, ধরপাকড় বাড়ানো হবে, প্রার্থী গুম-খুন করে এমন অবস্থা তৈরি করা হবে যাতে তারা নির্বাচন থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়।’
‘সেটির আলামত ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে যশোর জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি ও বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী আবু বকর আবুকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে।’
বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার প্রসঙ্গ তিনি জানান, ‘বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান জনাব গিয়াস কাদের চৌধুরী সাবেক সংসদ সদস্য। এজন্য তিনি কারাগারে কারাবিধি অনুযায়ী তিনি ডিভিশন পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু তাকে আটক করার পর প্রথমে ডিভিশন দেয়া হলেও গতকাল তা বাতিল করে সাধারণ কয়েদিদের সাথে আমদানি ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।’
‘জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্যই আইনি প্রক্রিয়ার নামে বারবার হয়রানি করা হচ্ছে। হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভ করার পরও সেই আদেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছে সরকার পক্ষ।’
‘রমনা থানা ছাত্রদল নেতা মো. জুয়েল রানাকে গত ২১ নভেম্বর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ, এখনও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।’
‘ঢাকা মহানগর (উত্তর) খিলক্ষেত থানাধীন ৪৮নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক ভূঁইয়াকে গতকাল (শুক্রবার) সকালে গ্রেফতার করেছে খিলক্ষেত থানা পুলিশ।’
এছাড়া রুপনগর থানা যুবদলের সহ-সভাপতি মো. ফখরুল ইসলাম শিপু, প্রচার সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, যুবদল নেতা শাহজাহান সিকদারকে গ্রেফতার করার কথা জানান সংবাদ সম্মেলনে।