দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আপিলে খালাস পেলেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে অংশ নিতে হলে খালেদা জিয়াকে মুক্তির পরও পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে।
আজ মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যাটর্নি জেনারেল এ মন্তব্য করেন।
মাহবুবে আলম বলেন, ‘গতকাল অ্যাডভোকেট ফখরুর ইসলাম এবং ওয়াদুদ ভূঁইয়া, মশিউর রহমান, এমডি আব্দুল ওয়াহ্হাব, ডা. জাহিদ হোসেন একটি আবেদন করেছিলেন এই বলে যে, তারা দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে জামিনে আছেন। কিন্তু তাদের দণ্ড স্থগিত না করা হলে তারা সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারছেন না। এই বলে তারা দণ্ড স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছিলেন। আদালতে আমি (শুনানিতে) বলেছিলাম- ফৌজদারি আদালত বিশেষ করে ফৌজদারি আপিল আদালত অবশ্যই তাদের সাজা (সেনটেন্স) স্থগিত করতে পারেন। কিন্তু কনভিকশন বা তাকে যে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে সেটির স্থগিত নেই। বিশেষ করে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের ২(ঘ) উল্লেখ করে বলেছিলাম, সেই সমস্ত ব্যক্তিরা জাতীয় সংসদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না বা সংসদ সদস্য হতে পারবে না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অন্যুন ২ বছরের জন্য সাজাপ্রাপ্ত হন এবং মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর সময় অতিবাহিত না হয়। ’
তিনি বলেন, ‘যারা দরখাস্ত করেছিলেন তারা সবাই দণ্ডপ্রাপ্ত। এরা তাদের দণ্ড থেকে মুক্তি লাভ করেনি এবং তাদের পাঁচ বছর সময় অতিবাহিত হয়নি। এমতাবস্থায় যদি তাদের দণ্ড স্থগিত করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয় তা হবে আমাদের সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। কাজেই আদালত আমাদের আবেদন গ্রহণ করে তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আর নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার কোনো অবকাশ থাকবে না বলে আমি মনে করি।’
খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই। এটি সাংবিধানিক বিধিবিধান। যে কেউ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিংবা সাংসদ হিসেবে সংসদে থাকতে পারবে না যদি কিনা ওই ব্যক্তি অন্যু্ন ২ বছরের জন্য সাজাপ্রাপ্ত হন এবং মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর সময় অতিবাহিত না হয়। এখানে শর্ত হলো ২টি। তা হলো- তিনি যদি দণ্ডিত হন তাহলে পারবেন না। আর ইতিমধ্যে তিনি যদি তার দণ্ড বা সাজা থেকে মুক্তিলাভ করেন তাহলে তার সাজা বাতিলের তারিখ থেকে পাঁচ বছর তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। কাজেই খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে দুইটি প্রতিবন্ধকতাই রয়েছে। কোনো আদালত তার রায় দিয়ে এই সাংবাধানিক প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করতে পারে না। ’
আরেক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমাদের আপিল বিভাগ কিংবা হাইকোর্ট বিভাগ সংবিধান দ্বারা তৈরি তাদেরকে সংবিধান দিয়ে চলতে হবে। কাজেই কোনো আদালত এটাকে অগ্রাহ্য করতে পারে না।’
‘এ বিষয়ের বিরুদ্ধে কেউ আপিল করলেও আমাদের একই বক্তব্য থাকবে। তারা সংবিধান অগ্রাহ্য করতে পারে না বলে আদালতকে জানানো হবে’, মন্তব্য করেন মাহবুবে আলম।
আপিল বিভাগ এই দণ্ড স্থগিত করতে পারে কি না জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘আপিল বিভাগ কি করবে সেটা আমি বলতে পারি না। আমার সাবমিশন হলো সংবিধানের ওপরে।’
হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ, ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর ও মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া নিম্ন আদালতের দণ্ড স্থগিত করে নির্বাচন করে সংসদে গিয়েছেন এবং মন্ত্রী হয়েছেন সেক্ষেত্রে অন্যদের ক্ষেত্রে এই নজির প্রযোজ্য না হওয়ার কারণ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এরশাদের ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের রায় আছে। তার সাংসদ পদ খারিজ হয়ে গিয়েছিল। আর ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর ও মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়ার মামলায় একই ধরনের সাবমিশন রাখা হয়েছিল কিনা তা আমি বলতে পারব না। এর আগে কেন এভাবে বলা (শুনানি) হয়নি তা আমি জানি না।’
এর আগে মঙ্গলবার সকালে বিএনপির পাঁচ নেতা- সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের নেতা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভূঁইয়া, ঝিনাইদহ-২ এর সাবেক সাংসদ ও ঝিনাইদহ বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব মো. মশিউর রহমান এবং ঝিনাইদহ-১ আসনের সাবেক সাংসদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আব্দুল ওহাবের দণ্ড স্থগিতের আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
কেননা, বাংলাদেশ সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- (১) কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক হলে এবং তার বয়স ২৫ বৎসর পূর্ণ হলে এই অনুচ্ছেদের (২) দফায় বর্ণিত বিধান-সাপেক্ষে তিনি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ-সদস্য থাকবার যোগ্য হবেন। (২) কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ-সদস্য থাকবার যোগ্য হবেন না, যদি (ক) কোনো উপযুক্ত আদালত তাকে অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষণা করেন; (খ) তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায় হতে অব্যাহতি লাভ না করে থাকেন; (গ) তিনি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন; (ঘ) তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যুন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হয়ে থাকে; (ঙ) তিনি ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশের অধীন যেকোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হয়ে থাকেন; (চ) আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না, এমন পদ ব্যাতীত তিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন; অথবা] (ছ) তিনি কোনো আইনের দ্বারা বা অধীন অনুরূপ নির্বাচনের জন্য অযোগ্য হন।