নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘এখন নানা প্রতিবন্ধকতা আছে এটা ঠিক। কিন্তু মার্কা দেয়ার পর আমাদের আর কেউ আটকাতে পারবে না।’
ঐক্যফ্রন্টকে মাঠে পাওয়া যাচ্ছে না- এর কারণ জানতে চাইলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, ‘জনগণ মাঠেই আছে। নেতাকর্মীরাও যার যার অবস্থান থেকে মাঠে কাজ করছে।’
মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। “বর্তমান নির্বাচন পরিস্থিতি এবং নির্বাচনী এলাকা” শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে নাগরিক ঐক্য।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পুলিশ প্রশাসনে কর্মরতদের উদ্দেশ্যে মান্না বলেন, ‘আপনারাও এই দেশের সন্তান এবং আপনারা নাগরিকদের করের টাকায় বেতন পান। আমরা এমন একটা রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখি, যেখানে নাগরিকগণ রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে তার সেবক হিসেবে পাবে এবং সবাই শান্তিতে সহাবস্থান করবে। কিন্তু সেই সহাবস্থানের জরুরি পূর্বশর্ত হল, পুলিশ বর্তমানে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের যে হয়রানি করছে সেটা এই মুহূর্তেই সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসনের ন্যাক্কারজনক পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের ফলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা তৈরি হলে যে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে সেটার সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব প্রশাসন এবং পুলিশকে নিতে হবে। সবার মনে রাখা উচিত, এই সরকারই শেষ সরকার নয়।’
মান্না বলেন, ‘দীর্ঘ ১০ বছর পর দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু এই নির্বাচনটি আদৌ ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য হবে কিনা সেটা নিয়ে গুরুতর সন্দেহ রয়েছে। বর্তমান সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের আচরণ আমাদের সমাজে জনমনে এই সন্দেহ প্রতিদিন আরও শক্তিশালী করছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিরোধীদলের জন্য পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি হবার প্রত্যাশাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিদিন নতুন করে পরিস্থিতি আগের চাইতে আরও বেশি খারাপ হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের একাকার হয়ে যাওয়া জনগণের মনে এই শঙ্কা তৈরি করছে যে, সরকার একটি নীলনকশার নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় থেকে যেতে চাইছে।’
নির্বাচন পরিস্থিতি তুলে ধরে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি সবার সমান সুযোগ সৃষ্টি বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’-এর ধারেকাছেও নেই। একদিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নিচ্ছে, অন্যদিকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন তীব্র রয়ে গেছে। কথাগুলো আমাদের না, কথাগুলো বলা হয়েছে ব্রিটিশ এমপিদের জন্য তৈরি হাউস অব কমন্সের লাইব্রেরির গবেষণাপত্রের মূল্যায়নে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতার নিয়মকানুনের প্রতি (রুলস অব গেম) সার্বিক আস্থার মাত্রা তলানিতে রয়ে গেছে।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচনের সময় পুরো প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে না গেলেও সংবিধানের ১২০ এবং ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করার স্বার্থে যে কোনও প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক সমর্থন সরকারের কাছে চাইলে সরকার সেটা দিতে বাধ্য থাকে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সরকারের প্রতি কোনও রকম চাপ সৃষ্টি করছে না বরং সরকার যা বলছে সেটাই করছে। কমিশনার রফিকুল ইসলামের বক্তব্য সেটাকে স্পষ্ট করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলকে সর্বোচ্চ চাপে রেখে একতরফা একটা নির্বাচন করার যে নীলনকশা ধরে সরকার এগিয়ে চলছে, অত্যন্ত হতাশাজনকভাবে নির্বাচন কমিশন সেই নীলনকশা বাস্তবায়নে পূর্ণ সহযোগিতা করে যাচ্ছে।’
মানা বলেন, ‘এই নীলনকশার অংশ হিসেবেই সারা দেশে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও গায়েবি’ মামলা দিয়ে অসংখ্য মানুষকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। অনেককে গুম করা হচ্ছে। অবিশ্বাস্যভাবে এই গ্রেফতারের তালিকায় অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন। একজন সম্ভাব্য প্রার্থীকে হোটেল রুম থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে লাশ বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়ার সংবাদও আমরা পেয়েছি। নির্বাচনের আর খুব কম সময় বাকি থাকলেও এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কোনও কথা বলছে না।’
নিজের নির্বাচনী এলাকার প্রসঙ্গে টেনে তিনি আরও বলেন, ‘মামলা হয়রানির মাধ্যমে বিরোধীদলের কর্মীদের নিপীড়নের ধারা চলছে আমার নির্বাচনী এলাকায়ও। আমার নির্বাচনী এলাকা বগুড়া-২ এর অন্যতম নেতা শিবগঞ্জ উপজেলার বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং বারবার নির্বাচিত শিবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জনাব মতিয়ার রহমান মতিনকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। জয়পুরহাট জেলার কালাই এর স্থানীয় কর্মকারদের তৈরি হাসুয়া উদ্ধার মামলায় স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির মদদে মতিনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকার কর্মীদের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানুষ মতিনের বিরুদ্ধে এই রকম হয়রানিমূলক মামলা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে প্রশাসন আমার নির্বাচনী কাজে বাধা সৃষ্টি করতে চাইছে। এলাকার অন্যান্য কর্মীদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় মতিনকে এমন মামলায় জড়িত করায় কর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।’
অবিলম্বে মতিনকে এই মামলা থেকে মুক্তির দাবি জানান মান্না।
এ ছাড়া বগুড়া সদর থানা ছাত্রদল আহ্বায়ক সিফাদ সরকার, শিবগঞ্জ উপজেলার সৈকত, নাহিদ, আব্দুস সালাম, শাহজাহানপুর উপজেলার আব্দুল মজিদ, হজরত, সুজাউল সোনাতলা উপজেলা আহসান হাবিব রাজা, আহসান হাবিব রাসেল, ধুনট উপজেলার রেজাউল হক দুলাল, বাদশাহ, চান মিয়া, আমজাদ হোসেনসহ সকল কর্মীদের দ্রুত মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহার দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহে আলম, নাগরিক ঐক্যের সদস্য ফজলুর রহমান, শহিদুল্লাহ কায়সার, নজরুল ইসলাম ও অতিকুর রহমান প্রমুখ।