শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করছেন অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, ‘ভোট ডাকাতি প্রস্তুতির শলাপরামর্শ করছেন। নির্বাচনে জাল-জোচ্চুরির সব প্রস্তুতি পাকা করছেন। আমরা বিশ্বস্তসূত্রে জানতে পেরেছি, রবিবার সকল জেলার প্রশাসকরা স্ব-স্ব এলাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ডেকে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে চারটি বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
সোমবার (১০ ডিসেম্বর)নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
চারটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘১. ডিসিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলেছেন, আপনারা জানেন সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি বিজয়ী হয়ে যাবে, তাই এই সরকারকে আবারও ক্ষমতায় রাখতে হলে বুঝেশুনে কাজ করতে হবে। যেকোন মূল্যে এই সরকারকে ক্ষমতায় আনতে হবে। কাজেই এদিক ওদিক করার মতলব থাকলে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। ২. মাঠে কাজ করবে পুলিশ ও র্যাব। আপনাদের দায়িত্ব হলো তাদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা এবং সহযোগিতা প্রদান। ৩. প্রিজাইডিং অফিসারদের নিরাপদে কন্ট্রোল রুমে আসার ব্যবস্থা করবেন। ৪. প্রিজাইডিং অফিসারদের ব্ল্যাঙ্ক সিগনেচার নিয়ে রাখবেন। সেটা সময়মতা কাজে লাগানো হবে। এই সরকারকে যেকোন প্রকারে হোক ক্ষমতায় রাখতে হবে।’
‘নির্দেশনায় বলা হয়, গভীর রাতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত পুলিশের সহযোগিতায় নৌকা প্রতীককে জয়ী করার জন্য ব্যালট পেপারে সিল মেরে ব্যালটবাক্স ভর্তি করে রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ভয়ংকর গোপন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা প্রশাসক তথা রিটার্নিং অফিসাররা। পরিকল্পিত নীলনকশার মাধ্যমে অবৈধ সরকারের দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য লোক দেখানো নির্বাচন আয়োজনে ফন্দি-ফিকির করছে। ক্ষমতাসীনদের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রহসনমূলক নির্বাচনী ছক তৈরি করে এগিয়ে চলছে।’
আওয়ামী লীগ সরকার নিশ্চিত ভরাডুবির আশঙ্কায় অস্থির ও বেসামাল হয়ে পড়েছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘তারা বিএনপির বিরুদ্ধে অনর্গল মিথ্যাচার ও প্রপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। মিডিয়া সন্ত্রাসে নেমেছে। প্রতিবেশী একটি দেশকে নিজেদের পক্ষে টানতে, অনুকম্পা ও সমর্থন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আমাদের নেতাদের নামে আজগুবি ভিত্তিহীন কথা ছড়াচ্ছে। গতকাল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান ধানমণ্ডি তে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন- পাকিস্তানি দূতাবাসে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাক্ষাৎ ও গোপন বৈঠক করেছেন। এই অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের প্রতিবাদ জানিয়ে পাকিস্তান হাইকমিশন সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছে। লিখিত বার্তায় তারা বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে খবর বেরিয়েছে তা ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছে। পাকিস্তানের কোনো কূটনীতিকের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘মিথ্যা কুৎসা প্রচারণায় বিকারগ্রস্ত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। গোষ্ঠী স্বার্থে দেন-দরবার করার ঐতিহ্যই হচ্ছে আওয়ামী লীগের। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী সাহেবই তো ৭ দিন পাকিস্তানে কাটিয়ে আসলেন। এই ধরনের মিথ্যাচার থেকে আওয়ামী লীগ ও তাদের অর্থপুষ্ট দালাল মিডিয়া বিরত থাকবে বলে আমরা আশা করি। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও তাদের মদদপুষ্ট কিছু দালাল মিডিয়াকে বলবো-বিকৃত অপপ্রচার না চালিয়ে আওয়ামী লীগের গোপন দেন-দরবারগুলি প্রকাশ করলে জাতি উপকৃত হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিটিভি (বাংলাদেশ টেলিভিশন) সরকারি সম্পদ নয়, এটা এখন আওয়ামী লীগের সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। অতি আওয়ামী লীগ হওয়ার কারণে অতিরিক্ত সচিব বর্তমানে বিটিভির মহাপরিচালক পদে আসীন আছেন হারুন অর রশিদ, যুগ্ম সচিব সুরথ কুমার সরকার ডিরেক্টর অব নিউজ পদে অধিষ্ঠিত আছেন, কিন্তু পদটি উপ-সচিবের ; যুগ্ম সচিব সাখাওয়াত হোসেন পরিচালক প্রশাসন পদে আসীন আছেন, এই পদটিও উপ-সচিবের। অত্যন্ত একনিষ্ঠ আওয়ামী লীগার নুর আনোয়ার হোসেন এবং মাহবুবা ফেরদৌস প্রোগ্রাম এক্সিকিউটিভ পদে আসীন আছেন। এরা বিটিভির বর্তমান পদে আসীন থাকলে ভোটের ফলাফল পাল্টে দিয়ে একটা বড় মাপের মিডিয়া ক্যু ঘটাতে সক্ষম হবে। অবিলম্বে উল্লিখিত কর্মকর্তাবৃন্দকে বিটিভি ঢাকা কেন্দ্র থেকে প্রত্যাহার করে অন্যত্র বদলী করতে হবে। এই সমস্ত কর্মকর্তাবৃন্দকে না সরালে একটা বড় ধরনের বিপর্যয় তারা ডেকে আনবে।’