একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি মাত্র দুই দিন। ভোটের দিন ঘনিয়ে আসতেই রাজধানী ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে অস্থায়ীভাবে বসবাস করা লাখো মানুষ ভোট দিতে নিজ নিজ এলাকায় ফিরছেন। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে অনেকেই গ্রামের পথে রওনা দেওয়ায় কর্মব্যস্ত রাজধানীজুড়ে অনেকটা ঈদের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
এলাকায় ভোটার হওয়ার কারণে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে অনেকেই আগেভাগে বাড়ি ফিরেছেন। কর্মব্যস্ত শহর তাই ভোটের জন্য দিন দিন ফাঁকা হচ্ছে। এবারের ভোটের দিন পড়েছে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে। ফলে ভোটের আগের দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটিসহ একটানা তিন দিন ছুটি মিলেছে। পরপর তিন দিনের ছুটি ঘরপিপাসু মানুষের জন্য পরিণত হয়েছে ঈদের ছুটিতে। এর সঙ্গে কেউ আগের দুই দিন বুধ ও বৃহস্পতিবার ছুটি নিয়েছেন। এ ধরনের ব্যক্তিরা বড়দিনের ছুটিসহ ছয় দিন এলাকায় থাকার সুযোগ পাচ্ছেন। আবার অনেকে তিন দিনের সঙ্গে ভোটের পর আরও কয়েকদিন ছুটি নিয়ে দীর্ঘসময় বাড়ি থাকার ব্যবস্থা নিয়ে গেছেন। ফলে ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, রাজধানী ততই ফাঁকা হচ্ছে।
গত দুই দিন এভাবে রাজধানীতে সারা দেশ থেকে গমনাগমনের স্টেশনগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে। সমান্তরালে ছেড়ে যাওয়া যানবাহনগুলোতেও ভিড় বেশি।
শ্যামলী থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশে যাত্রা করা মহিউদ্দিন বলেন, পাঁচ বছর পর একবার ভোট দেওয়ার সুযোগ পাই। অস্থিরতার কারণে গত বছর ভোট দিতে পারিনি। এবার এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি যা-ই হোক অন্তত ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তাই তিনি বাড়ি যাচ্ছেন। সুযোগ পেলে ভোট দেবেন। নইলে পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাবেন তিনি।
ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট, হাজারীবাগ, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, পান্থপথ, মোহাম্মাদপুর, সংসদ ভবন এলাকা, মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, রাজারবাগ, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা, পল্টন, শাহবাগ ও বাংলামটর এলাকা ঘুরে মানুষের ছোটাছুটি লক্ষ্য করা গেছে। বেশিরভাগ মানুষই নিজ নিজ গ্রামে যাওয়ার গাড়ি কিংবা ট্রেন-লঞ্চের টিকিট সংগ্রহ নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। রেলওয়ে স্টেশন ও বাস টার্মিনালগুলোতেও সাধারণ দিনের চেয়ে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বেশি দেখা যায়।
রাজধানীর সায়েদাবাদ টার্মিনালে কথা হয় সীতাকুণ্ডু এলাকার বাসিন্দা রেজোয়ান আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, পরিবারের চারজন ভোটার, তাদের নিয়েই তিন দিনের জন্য বাড়ি যেতে হচ্ছে। ঠিক ঠিকভাবে ভোট দিয়েই ঢাকায় ফেরার ইচ্ছা আছে। রেজোয়ান বলেন, পাঁচ বছর পর নাগরিক অধিকারের ভোট দিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে এমপি নির্বাচিত করার সুযোগ হারাতে চাই না।
বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বারিধারা এলাকায় বসবাসরত রিকশাচালক আমিনউদ্দিন, রাজীব, গোলজার হোসেন, মাইনউদ্দিনসহ ২০/২২ জন। তারা সবাই গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর এলাকার বাসিন্দা। তারা জানান, সবাই রাতের কোচে একসঙ্গেই বাড়ি যাচ্ছেন ভোট দিতে।
আমিনউদ্দিন বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই ঢাকা ফাঁকা ফাঁকা হয়ে গেছে। ক্ষ্যাপ না থাকায় আয় রোজগার তেমন একটা নেই। এ কারণে ভোটের দুই দিন আগেই বাড়ির পথে রওনা দিচ্ছি। খিলক্ষেত এলাকায় কথা হয় কয়েকজন বেসরকারি চাকরিজীবী আনোয়ার হোসেন, রাসেল মিয়া, কাবুল উদ্দিন ও নেছার আলীর সঙ্গে। ৩০ ডিসেম্বরের ভোট দিতে তারাও গতকালই বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন।
কথা হয় একটি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আনিসুর রহমান আনিসের সঙ্গে। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে থেকেই সেনা টহল শুরু হওয়ায় নিজের এলাকায় নিরাপদে ভোট দিতে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি। আজকালের মধ্যেই পাবনার পথে রওনা দেবেন বলেও জানান তিনি।
ভাটারার নতুনবাজার ও বাড্ডার লিংক রোডে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা জানান, ‘কয়েকদিন ধরে লক্ষ্য করছি রাস্তায় লোকজন কম, যানবাহনও চলছে অল্পস্বল্প। গ্রামে গ্রামে যেন ভোটের উৎসব শুরু হয়েছে।’ তবে, ভোট দিতে নিজ জেলায় যাওয়ার সুযোগ কম পাচ্ছেন সংবাদ কর্মীরা। কারণ তাদের নির্বাচনের খবর সংগ্রহ করতে হবে। কয়েকজন অনলাইন পত্রিকা ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদ কর্মীর সঙ্গে কথা হয়। তারা বলছেন, নির্বাচন ঘিরে তাদের দায়িত্বের চাপে দম ফেলারও সময় নেই, এ কারণে ভোটের আগে তাদের বাড়ি যাওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে।