বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে বলে মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা যে বক্তব্য দিয়েছেন তা প্রতারণার ইঙ্গিত। বুধবার (৬ ফেব্রয়ার) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালযয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কড়া সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন সংসদ নির্বাচনের মতো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। সিইসির এমন বক্তব্য দেশ থেকে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার গভীর নীল নকশা। একাদশ জাতীয় সংসদের ভোট ডাকাতির নির্বাচন দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। নির্বাচনের আগের রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রেখেছেন। ভোটের দিন ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি, বিরোধী দলের প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর হামলা করা হয়েছে। শুধু তাই নয় হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সারা দেশের কারাগারগুলোতে এখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। মহা ভোট ডাকাতির আয়োজক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আসন্ন উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো হবে বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা জাতির সঙ্গে আবারো একটি প্রতারণা করার ইঙ্গিত।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মহাজোটের শরিক জাসদ যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে তা নিয়ে রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি ওবায়দুল কাদের কী জবাব দিবেন, কেননা তাদের শরিক জাসদ বলেছে ২৯ তারিখ রাতেই ব্যালটবক্স ভরা হয়।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে লুকোচুরি খেলা হচ্ছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘এক মামলায় জামিন নিলে অন্য আরেকটি মামলায় জামিন বাতিল করা হয়েছে। হাইকোর্ট জামিন দিলে আপিল বিভাগ আবার জামিন স্থগিত করেছে। পরে আপিল বিভাগ জামিন দিলে নিম্ন আদালত আরেকটি মামলায় জামিন আটকে দিয়েছে, এমনি করে পার হয়ে গেছে একটি বছর। যেসব মামলায় অন্যরা জামিনে রয়েছেন সেখানে বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। এমনকি প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়েই বেগম জিয়াকে চিকিৎসাসেবা পর্যন্ত দিতে সুযোগ দিচ্ছে না সরকার। উচ্চ আদালতের নির্দেশে বেগম জিয়াকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও সম্পূর্ণ চিকিৎসা না দিয়ে সরকারের নির্দেশে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা ধরে রাখতে এটি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি মঞ্চস্থ করতে সম্পূর্ণ দলীয়করণের মাধ্যমে প্রশাসন,আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সরকার। পৃথিবীর ইতিহাসে একজন সম্মানিত বয়স্ক জনপ্রিয় নেত্রীকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় জ্বলে পুড়ে এমনভাবে সাজানো মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়ার কোনো দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে নেই।’
রিজভী বলেন, ‘কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম এ ২টি মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়াকে। মামলার দুটির মধ্যে একটি মামলায় হাইকোর্ট গত ২৭ জানুয়ারি বেগম জিয়াকে স্থায়ী জামিন দিয়েছেন। নিম্ন আদালতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ জামিন মঞ্জুর করা হয়। অপর মামলায় জামিন মঞ্জুর বা নামঞ্জুর এ বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখে বিলম্বিত করা হয়েছে। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।’
তিনি বলেন, ‘বিস্ময়ের ব্যাপার হলো এই মামলায় ৭৭ আসামির মধ্যে ইতোমধ্যে তিনজন মারা গেছেন। ৫ জনকে চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। বাকি ৬৯ জনের সবাই জামিনে আছেন শুধুমাত্র দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া।’
রিজভী বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম জিয়া প্রচণ্ড অসুস্থ। চোখেও প্রচণ্ড ব্যথা, তার পা ফুলে গেছে। অথচ তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। কিছুদিন যাবত নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারে নিচ তলায় ছোট্ট একটি কক্ষে অস্থায়ী ক্যাঙ্গারু আদালত সাজিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেখানে টেনে এনে জোর করে বিভিন্ন মামলায় শুনানি করা হচ্ছে। সরকার প্রধান এর উদ্দেশ্যে আমাদের আহবান এবার ক্ষান্ত দেন। একজন গুরুতর অসুস্থ বয়স্ক নেত্রীর ওপর জুলুম করবেন না। একটি বছর কারারুদ্ধ করে রেখে অত্যাচার করেছেন। এবার মুক্তি দিন। ইতিহাস পড়ুন, ইতিহাস বড় নির্মম। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।’
এসময় রিজভী খালেদা জিয়াসহ দলের কেন্দ্রীয় ১৮ নেতাসহ-সকল নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া, আব্দুস সালাম,সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।