ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন চারটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ সোমবার দুপুরে ঢাকা ও নয়াদিল্লি থেকে যৌথভাবে এসব প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়।
পাশাপাশি একই অনুদানে সার্ক দেশগুলোতে ন্যাশনাল নলেজ নেটওয়ার্ক (এনকেএন) সম্প্রসারণের আওতায় বাংলাদেশে এনকেএন সম্প্রসারণ প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী।
কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে নতুন ও অপ্রচলিত খাত যেমন ব্লু ইকোনমি ও মেরিটাইম, পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, মহাকাশ গবেষণা, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ রপ্তানি, সাইবার সিকিউরিটি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এসব বহুমুখী ও বহুমাত্রিক সহযোগিতার ফলে আমাদের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিশ্ববাসীর সম্মুখে সু-প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের দৃষ্টান্তরূপে পরিগণিত হচ্ছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতেও এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’
কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক, বহুপাক্ষিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের এ অঞ্চল ও এর বাইরে সন্ত্রাসবাদ দূর করতে আমরা বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশ সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের প্রতি ‘শূন্য সহনশীলতা’র নীতি পোষণ করে। কোনো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে কখনোই বাংলাদেশের মাটিতে আশ্রয় দেওয়া হবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘টানা তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পরে আপনার সঙ্গে আমার এটাই প্রথম ভিডিও কনফারেন্স। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে আমাদের বিজয় ঘোষণার পরপরই আমাকে ও আমার দলকে অভিনন্দন জানানোর জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের সেই ঐতিহাষিক ভাষণ ইউনেস্কো ঘোষিত ‘বিশ্ব ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’-এ যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে স্থান পেয়েছে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জনগণ ও সরকারের অপরিসীম অবদানের কথা আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তা এক চিরন্তন মাইলফলক হয়ে থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, এলওসির আওতায় ৬০০ বাস (৩০০ দোতলা বাস, ২০০ একতলা এসি বাস এবং ১০০ একতলা নন-এসি বাস) এবং ৫০০ ট্রাক বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের বহরে যুক্ত হতে যাচ্ছে। বাসগুলোর মধ্যে ৩০০টি ডবলডেকার, ১০০টি ননএসি, ১০০টি সিটি এসি ও ১০০টি ইন্টারসিটি এসি বাস রয়েছে। ট্রাকগুলোর মধ্যে রয়েছে ৩৫০টি ১৬ দশমিক ২ মেট্রিক টন বহন ক্ষমতাসম্পন্ন ও ১৫০টি ১০ দশমিক ২ মেট্রিক টন বহন ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রাক। আশা করি, এরফলে বাংলাদেশের যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হবে এবং আমাদের মহাসড়কগুলোর যানজট খানিকটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে।’
বাংলাদেশের পাঁচ জেলায় ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ভান্ডারিয়ায় ১১টি পানি শোধনাগার ভারতীয় অনুদানে নির্মাণ করায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। সরকারের স্বাস্থ্যখাতে গৃহীত কার্যক্রমগুলোর মধ্যে অন্যতম সফল এ কার্যক্রম অনুন্নত অঞ্চলগুলোতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার কল্যাণ ও জনগণের সুষম পুষ্টি নিশ্চিতকরণে ইতিবাচক অবদান রাখছে।’
তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে ৪৭টি বিআরটিসি বাস ও ২৫টি ট্রাক বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। বাকি বাস ও ট্রাক চলতি বছরের জুনের মধ্যে এসে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।