কারাবন্দি অসুস্থ বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোল নিয়ে সরকারি মিশন সাকসেসফুল করার জন্য ক্ষমতাসীনরা চতুর রাজনীতিতে লিপ্ত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন মিডিয়ায় সুত্রবিহীন একটি খবর ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে যে, চার বারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্যারোলে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন, এমনকি তারা তারিখও বলে দিচ্ছেন! কিন্তু বাস্তবতা হলো-বিএনপির কোনো সূত্র এমন কিছুই জানে না। অথচ সরকারপন্থি কয়েকটি মিডিয়া প্রতিদিন মনগড়া প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। এই প্রোপাগান্ডাগুলোর সাথে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও জড়িত বলে ব্যাপক গুঞ্জন আছে। দেশনেত্রী প্রচণ্ড অসুস্থ তা নিয়ে এই মিডিয়াগুলো নীরব। প্যারোল নিয়ে সরকারি মিশন সাকসেসফুল করার জন্য ক্ষমতাসীনরা চতুর রাজনীতিতে লিপ্ত রয়েছে।’
বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘বেগম জিয়া শারীরিকভাবে খুবই বিপর্যন্ত। হাত-পা নাড়তে পারছেন না। আর্থ্রাইটিসের ব্যাথার কারণে পা নাড়াতে পারছেন না। তাঁকে সুচিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। গতকালও চিকিৎসকরা বলেছেন তাঁর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এই অবস্থায় দেশনেত্রী চাচ্ছেন তাঁর পছন্দমতো বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে। কিন্তু এই অবৈধ সরকার তার জীবন হুমকির মুখে ফেলে সুদুরপ্রসারী স্বার্থ সিদ্ধির ষড়যন্ত্র অব্যহত রেখেছে। তার আইনজীবীরা বলেছেন, তাঁকে যে মিথ্যা সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে অন্যায়ভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে তা সহজ জামিনযোগ্য। আইনি প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক পথে জামিনে মুক্তি চান তিনি।’
বিএনপির এই মুখপাত্র প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলবো- দেশনেত্রীকে নিয়ে মাইনাস ফরমুলা বন্ধ করুন। ওয়ান ইলেভেনের সরকার মাইনাস-টু ফরমুলা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল। কিন্তু জনগণের প্রাণপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন কঠোর ভূমিকায় তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। তারা সফল হলে আজ আপনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন না। প্যারোলের নামে মাইনাসতত্ত্বের অশুভ চক্রান্ত করে লাভ হবে না। তাঁর জামিনে আর বাধা দিবেন না। আদালতে হস্তক্ষেপ বন্ধ করুন। আদালতের উপর থেকে অবৈধ হস্তক্ষেপ বন্ধ হলেই আমাদের নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন আইনী প্রক্রিয়ায় জামিনে বেরিয়ে আসবেন। আইনকে তার নিজের গতিতে চলতে দিন। অপতৎপরতা বন্ধ না করলে আখেরে আপনাদেরকে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে।’
মধ্যরাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতার মসনদ দখলে রাখা অবৈধ সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হচ্ছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘কোন কিছুই এখন যেন সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। দেশে চলছে এক চরম নৈরাজ্য এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি। খুন-ধর্ষণ-লুটপাটে মত্ত হয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। পুলিশ প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা রাতের ভোটে ব্যালট বাক্স ভরে দিয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে তারাও বেপরোয়া হয়ে গেছেন। সরকারকে পরোয়া করছে না। নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। প্রতিদিন প্রাত্যহিক খবরের কাগজগুলোর পাতা ভরে থাকছে খুন ধর্ষন পাশবিক নিপীড়নসহ বিভিন্ন অপরাধমুলক ঘটনায়। দেশে যেন ধর্ষণের উৎসব চলছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। সেখানকার অন্ধকারের ভোটের এমপি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ এবং পুলিশের সহযোগিতায় মাদরাসার অধ্যক্ষ ওলামা লীগ নেতা সিরাজ উদ দৌলা অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছিল দিনের পর দিন। অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার নির্দেশে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমিনের জ্ঞাতসারে পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলমের টাকায় ছাত্রলীগ সভাপতি শাহাদত হোসেন শামীম ও ছাত্রলীগ নেতা নুরুদ্দিনের সক্রিয় অংশগ্রহণে সরকারি দলের আশ্রয় প্রশ্রয়ে থাকা প্রভাবশালীরা পরিকল্পিতভাবে প্রকাশ্যে পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটেছে। পত্র পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, ফুলগাজীর উপজেলা চেয়ারম্যন একরামকে যার নির্দেশে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল সেই বিনাভোটের এমপি’র লোকজন নিয়ে নুসরাতের বাড়িতে গিয়ে মামলা তোলার জন্য চাপ দিচ্ছে। এরপরেই নুসরাতের পরিবারকে ডেকে প্রধানমন্ত্রী ধরিয়ে দিলেন একটি ব্যাংকের নিয়োগপত্র। জনমনে ধারণা, দলীয় নেতাকর্মীদের বাঁচানোর সনদই হচ্ছে এই নিয়োগপত্র। যাতে করে পরিবারটিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে মামলার গতি বদল করা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘৯ দিন হলো নুসরাত মারা গেছেন। অথচ এই দুস্কর্মের সহযোগিতাকারী সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহার করা ছাড়া আর কোনো ব্যবস্থা দৃশ্যমান হয়নি। যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার পর নুসরাত জাহানকে ডেকে নিয়ে সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাকে লাঞ্ছিত করে, সেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলেও তার কোন বিচার হচ্ছে না।’
এই সরকারের কর্মকাণ্ডে স্পষ্ট হচ্ছে এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে। তারা জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য দোষীদের সাজা দেয়া হবে বলে অভিনয় করছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে দলটির ভাইস-চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, আহমেদ আযম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক শামিম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।