জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের বিজয়ী সদস্যদের শপথ না নেওয়ার আগের সিদ্ধান্তেই অটল রয়েছে বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল)। গত সোমবার (২২ এপ্রিল) রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বৈঠক করেন নির্বাচিত ছয় জন সংসদ সদস্য। দলের হাইকমান্ড তাদের কার্যালয়ে ডেকে পাঠালে রাত পৌনে ৯টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বৈঠক করে।
বৈঠকে নির্বাচিতদের সতর্ক করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শপথের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নানা রকম কথাবার্তা আসছে। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু করা যাবে না।
এদিকে গত ৩০ ডিসেম্বরের এ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপির ছয় সদস্যের মধ্যে বেশ কয়েকজন এমপি হিসেবে শপথ নিতে আগ্রহী বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
একটি সূত্র জানায়, শপথ নিতে আগ্রহীরা আরও কয়েকদিন দলের হাইকমান্ডের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকবেন। এরপরও যদি দল থেকে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত আসে, তখন নির্বাচিতদের কেউ কেউ শপথ নিতে পারেন। গত সোমবার রাতে গুলশানে সংসদ সদস্যদের সাথে বৈঠকের পর দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠক করেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে লন্ডন থেকে তারেক রহমানও স্কাইপিতে সংযুক্ত ছিলেন। সেখানে আলোচনার এক পর্যায়ে তারেক রহমানকে জানানো হয়, বিএনপি সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্তেই অটল রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য ব্রেকিংনিউজকে বলেন, সোমবারের বৈঠকে সংসদ সদস্য হিসেবে দলের নির্বাচিতদের এমপি হিসেবে শপথ নেয়া না-নেয়ার বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মতামত শোনেন লন্ডন থেকে স্কাইপে যুক্ত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে সদস্যগণ নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। সবার মতামত শোনার পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও নিজের সিদ্ধান্ত দেন। একইসঙ্গে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ শপথ গ্রহণ করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও নির্দেশনা দেন।
তিনি আরও জানান, তারেক রহমান স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মতামত জানার পর সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বিএনপি থেকে নির্বাচিত কেউ শপথ নেবেন না। যেহেতু ৩০ এপ্রিল তাদের শপথ নেয়ার শেষ সময় সেজন্য চলতি সপ্তাহের যেকোনো দিন নির্বাচিত ৬ এমপিকে গুলশান কার্যালয়ে ডেকে দলের এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হবে। কেউ সিদ্ধান্ত অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এদিকে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন আছে যে, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিনিময়ে বিএনপি সংসদে যাবে। আওয়ামী লীগের নেতারাও বলেছেন, খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি চাইলে সরকার তা বিবেচনা করবে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো কথাই আসেনি। বিএনপি সংসদে যাবে না- এই সিদ্ধান্ততো আগেই নেওয়া আছে। আমাদের সেই সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হয়নি। আগের সিদ্ধান্তই বহাল আছে। তবে কথা উঠেছিল যে, কোনো কোনো এমপি ব্যক্তিগতভাবে কিছু মন্তব্য করছেন। সেটা করা উচিৎ না।’
‘খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে দরকষাকষি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে’ আওয়ামী লীগের এক নেতার এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া আপসহীন নেত্রী হিসেবেই জনগণের কাছে প্রতিষ্ঠিত। তিনি কখনোই কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি, কোনো স্বৈরাচারের কাছেই আত্মসমর্পণ করেননি।’
এদিকে শপথ নিতে আগ্রহী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত কয়েকজন সংসদ সদস্য ব্রেকিংনিউজকে জানান, তারা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না। তবে তারা এও জানিয়েছেন সংসদ সদস্য (এমপি) হিসেবে শপথ নেয়ার ব্যাপারে এলাকার জনগণের ভীষণ চাপ রয়েছেন।
শপথের বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মো. হারুন অর রশীদ ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘শপথের বিষয়ে মিডিয়ায় নানা রকম খবর বেরুচ্ছে। এসব নিয়ে মহাসচিব ডেকে আমাদের সতর্ক করেছেন। আমরা যেন দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো কিছু না করি। আমাদের গুলশান কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। সবাই একই মতামত দিয়েছেন। আর খালেদা জিয়া কারাগারে রয়েছেন। তার মুক্তির বিষয়ে সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সংসদে যাওয়ার বিষয় তো ভাবাও যায় না।’
জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের সবাইকে আমরা আমাদের মতামত জানিয়েছি। শপথ নেয়ার বিষয়ে এলাকার জনগণের ভীষণ চাপ রয়েছি। শপথের সময় শেষ হতে আর অল্প দিন বাকি আছে। এর মধ্যেই দলকে সিদ্ধান্ত জানাতে হবে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত উকিল আবদুস সাত্তারের সাথে কথা বলে জানা যায় তিনি সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী। তিনি ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘দলের নীতিনির্ধারক যারা রয়েছেন দেখি তারা কী সিদ্ধান্ত নেন। দলের ফাইনাল সিদ্ধান্ত জানার অপেক্ষায় আছি। আর সংসদে যাওয়ার ক্ষেত্রে জনগণের চাপ রয়েছে আমাদের উপর। আমরা যে নির্বাচিত হয়েছি এটা তো মিথ্যা নয়।’