বিএনপির সংসদে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, ‘যে সংসদকে আমরা প্রত্যাখ্যান করলাম, যে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করলাম, যে সংসদকে অবৈধ বললাম সেই সংসদে আমাদের যোগ দেয়ার কারণে দলের অনেক নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এ বিভ্রান্তি দূর করতে হবে। এই ধরনের ক্ষোভ থাকা ভালো না। এই ক্ষোভ যদি আমরা দূর করতে না পারি তাহলে জাতীয়ভাবে আমাদের রাজনীতিকে সামনে এগিয়ে নিতে পারবো না।’
বুধবার (২৯ মে) দুপুরে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত দলটির প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৮তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা যদি জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতি সঠিক ভাবে নির্ধারণ করতে, পরিচালনা করতে না পারি, তাহলে আমরা শহিদ জিয়াউর রহমানের এই দলকে সুসংগঠিত করতে পারবো না। এখন বিএনপির জন্য একটি বিরাট সংকটকাল। আমাদের নেত্রী অসুস্থ এবং কারাগারে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে নয়, কালকে বেগম জিয়ার মুক্তি হবে এবং তিনি আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। কিন্তু তিনি এই মুহূর্তে কারাবন্দি, তিনি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না, আমরাও তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। তিনি (খালেদা জিয়া) আমাদের নেতৃত্ব দিতে পারছেন না। আমাদের নেতা, দলেল ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (তারেক রহমান) প্রায় আট হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছেন। আর দেশে চলছে একদলীয়, নিষ্ঠুর, স্বৈরাচারী শাসন। তাই এখন সর্বত্র জুড়ে প্রয়োজন ঐক্য বজায় রাখা।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘আমাদেরকে আপনারা নেতা বলেন আর যাই বলেন, আমরা যদি ব্যর্থ হয়েও থাকি আর ব্যর্থ না হয়েও থাকি; আর ব্যর্থ হয়ে থাকলে আমাদেরকে সরিয়ে নতুন নেতৃত্বের ব্যবস্থা করুন। কিন্তু দলটাকে শক্তিশালী রাখতে হবে।’
নির্বাচনের পর দলের ভূমিকার কথা স্মরণ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের পরবর্তীতে দলীয় ভাবে আমরা নির্বাচনের ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম এবং সংসদকে অবৈধ ঘোষণা করে ছিলাম। সেজন্য আমরা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবং উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি নাই। আর যারা অংশগ্রহণ করেছিল প্রায় ২০০ জন তাদেরকে আমরা বহিস্কার করেছি। গত নির্বাচনে আমাদের শত শত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, জেল খেটেছেন এমনকি অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু সংসদে যোগদান করার কারণে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি বিরাট ক্ষোভ এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে বিএনপির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই প্রশ্নের উত্তর আমাদেরকে দিতে হবে এই প্রশ্নের উত্তর যদি আমরা দিতে পারি তাহলে শহীদ জিয়ার দলকে আমরা সুসংগঠিত করতে পারবো।’
বিএনপির নীতিনির্ধারক বলেন, ‘আমি মনে করি অবিলম্বে আমাদেরকে একটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করে হবে। এই ভেদাভেদ, ক্ষোভ দূর করার জন্য সকল অঙ্গ সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল স্বেচ্ছাসেবক দলসহ জাতীয় নির্বাহী কমিটি ডেকে আলোচনার মাধ্যমে আমাদের ভুল বুঝাবুঝি দূর করা।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এছাড়া আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল আব্দুল লতিফ, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি গোলাম সারওয়ার প্রমুখ।