নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্রদলের বিক্ষুদ্ধদের ক্ষোভের মুখে থাকা দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অসুস্থ রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে দেখে গেলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
মঙ্গলবার (১১ জুন) বিকেল ৫টার দিকে প্রথমে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এবং সাড়ে ৫টার পর দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নয়াপল্টনের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। বিক্ষুব্ধ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদেরকে তালা খুলে দিয়ে প্রবেশ করতে দেয়।
দুই নেতাই তৃতীয় তলায় অসুস্থ রুহুল কবির রিজভীকে দেখতে যান এবং চিকিৎসকের সাথে তার স্বাস্থ্যের খোঁজন-খবর নেন। সোমবার (১০ জুন) সকাল থেকে রিজভী অনবরত বমি করতে থাকেন। পরে দলের চিকিৎসকরা তাকে স্যালাইন দিয়ে সেখানেই চিকিৎসা শুরু করে।
মির্জা আব্বাস ৫টার দিকে বিএনপি অফিসে প্রবেশ করেন। তার সাথে দলের নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরফত আলী সপু, রফিকুল ইসলাম মজনুও যান। কিছু সময় পর বেরিয়ে এসে মির্জা আব্বাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা (বিক্ষুব্ধ ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের কর্মসূচি) কিছু না। ওরা মান-অভিমান করেছে, এটা ঠিক হয়ে যাবে।’
সাংবাদিকদের একপ্রশ্নের জবাবে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিষয়টা সাংবাদিকরা যেভাবে সিরিয়াসলি নিয়েছে বা উপস্থাপন করেছে আসলে বিষয়টি সেরকম সিরিয়াস না। এটা পোলা-পানের কাজ-কর্ম, মান-অভিমানের বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ঈদ গেছে। মান-অভিমান হয়েছে। এটা ঠিক হয়ে যাবে। কারো কিছু করতে হবে না। কোনও সালিশ, আলোচনা কিছুই করতে হবে না। ওরা রাগ করেছে, সব ঠিক হয়ে যাবে।’
এরপরই কার্যালয়ে প্রবেশ করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি এসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা কোনো পরিস্থিতি না, যদি আপনারা ফলাও করে প্রচার না করেন। কেউ ব্যথা পেলে চিৎকার দেয়- এটাই স্বাভাবিক। আমাদের দীর্ঘদিন দলের কতগুলো পদ্ধতিগত কারণে অথবা নিয়মিত কাউন্সিল না হওয়ার কারণে যোগ্য ছেলেরা তাদের আরাধ্য লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে নাই। সেই বিষয়টা আমাদের বিবেচনা করতে হবে, এরা দলের জন্য পরিশ্রম করে, এরা বাইরের নয়, এরা দলের মঙ্গল চায়।’
তিনি বলেন, ‘দলের মঙ্গল এবং ওদেরও যতটুকু প্রাপ্যটা আছে তা সমাধান করার পথ আমাদের খুঁজতে হবে। এটা অনেক বড় দল, অনেক কর্মী, অনেক নেতা। আমরা বিরোধী দলে আছি, আমাদের সীমাবদ্ধতাও আছে। এই সীমাবদ্ধতার মূল কারণটা হলো আমাদের নিয়মিত কাউন্সিল হয় নাই। মামলা-হামলা-নির্যাতনের কারণে নিয়মিত এই সাংগঠনিক কাজগুলো হয়নি। এই নিয়মিত সাংগঠনিক কাজগুলো হলে ওরাও ছাত্রদল করার জন্য এতো আগ্রহী হতো না। ওরাও বুঝে এটা।’
সমাধান কী দেখছেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সমস্যা যেমন আছে, সমাধানও আছে। আলোচনার মাধ্যমে এটার সমাধান হবে।’
রিজভী কেমন আছেন জানতে চাইলে গয়েশ্বর বলেন, ‘তিনি (রিজভী) অসুস্থ। তাকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। ডাক্তার যেখানে আছে।’
তিনি কী হাসপাতালে যাবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা চিকিৎসকরা ঠিক করবেন। কিন্তু কোনো পরিস্থিতি বা এই ঘটনার জন্য তাকে বাইরে (হাসপাতাল) যেতে হবে-এটা যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন না।’
এর আগে সকাল ১১টা থেকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা দেয় ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ একদল নেতাকর্মী। তাদের দাবি, ‘ছাত্র দলের কমিটি ভেঙে দেয়ার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করতে হবে। ছাত্রদল যে তিনটি প্রস্তাবনা দিয়েছিলো সেই অনুযায়ী নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ করতে হবে।’
বিক্ষুব্ধরা সকাল সোয়া ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধরা তালা দিয়ে কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। কার্যালয়ের নিচতলায় তাদের একটি অংশ অনশন কর্মসূচিতেও বসেছে। বিকেলে দলের স্থায়ী কমিটির দুই নেতা অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরও বিক্ষুব্ধরা অফিসের সামনেই অবস্থান নিয়ে ছিলো। কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা লাগানো ছিলো।