মামলাজট নিরসনে প্রচলিত আইনের সংস্কার জরুরি বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে বগুড়া-৫ আসানের সংসদ সদস্য মো. হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন।
আনিসুল হক বলেন, মামলার জট নিরসনে প্রচলিত আইনের সংস্কার অনেক ক্ষেত্রে জরুরি এবং আইনের এ সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রচলিত আইনকে যুগোপযোগীকরণে আইন সংশোধন করা বা বাস্তবতার নিরিখে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়ে থাকে।
আইনমন্ত্রী বলেন, একটি আইনের সাথে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার জড়িত থাকে। সকলের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনে আইন সংশোধন বা নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়। ইতিমধ্যে বেশ কিছু আইনের সংস্কার করা হয়েছে এবং আরও কিছু আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনের কার্যক্রম চলমান আছে।
আনিসুল হক জানান, সাতটি সাইবার ট্রাইব্যুনাল, ১২২টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ১৫৯টি যুগ্ম জেলা জজ আদালত, ১৯টি পরিবেশ আদালত, ৬টি পরিবেশ আপিল আদালত, ৩৪৬টি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের পদ সৃজনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আইনমন্ত্রী জানান, বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে বিচার কাজ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও এজলাস সংকট নিরসনে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিচার কাজে গতিশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারের বিশেষ উদ্যোগে বিভিন্ন পর্যায়ের বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনকে গতিশীল করা হয়েছে, যাতে শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া যায়। এ লক্ষ্যে ২০১৪-১৮ সাল পর্যন্ত সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে ছয়জন ও হাইকোর্ট বিভাগে ২৮জন বিচারপতি নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।
আনিসুল হক বলেন, জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনকে গতিশীল করা হয়েছে, যাতে অধস্তন আদালতে শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া যায়। ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত অধস্তন আদালতে মোট ৫৭১জন সহকারী জজ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৯৯ জন সহকারী জজ নিয়োগের কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আরও ১০০ জন সহকারী নিয়োগের জন্য জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন বরাবর চাহিদাপত্রও প্রেরণ করা হয়েছে। সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সারা দেশে আরও ৪১টি ট্রাইব্যুনাল সৃজন করেছে। নতুন সৃজিত এ ট্রাইব্যুনালসহ মোট ৯৫টি নারী ও শিশু নির্যাতন দম ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর অধীন দায়েরকৃত মামলাসমূহ নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। তাছাড়া ৭টি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সৃজন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯-এর অধীনে দায়েরকৃত মামলা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। এই ট্রাইব্যুনালের জন্য ২৪০টি সহায়ক কর্মচারীর পদও সৃজন করা হয়েছে।
বেগম হাবিবা রহমান খারে প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী জানান, গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত, নিম্ন আদালত থেকে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত অর্থাৎ দেশের আদালতসমূহে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৫ লাখ ৮২ হাজার ৩৪৭টি। এর মধ্যে আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ২১ হাজার ৮১৩টি। হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৫ লাখ ৬ হাজার ৬৬৪টি।
হাজী মো. সেলিমের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী জানান, দেশের পারিবারিক আদালতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত মোট বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৫৯ হাজার ৮৬০টি। জেলাভিত্তিক দেওয়া হিসেব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সর্বাধিক বিচারাধীন মামলা ঢাকা জেলায়, ৫ হাজার ৫০৯টি। বান্দরবার ও খাগড়াছড়িতে কোনো মামলা বিচারাধীন নেই।