ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন: প্রস্তাবিত বাজেট ধনীর স্বার্থ রক্ষায়, এটা বুঝতে অর্থনীতিতে অভিজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন: বাজেটে রাজস্ব সংগ্রহসহ অন্যান্য বিষয়ে ধনীদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের বিষয়টি খালি চোখেই দেখা যায়, এজন্য অর্থনীতিতে অভিজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
মেনন বলেন: অপ্রদর্শিত আয়ের টাকা দিয়ে জমি ক্রয়, ফ্লাট ক্রয়ের সুযোগ দেওয়া হলেও বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার জন্য কোন প্রক্রিয়া প্রস্তাবিত বজেটে নেই। এগুলো যাদের জন্য, তারা হচ্ছে এদেশের ধনীরা। এর ফলে বিকাশমান মধ্যবিত্ত চাপের মধ্যে থাকবে।
তিনি বলেন: প্রস্তাবিত বাজেটে ফলে মধ্যবিত্তদের অ-প্রত্যক্ষ কর আরো বেশি ভাবে বহন করতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সাধারণ পণ্যের দাম বাড়বে না। কিন্তু চিনি, এলপিজি, প্লাস্টিক সামগ্রী, অ্যালুমিনিয়ামের হাড়ি-পাতিলের দাম বাড়ছে। এসবই তো মধ্যবিত্তের গৃহস্থলীর জিনিস।
দেশের যে উন্নয়ন হচ্ছে তার ফল গুটি কয়েক মানুষ ভোগ করছেন দাবি করে বিগত সরকারের এ মন্ত্রী বলেন: উন্নয়ন হচ্ছে। এই উন্নয়ন যারা দেখতে পারছেন না তারা জেগে ঘুমিয়ে আছেন। তবে এ উন্নয়নের ফল শুধু কিছু লোক পাচ্ছে, জনগণ পাচ্ছে না। চার কোটি লোক দরিদ্র, দু’কোটি লোক পুষ্টি পায় না। বঙ্গবন্ধু কন্যার এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে যদি আমরা শুধু পরিসংখ্যানের দিকে তাকিয়ে দেখি।
সম্পদ গুটি কয়েক লোকের হাতে কুক্ষিগত দাবি করে স্বপক্ষে পরিসংখ্যান তুলে ধরে রাশেদ খান মেনন বলেন: যেখানে ১৯৯১-৯২ সালে গরিব ৫ শতাংশের হাতে সম্পদের এক শতাংশ ছিলো। সেটা ২০১৫-১৬ সালের এসে ঠেকেছে ০.২৩ শতাংশে। এ সময়ে বেড়েছে শীর্ষ ৫ শতাংশের সম্পদ বেড়েছে ১২১ গুণ। সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়েছে কিছু হাতে, একটি দল সৃষ্টি হয়েছে যারা সুপার ধনী। যারা চীনের ধনীদের তুলনায় বেশি সম্পদের মালিক। এদের মধ্যে ১০ শতাংশ ধনী মোট সম্পদের ৯০ শতাংশ সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করছেন।
তিনি আরও যোগ করেন: এসক ধনীরা মূলত ক্ষমতার চারপাশে বলয় গড়ে তুলে বিভিন্ন লুন্ঠন, দখল-বেদখল, জোর জবরদস্তি মারপ্যাঁচের মাধ্যমে সম্পদ সংগ্রহ করছে। দেশের সব ব্যাংক, বীমা, আবাসন এমনকি প্রবাসী লোক পাঠানো এদের হাতে। সাবেক অর্থমন্ত্রী ধারাবাহিকভাবে অস্বীকার করে আসলেও তার শেষ বাজেট ভাষণে স্বীকার করেছিলেন, উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সমতায় নজর দেওয়া যায়নি। বর্তমান অর্থমন্ত্রী অসমতা দূর করতে ভিন্ন কৌশলের কথা বলেছেন। বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধির জন্য আমি অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।
দেশে বর্তমান যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিদ্যমান তার ফল শুধু পাঁচ শতাংশ মানুষ পাচ্ছে দাবি করে বামপন্থী এ নেতা বলেন: একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বায়ন এবং নয়া উদারনীতিবাদই বিশ্ব জুড়ে লুটেরাদের একক আধিপত্য কায়েমের সুযোগ দিয়েছে।
এসময় তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন: এই মারাত্মক উন্নয়ন প্রবণতা থেকে অর্থনীতিকে বের করে আনতে হবে। বঙ্গবন্ধু সারা জীবন এই বৈষম্য-দারিদ্র এবং বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। এবং জীবনের শেষ ভাগে এই লুটপাটের অর্থনীতি সম্পর্কে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, সেটা যদি হয়; সেটাই হবে আমার দ্বিতীয় মৃত্যু।
কালো টাকা সাদা করতে দেওয়ার যে সুযোগ এবারের বাজেটে রাখা হয়েছে তাতে খুব একটা সুফল পাওয়া যাবে না দাবি করে এসময় মেনন বলেন: জিয়া-এরশাদ প্রবর্তিত কালো টাকা সাদা করার বিধান নব্বই পরবর্তী সময়ে কিছু দিনের জন্য বন্ধ থাকলেও আবার চালু করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সুযোগে বেগম জিয়া-সাইফুর রহমানরা কিভাবে কালো টাকা সাদা করেছিল, সেই হিসাব আমাদের কাছে আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এই টাকা বিনিয়োগে নিয়ে আসার জন্য এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে এ যাবৎ এ ব্যবস্থা থেকে বিশেষ কোনো সাফল্য পাওয়া যায়নি। এতে ফ্ল্যাট জমির দাম মধ্যবিত্তের আওতার বাইরে চলে যাবে। অনৈতিকতায় উৎসাহিত হবে।
আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুকে ভুলে বসে আছে দাবি করে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন: কৃষক আজ উৎপাদিত পণ্যের দাম পাচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু বাধ্যতামূলক সমবায়ের কথা বলেছিলেন, যা আওয়ামী লীগ একেবারেই ভুলে বসে আছে। ভূমি সংস্কারের কথা ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা ছিল। কৃষি উৎপাদনকে যদি আমরা সুরক্ষা করতে চাই; তাহলে ভূমি সংস্কার এখনই করতে হবে।
শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধুকে আরও শক্তিশালী রুপে আমাদের মাঝে হাজির করেছে মন্তব্য করে প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ আরও বলেন: নির্বাচন সম্পর্কে মানুষ যে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে উপজেলা নির্বাচনে তার প্রমাণ আমরা পাই। আমার দল পেয়েছে, আপনার দল পেয়েছে। মসজিদে ঘোষণা দিয়েও ভোটারদের আনা যায়নি। শুধু নির্বাচনের জন্য নয় গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।
রাশেদ খান মেনন বলেন: আমরা যেন মুষ্টিমেয় পাঁচজনের অর্থনীতি, বড়লোকদের উপর নির্ভরশীল না হয়ে পড়ি। দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন-অসহিষ্ণুতা এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধুর ছিলো তার সমাধি যেন না ঘটে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন, শুধু শতবর্ষ নয়; হাজার বছর তিনি বেঁচে থাকবেন। বাঙালির হৃদয়ে আমাদের সঠিক কর্ম ধারার মধ্যদিয়ে।