সংসদে সরকার ও সরকারের শরিক দলের অনেক সদস্য ঋণ খেলাপীদের কাছে ঋণ আদায় ও আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া তারা বিভিন্ন খাতে ধনীদের সুবিধা দেওয়া এবং সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোয় সমালোচনা করেন। তারা বলেন, এটা কি? ২০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বেড়ে ১ লাখ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। কী কারণে?
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বাজেট অধিবেশনে আজকের বৈঠকে সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন।
বিএনপির এমপি হরুন-উর-রশিদ বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। এই বাজেটে শেয়ার বাজার লুটকারীদের বিচারের কথা নেই। ব্যাংক লুটেরা, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা নেই বাজেটে। নজিবুল বশর মাইজ ভাণ্ডারী ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি, খেলাপী ঋণ গ্রহিতাদের প্রতি সরকারের নীতির সমালোচনা করেন। একইসঙ্গে তিনি স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে নির্দলীয় করারও দাবি জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আমি জানি বিড়ি-তামাক খাওয়া মানুষের মৃত্যুর কারণ। কিন্তু সিগারেটকে ট্যাক্স সুবিধা দিয়ে বিড়িকে বঞ্চিত করা ঠিক হবে না। আমার এলাকাতেই (রংপুরে) প্রায় ৫০-৬০ হাজার বিড়ি শ্রমিক কাজ করে। তাদের বিকল্প চাকরির একটা ব্যবস্থা না করে তাদের সরিয়ে দিলে তারা বাঁচবে কী করে? একইসঙ্গে বাজেটে পোশাক খাতে ভর্তুকি ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন।
বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের সক্ষমতার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী ৫ বছর পর এই সংসদে ১০ লাখ কোটি টাকার বাজেট করতে পারব বলে মনে করি। তিনি আরো বলেন, কালোটাকা কথাটা ঠিক না। এটা অপ্রদর্শিত অর্থ বলা সঠিক। আমরা মনে করি অপ্রদর্শিত অর্থকে সুযোগ দিলে নতুন করে বিনিয়োগ বাড়বে। কালো টাকা ব্যবসায় বিনিয়োগের সুযোগ না দিলে যেকোন উপায়ে ওই টাকা দেশ থেকে বের হয়ে যাবে। শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বাজেটে নতুন ব্যাংক আইন প্রণয়ন, স্বাস্থ্য বীমা ও কৃষি বীমাসহ ব্যাপক সংস্কারের প্রশংসা করেন।
জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈন উদ্দীন খান বাদল বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোয় কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, এটা কি তামাশার দেশ পাইছেন। ২০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প সেটা বেড়ে ১ লাখ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। কি কারণে? কেন, কী কারণে? যারা প্রজেক্ট বানায় তাদের ধরে এনে পিটানো উচিৎ! তিনি দীর্ঘদিনেও কালুরঘাট ব্রিজের কাজ শেষ না হওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রামে কালুরঘাট ব্রিজের সৎগতি (কাজের সুরাহা) না হলে সংসদ থেকে বের হয়ে যাব। এই অপমান মেনে নেওয়া যায় না।
তিনি নিজের শিক্ষকের একটা গল্প শুনিয়ে বলেন, আমার শিক্ষক আমাকে বলছেন, তোমার কালুরঘাট সেতুর কি হইল? আমি বলছি চেষ্টা করছি। কয় মিয়া তুমি আর কী চেষ্টা করবা। তোমার অবস্থা হইল তুমি হইলা বকা উল্লাহ, তুমি বইকা যাবা। শোনা উল্লারা শুইনা যাবে করিমুল্লারা কইরা যাবে, আর খানে উল্লারা খাইয়া যাবে। আর গরীবুল্লারা চর্তুদিকে ফ্যাঁ ফ্যাঁ কইরা তাকাবে রাজা রানীর কথা শুনবে আর বেশ বেশ করবে।