গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। সোমবার (১ জুলাই) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিএনপি’র উদ্যোগে আগামীকাল মঙ্গলবার (২ জুলাই) দেশব্যাপী জেলা সদর ও মহানগরগুলোতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে। এছাড়া একই দাবিতে ঐদিন ঢাকা মহানগরের থানায় থানায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে।
রিজভী বলেন, ‘বর্তমান মিডনাইট সরকার আবারও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। আওয়ামী লীগের ১০ বছরে গ্যাসের মূল্য বাড়িয়েছে ৬ বার। এর আগেও ১৯৯৬-২০০১ সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ সরকার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে ২ বার। এক চুলা ১৫০ টাকা ও দুই চুলা ২০০ টাকার গ্যাস এখন ৯২৫ টাকা ও ৯৭৫ টাকা করা হয়েছে। মূলত: ক্ষমতাসীনদের আত্মীয়-স্বজনদের লুটপাটের জন্যই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে সরকার।’
গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে যে প্রভাবগুলো পড়তে পারে তা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেলে বিদ্যুতের দামও বাড়বে। বাড়বে কল কারখানার উৎপাদন খরচও। গ্যাসের দাম বাড়ানোতে অবশ্যই জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। যারা সীমিত আয়ের লোক তাদের ওপর এর প্রভাব বেশি পড়বে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে সবধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত এবং বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। ব্যবসা করার খরচ বেড়ে যাবে। ফলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ বাড়বে। ফলে মূল্যস্ফীতিও বাড়বে। এ পরিস্থিতিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে দেশের গার্মেন্টস খাত মারাত্মক চাপে পড়ে যাবে। গ্যাসের এই দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যাবে। ব্যবসায়ীদের পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসহ সবধরনের পণ্যের দাম বাড়বে। এমনিতেই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এবং গাড়ি ভাড়া, বাড়ি ভাড়া আকাশছোঁয়া, তার ওপর আবার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি মানুষের জীবনকে আরও দুর্বিসহ অবস্থার মধ্যে ফেলে দেবে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাবে।’
‘গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে কয়েক হাজার কোটি টাকা জমা থাকা সত্ত্বেও এবং রাষ্ট্রীয় সব গ্যাস কোম্পানি লাভজনক অবস্থায় থাকার পরও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি দুর্নীতিকে আরও পাকাপোক্ত করবে। যার চূড়ান্ত ভুক্তভোগী হবে সাধারণ মানুষ। তাই গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে স্বল্প আয়ের মানুষকেই বেশি ভুগতে হবে। সাধারণ মানুষের জীবনে আরও দুর্ভোগ নেমে আনবে। এ সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ গণবিরোধী ও গরীব মারার সিদ্ধান্ত।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘সারাদেশে নৃশংসতা আর নারকীয় ঘটনার বেশির ভাগই ঘটাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগিরা। দেশে আইনের শাসন নেই, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা না থাকায় গুম, খুন, ধর্ষণ, বিচারবর্হিভূত হত্যার হিড়িক চলছে।’
রিজভী বলেন, ‘বরগুনায় রিফাত শরীফের খুনিরা ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়েই ক্ষমতাধর ও ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য। বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দুই নেতা ও সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবং একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের লোকজন এ লোমহর্ষক ঘটনায় জড়িত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন ছবি থেকে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে-ছাত্রলীগের বিভিন্ন মিটিং মিছিলে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।’
সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস-চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান,যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল,সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।