বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের জনগণের প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার নীলনকশা তৈরী করেছে সরকার। তাকে মিথ্যা মামলায় ক্ষমতার মত্ততায় দেড় বছর বন্দী রাখা হয়েছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ। তার জামিনে এখন সরাসরি বাধা দিচ্ছেন মিডনাইট নির্বাচনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আদালতে হস্তক্ষেপ করার পাশাপাশি দেশনেত্রীর আইনজীবীদেরও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধা দেয়া হচ্ছে। দেশনেত্রীর ওকালতনামায় স্বাক্ষর করতে দেয়া হচ্ছে না।
এর মাধ্যমে একজন নাগরিক হিসাবে সংবিধান প্রদত্ত আইনগত অধিকার থেকেও তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এর থেকে জুলুম আর কি হতে পারে? এখানেই প্রমানিত হয়-কর্তৃত্ববাদী সরকারের হাতের মুঠোয় থাকে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলবো-মধ্যরাতের নির্বাচনে মিথ্যা জয়ের অহংকারে, আর কত জুলুম করবেন ৭৪ বছর বয়সী একজন মহিয়সী বয়স্ক নারীকে? আর কতদিনে মিটবে আপনার নির্দয় প্রতিহিংসার তৃষ্ণা? আমি এই মূহুর্তে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তার নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
রিজভী বলেন, ‘নিশিরাতে ভোট ডাকাতির খবর প্রকাশিত হওয়ার পর এখন ভোট ডাকাত সরকারের আর এক মুহূর্তও ক্ষমতায় থাকার ন্যূনতম অধিকার নেই। সারা দেশের ১০ কোটি ৪১ লাখ ভোটারের ভোটাধিকার দস্যুবৃত্তির দ্বারা ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। এখন জবরদখলকারী দস্যুরাই দেশ শাসন করছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত দেশের প্রকৃত মালিক জনগণ তাদের ক্ষমতা ফিরে পাবে না।’
তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে দেশের মালিক জনগণকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে বর্তমান ধিকৃত আগ্রাসী সরকার। ভোটারদের সঙ্গে প্রতারণা, সন্ত্রাস ও হিংস্রতা দিয়ে জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা বদলের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। তখন জনরোষে, দুর্বার আন্দোলনের মুখে এই সরকারের পতন ইতিহাসের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’
একাদশ নির্বাচন নিয়ে গণমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রকাশিত প্রতিবেদন তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও দেশের স্বনামধন্য নাগরিক সংগঠনগুলো ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। বিবিসি বলেছে-১৯৭ কেন্দ্রে শতভাগ এবং হাজারো কেন্দ্রে ৯৫ থেকে ৯৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে বলেছে- ৩০০টি আসনে ৪০ হাজার ১৫৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০৩টি আসনের ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে, ৯৯ শতাংশ ভোট পড়েছে ৩৫৮টি কেন্দ্রে, ৯৬ শতাংশ ভোট পড়েছে ৫১৬টি কেন্দ্রে। অর্থাৎ ১৪১৮টি ভোটকেন্দ্রে ৯৬ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ ভোট পড়েছে। সুজন সিইসিসহ সংশ্লিষ্টদের দায়ী করে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়েছে। আমরা মনে করি এই দাবি যথার্থ। মূলত: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩০০টি আসনেই ভোট জালিয়াতি ছিল নজীরবিহীন ও বিস্ময়কর।’