সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক রাশেদুল ইসলাম খান বলেন, ‘আজ রোববার সকাল পৌনে ৮টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।’
‘এরশাদের পরিবারের সদস্যদের এ খবর জানানো হয়েছে। তাঁরা হাসপাতালে এসেছেন। তাঁরাই এ ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন,’ যোগ করেন রাশেদুল ইসলাম খান।
এরশাদের উপ-প্রেস সচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালি বলেন, ‘আইএসপিআর থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে। তিনি সকাল পৌনে ৮ টায় মারা গেছেন। দল ও পরিবারের সদস্যরা মিলে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে।’
গত ২৬ জুন থেকে ঢাকার সিএমএইচে ভর্তি ছিলেন এইচ এম এরশাদ। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তিনি শারীরিক বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন। আশির দশকে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আট বছর ক্ষমতায় থাকা সাবেক এই সামরিক শাসক একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
সাবেক এই রাষ্ট্রপতির মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর স্ত্রী জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ, ছোট ভাই জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ দলের ঊর্ধ্বতন নেতারা সিএমএইচে ছুটে যান।
বিগত শতাব্দীর আশির দশকে সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে টানা আট বছর রাষ্ট্রপতি পদে ছিলেন এরশাদ। নব্বইয়ের দশকের শেষে এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিদায় নেন এই সামরিক শাসক।
মাঝখানে কিছুদিন কারাবাস করলেও প্রায় চার দশক নিজের রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন এরশাদ। বারবার জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন; সর্বশেষ জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বর্ণময় চরিত্রের জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রংপুর জেলার দিনহাটায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। তিনি চট্টগ্রামের পূর্ব বাংলার রেজিমেন্টাল ডিপোর উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৬৬ সালে কোয়েটায় মর্যাদাপূর্ণ কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ থেকে উন্নত কোর্স সম্পন্ন করেন। শিয়ালকোটে একটি ব্রিগেডের সঙ্গে সেবা করার পর তাঁকে ১৯৬৯ সালে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ড এবং ১৯৭১ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ড দেওয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধ শেষে এরশাদ পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন করেন। পরে তাঁকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল পদে নিযুক্ত করা হয়। ১৯৭৯ সালে তাঁকে সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের ফলে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ১৯৯১ সালে এরশাদ গ্রেপ্তার হন। ছয় বছর কারাভোগের পর ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি তিনি জামিনে মুক্ত হন।
কারাগারে থেকে এরশাদ ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে নিজ জেলা রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও এরশাদ সংসদে পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন।
গণঅভ্যুত্থানে পতনের পরও এরশাদের দল জাতীয় পার্টি জাতীয় সংসদে উল্লেখযোগ্য আসনে বিজয়ী হয়। কমবেশি করে একই ধারাবাহিকতা বজায় ছিল পরবর্তী সময়ের সাধারণ নির্বাচনেও। ২০০৬ সালে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট গঠন করে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের দল ২৭টি আসনে বিজয়ী হয়। এরপর দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের দল বিরোধী দলের ভূমিকায় উঠে আসে।