গুজব প্রতিরোধে মনিটরিং সেল গঠন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কাজ করবে এ সেল। গ্রাম পর্যায়ে যাতে কেউ গুজব ছড়িয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে না পারে সে জন্যই মনিটরিং সেল। সব ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহে সেলের কাজ শুরু হবে। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
বেশ কিছুদিন থেকে ছেলে ধরা গুজবে সারা দেশে বেশ কয়েকজন হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, এর পেছনে সরকারবিরোধী চক্রান্ত জড়িত। শুরুতে ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে না পারলে বড় ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
আওয়ামী লীগ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মনিটরিং সেল নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন দলের যুগ্ম সম্পাদক পর্যায়ের নেতারা। তারা কেন্দ্র থেকে মনিটরিং সেল দেখাশোনা করবেন। তৃণমূল নেতাকর্মীরা পাড়া-মহল্লায় সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করবেন। পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা কিংবা রক্ত লাগার কথা যে মিথ্যা ও গুজব তা জনগণের সামনে তুলে ধরবেন নেতাকর্মীরা।
এদিকে কয়েকজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, গুজব রটিয়ে গণপিটুনির ঘটনা বন্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তারা বলেছেন, যারা পদ্মা সেতু চায় না তারাই গুজবের হোতা। এ হোতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য দলের নেতাকর্মী এবং সংসদ সদস্যদের সতর্ক থাকতে হবে। বুধবার পৃথক অনুষ্ঠানে তারা একথা বলেন।
সতর্ক থাকুন, মানুষকে সচেতন করুন- ওবায়দুল কাদের : ঈদুল আজহার প্রস্তুতি, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়ক সংস্কার এবং সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি বলেন, গুজব রটিয়ে গণপিটুনির ঘটনা বন্ধে ইতিমধ্যে আমরা সরকারি ও দলীয়ভাবে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি।
সারা দেশে দলের নেতাকর্মী ও সংসদ সদস্যদের (এমপি) সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের সভা-সমাবেশের মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক ও সচেতন করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কিনা, দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আশা করছি, এ রকম পরিস্থিতি আর হবে না। পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। একই সঙ্গে, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।
গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা -কৃষিমন্ত্রী : রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, নানা রকম গুজব ছড়িয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। কিন্তু তারা সফল হবে না। জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা মানবতায় বিশ্বাস করি, ধর্মান্ধতায় নয়। এখানে ধর্মান্ধতার কোনো জায়গা নেই। ধর্মকে পুঁজি করে যারা জঙ্গিবাদের মতো গুজব সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে। গুজব সৃষ্টিকারীরা সফল হবে না।
যারা পদ্মা সেতু চায় না, তারই গুজবের হোতা -তথ্যমন্ত্রী : সচিবালয়ে নিজ দফতরে গুজব প্রতিরোধসংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, পদ্মা সেতুতে শিশু বলি দিতে হবে, এমন গুজব থেকেই ছেলে ধরা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। যারা পদ্মা সেতু চায় না, তারাই ‘শিশু বলি’ ও ‘ছেলে ধরা’ গুজবের হোতা। এসব গুজব প্রতিরোধে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে সারা দেশে ছেলে ধরা গুজব ছড়িয়ে অনেক নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এর সবগুলোই হত্যাকাণ্ড। যারা এ কাজ করেছে, তারা সবাই হত্যা মামলার আসামি। সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। একই সঙ্গে এ ধরনের গুজব যেন না ছড়ায়, সেজন্য নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ছেলে ধরার যে আতঙ্ক ছাড়ানো হয়েছে, এর কোনো সত্যতা এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এ গুজব ছড়ানোর কারণে ইতিমধ্যে ৪৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের অনেকেরই রাজনৈতিক পরিচয় জানা গেছে।’ গ্রেফতার ৪৪ জনের রাজনৈতিক পরিচিত কি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তদন্তাধীন বিষয়। এ মুহূর্তে এটা বলতে চাই না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই কথা বলবে। গুজব প্রতিরোধে স্বরাষ্ট্র ও তথ্য মন্ত্রণালয় নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে।