জাতীয় শোক দিবসে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে শপথ নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আজকের দিনে পিতা তোমাকে কথা দিলাম, তোমার স্বপের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব, এটাই আমাদের অঙ্গীকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) ৭ মার্চের ভাষণে শেষ কথা বলেছেন, প্রয়োজনে বুকের রক্ত দেব। আর সেই রক্তই তিনি দিয়ে গেছেন। আমাদের সেই রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে তার স্বপ্নপূরণ হবে।’
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। দিবসটি উপলক্ষে দুই দিনের কর্মসূচির অংশ হিসাবে শুক্রবার আলোচনা সভা হয়। সভার শুরুতে ১৫ আগস্ট শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে একমিনিট নীরবতা পালন করা করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ অন্তত এইটুকু বলতে পারি। তার আদর্শ নিয়ে আমরা চলেছি। কৃতজ্ঞতা জানাই দেশবাসীর প্রতি। বাবা-মা, ভাই সব একদিনে হারিয়ে নিঃস্ব-রিক্ত হয়েছিলাম। দেশ ছেড়ে যখন যাই সবই ছিল, যখন ফিরে আসি শূন্য। কেউ নেই। সব হারিয়ে কিন্তু পেয়েছিলাম লাখো মানুষ। তাদের আপন করে নিয়েছি। আর আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী মুজিব আদর্শের সৈনিক, তারাই আমাকে আপন করে নিয়েছে। সেখানেই পেয়েছি বাবা-মা ভাইয়ের ভালবাসা, এখানেই আমার সব থেকে বড় শক্তি।’
এসব কথা বলার সময় গলা ভারী হয়ে প্রধানমন্ত্রীর। আবেগ সামলে নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেখান থেকেই আমরা বড় প্রেরণা। একটা জিনিসই চিন্তাই রেখেছি। আমার বাবা, এই দেশ স্বাধীন করেছেন। এই দেশকে গড়ে তুলতে হবে। এদেশের মানুষকে মানুষের মতো বাঁচার সুযোগ করে দিতে হবে। উন্নত জীবন দিতে হবে। ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়তে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে আজ বাংলাদেশকে আমরা বিশ্বে একটা মর্যাদার আসনে নিয়ে এসেছি।’
‘আজ সারাবিশ্ব বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারা অবাক হয় যে, এত দ্রুত কিভাবে একটা দেশ উন্নত হতে পারে। হতে পারে তখনি, যখন যারা স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে, যারা নীতি-আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করে তারা যদি ক্ষমতায় থাকে, তাহলে একটা জাতি উন্নত হয়। কিন্তু যারা পরাজিত শক্তির দোসর তারা ক্ষমতায় থাকলে কোন জাতি এগোয় না, কোনো জাতি উন্নত হতে পারে না। আজ জাতির পিতা আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার আদর্শ আমাদের মাঝে আছে। সেই আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করলে দেশের মানুষের আস্থা-বিশ্বাস পাবে, সম্মান পাবে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন’, নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি শুধু এইটুকুই বলব আজকের দিনে, যে শোক-ব্যথা বুকে নিয়েও এদেশের মানুষের জন্য কাজ করেছি। শুধু আমার বাবার কথা চিন্তা করে। তিনি জীবনের সবকিছু বিসর্জন দিয়েছেন এই দেশের জন্য।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, আবদুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ অন্যরা।
এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর স্মরণে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মেরিনা জাহান। যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।