বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে অপসারণ করে সরকার পরিষ্কারভাবে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ সারাদেশে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি করে মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করে, জমি দখল করে, মানুষকে গুম করে, টাকা নেয়।
যুবলীগ-ছাত্রলীগ গত ১০ বছর যে অত্যাচার-নির্যাতন-চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি করেছে ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদককে অপসারণ করার মাধ্যমে সম্পূর্ণভাবে তাদের মুখোশ খুলে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকে বিরোধী দল নেই, তারপরেও সরকার এমন অবস্থায় পড়েছে, তাদের বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদককে অপসারণ করতে হয়েছে। কারণ, ঘুষের জন্য তারা দুর্নীতি করেছে। সরকার নাকি একটি তালিকা বের করেছে, সেখানে লেখা আছে ৫০০ জন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী চাঁদাবাজি করছে। এটা ৫০০ নয় ৫০০০ হবে বা তার চেয়ে বেশি হবে।
আজ (বুধবার) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (অ্যাব) আয়োজিত এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
মওদুদ বলেন, ‘এই সরকার একটি অসাংবিধানিক সরকার। কারণ, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন বলতে যা বোঝায়, সেই নির্বাচনের মাধ্যমে তারা নির্বাচিত হননি। তারা সত্যিকার অর্থে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না।জনগণের প্রতিনিধিত্ব যেহেতু তারা করে না, সেজন্য এই সরকার পরিচালনা করার সাংবিধানিক ক্ষমতা তাদের নেই। কিন্তু তারপরেও তারা জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। একেবারে বিরোধীদলকে নিষ্পেষিত করার মাধ্যমে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে। যেহেতু তাদের জবাবদিহিতা নেই সেইজন্য দুর্নীতি আজকে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে খবরের কাগজে দেখলাম দৈনিক নাকি ৭৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে, এটা কাদের টাকা? এটা জনগণের টাকা। যারা দুর্নীতি করেছেন…যাই স্মাগলিং করেছেন…অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করেছেন…তাদেরই টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে সংবিধান লংঘন করে। আজকে দুর্নীতি সর্বকালের সর্ব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে এই সরকারের সময়ে। অর্থাৎ এমন কোনো জায়গা নেই যেটি দুর্নীতিমুক্ত।
সরকারের আরও সমালোচনা করে তিনি বলেন, নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশ একটি বিরাট সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটের জন্য এই সরকারই সম্পূর্ণরূপে দায়ী। তাদের কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের মাটিতে রয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা একজন রোহিঙ্গাকেও দেশে ফেরত পাঠাতে পারেনি। এই সরকার যেহেতু একটি নতজানু সরকার, তাই রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা সফল হতে পারবে না। কারণ তারা দুর্বল, তাদের শক্তি নাই জনগণের সমর্থন তাদের নাই।
আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব নয় জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, এক বছর সাত মাস তিনি আজকে কারাগারে বন্দি। একটি বানোয়াট মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। তার শরীর খুবই খারাপ, কিন্তু তারপরেও এই অমানবিক সরকার বিভিন্ন কৌশলে, বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে…বিশেষ করে নিম্ন আদালত এখন সম্পূর্ণরূপে প্রশাসনের অধীনে কাজ করে, সেই কারণে আজও আমরা বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিশ্চিত করতে পারিনি। কারণ, তারা বেগম জিয়াকে ভয় করে, বেগম জিয়ার জনপ্রিয়তাকে ভয় করে।
মওদুদ বলেন, আমি বলতে চাই…এর আগেও আমি বলেছি আইনি প্রক্রিয়াতে আমরা তাকে মুক্ত করার জন্য চেষ্টা করছি, চেষ্টা করে যাবো। কিন্তু এর মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে আমরা যদি রাজপথে নামতে পারি, আন্দোলন করতে পারি তাহলেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে। সেই দিনের অপেক্ষায় আমাদের থাকতে হবে। আমাদের ধৈর্যধারণ করতে হবে। সেই জন্য সময়ের অপেক্ষা করে নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি যখন দেয়া হবে তখন সারা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে আমাদের আন্দোলন সফল করতে হবে এবং বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।
মানববন্ধনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, সহ-তথ্য বিষয়ক সম্পাদক সাংবাদিক নেতা কাদের গনি চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।