কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার চরগোয়ালী খন্দকার নাজির আহমেদ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবেন্দ্র চন্দ্র বৈষ্ণবের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার।
গত ৬ জুলাই বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান দাউদকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী। তিনি বিদ্যালয়ে গিয়ে নানা অনিয়মের বিষয়ে জানতে পারেন। শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ এলাকার অনেক মানুষ এই বিদ্যালয়ের নানা অনিয়মের কথা উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে তুলে ধরেন। অনেক বছর চরগোয়ালী খন্দরকার নাজির আহমেদ বহুমুখী উচ্চ
বিদ্যালয়ের কোন উন্নয়ন কাজ হয়নি। জরাজীর্ণ অবস্থান পড়ে আছে বিদ্যালয়ের ভবন। শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে ও অনেক ধরণের সমস্যা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের একটি বাজার থাকলেও সেখানে প্রভাবশালীরা দখল করে রাখায় কোন আয় আসছে না।
বিদ্যালয়ের এই নাজুক অবস্থা দেখে উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী, চরগোয়ালী খন্দকার নাজির আহমেদ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অর্থ আত্নস্বাদের বিষয় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্ত করার নিদের্শ দেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কানিজ আফরোজকে। দুইটি বিষয়ে তদন্ত করে ৩ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার কথা উল্লেখ করেন।
প্রথমত আলাদা সিড়ি নির্মানকাজ চলমান যা প্রধান শিক্ষকের নিকট উপজেলা চেয়ারম্যান জানতে চাইলে ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে স্কুল কমিটি ও উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিসকে না জানিয়ে অনুমোদনবিহীনভাবে তৈরী হচ্ছে বলে জানান।
দ্বিতীয় বিদ্যালয়ের একটি নতুন ভবন নির্মান অনুমোদন পত্রের জন্য অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে স্কুলের পক্ষ থেকে অনেক দিন আগে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন ঐ প্রধান শিক্ষক(দেবেন্দ্র চন্দ্র বৈষ্ণব ) যা স্কুল কমিটির অনুমোদনবিহীন।
আরো নানা অপকর্ম ও অর্থ আত্মস্বাদের চিত্র সেখানে লক্ষ্য করা হয় বলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে জানান। আরও উল্লেখ করেন প্রধান শিক্ষক তার মনগড়া মত স্কুল পরিচালনা করে যাচ্ছেন এবং তার সহকারি হিসেবে স্কুল কেরানী মাহফুজুর রহমান এ কাজের সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িত। উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তার কাছে দেয়ার অনুরোধ জানান। এই অনুলিপি কুমিল্লার জেলা শিক্ষা অফিসার, দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে দেন।
পরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কানিজ আফরোজ গত ২৫ জুলাই সুন্দরপুর মডেল ইউনিয়নের চরগোয়ালী খন্দকার নাজির আহমেদ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে যান। সেখানে প্রতিটি শ্রেনীকক্ষ পরিদর্শন করে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা ও লেখাপড়ার খোজখবর নেন।
প্রথম অভিযোগটি সত্য বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার কানিজ আফরোজ। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করেন তিনি অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে
কমিটির সভায় অনুমোদনবিহীন কোন উন্নয়নমুলক কাজ করতে পারেন না। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলেও উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার প্রতিবেদন দেন।
দ্বিতীয় বিষয়টিও সত্য প্রমানিত হয়েছে বলে জানান তিনি। প্রধান শিক্ষক প্রাক্তন সভাপতি ও সদস্যদের মৌখিক নির্দেশে বিদ্যালয়ের উন্নয়নমুলক কাজের জন্য ১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা বিদ্যালয়ের তহবিল হতে শর্ত সাপেক্ষে দিয়েছেন। অফিস সহকারীসহ অন্যান্য শিক্ষক কর্মচারীরা জিজ্ঞাসাবাদে তা শিকার করেছেন বলেও জানান। কিন্তু কমিটির রেজুলেশনে কোন অনুমোদন নেই। পরে ৩ দিনের মধ্যে টাকা ব্যাংকে জমা দেয়ার নির্দেশনা দেন। এবং প্রধান শিক্ষক টাকা জমা দেন।
এখন প্রশ্ন হলো প্রধান শিক্ষক যে অনিয়ম দুর্নীতি করেছেন তার বিরুদ্ধে প্রশাসন কি ব্যবস্থা নেয় সেটাই দেখার বিষয়। কারণ বর্তমান সরকারের শিক্ষার মান উন্নয়নসহ একটি শিক্ষিত জাতি গঠন করার লক্ষ্যে এই প্রধান শিক্ষক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এলাকাবাসী জানায়, স্থানীয় ৭ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার আওলাদ হোসেন মুন্সীসহ এলাকার প্রভাবশালীদের কারণ কাউকে তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন প্রধান শিক্ষক দেবেন্দ্র চন্দ্র বৈষ্ণব।