গত ভোটে নির্বাচন করতে প্রার্থীদের মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়েছেন ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। বর্তমানে প্রভাবশালী অন্তত ২০ জন এমপি রয়েছেন, যারা যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি (বহিষ্কৃত) সম্রাটের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নির্বাচন করেছেন। ওই ভোটে একজন প্রার্থীকে তার দিতে হয়েছিল সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টাকা। সর্বনিম্ন ৫ লাখ টাকাও দিয়েছেন কোনো কোনো এমপি প্রার্থীকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জেরার মুখে ফাঁস করে দেওয়া সম্রাটের এসব তথ্যের সত্যতাও খুঁজে পাচ্ছেন গোয়েন্দারা।
সূত্র জানায়, রিমান্ডে থাকা সম্রাটকে ধীরেসুস্থে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যেই তার শারীরিক অবস্থাও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সম্রাটের শারীরিক অবস্থা এখন ভালো। র্যাবের জেরায় সম্রাট তার শেল্টারদাতার নাম যেমন প্রকাশ করেছেন, তেমনি যারা তার টাকায় গত নির্বাচনে অংশ নিয়ে এমপি হয়েছেন, তাদের নামও বলে দিয়েছেন। নামের তালিকা ক্রমে লম্বা হচ্ছে। টাকা নেওয়াদের তালিকায় যুবলীগের শুধু নয়, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপিদের নামও রয়েছে। এমন নেতাদের নামও উঠে এসেছে, যাদের ‘ক্লিন ইমেজ’-এর মানুষ হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে। এদের ব্যাপারেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার সম্রাটের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অস্ত্র ও মাদক মামলায় ৫ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে ঢাকার একটি আদালত।
একই সঙ্গে তার সহযোগী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমানের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। প্রথমে সম্রাট ও আরমানকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে সম্রাট ও আরমানের মামলার তদন্তভার পুলিশের কাছ থেকে র্যাবে ন্যস্ত করা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার তাদের দুজনকে নেওয়া হয় র্যাব-১ কার্যালয়ে। সেখানেই তাদের এখন জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
জিজ্ঞাসাবাদকারী সূত্র জানায়, গত জাতীয় নির্বাচনে ২০ জন প্রার্থীকে টাকা দিয়েছেন সম্রাট। জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট বলেছেন, সবচেয়ে বেশি টাকা দেওয়া হয়েছে ঢাকা-৮ আসনের এমপি প্রার্থীকে। তাকে নির্বাচনের আগে মোট ৭০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। তিনি নির্বাচনে জয়ী হয়েই পরদিন আরও ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু সম্রাট সেই ২০ লাখ টাকা দেননি। তবে এই এমপিকে প্রতি মাসে চার লাখ টাকা করে নজরানা দেওয়া হতো। কোনো কোনো মাসে এই অঙ্কের পাশাপাশি বাড়তি টাকার জন্যও চাপ দিতেন তিনি। র্যাব ১৮ সেপ্টেম্বর ইয়ংমেনস ফকিরেরপুল ক্লাব দিয়ে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে। ঢাকা-৮ আসনের এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এই ক্লাবের চেয়ারম্যান। আর সভাপতি ছিলেন যুবলীগের আরেক বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া।
সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবাদকারী সংস্থার এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ওই এমপির (মেনন) নির্বাচনী এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্যাসিনো চলছিল। এ জন্য সম্রাটের কাছ থেকে তিনি নিয়মিত টাকা নিতেন। সম্রাটের সহযোগী যুবলীগের আরেক নেতা আরমান এই টাকা বহন করে দিয়ে আসতেন বিভিন্ন নেতাকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্রাট ঢাকায় ক্যাসিনো-বাণিজ্য পরিচালনার আদ্যোপান্ত তথ্য দিয়েছেন। কাদের কীভাবে কত টাকা দিতেন সেসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়েছেন তিনি। সম্রাট নিয়মিত সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে সেন্ড ক্যাসিনো খেলতে যাওয়ার কথা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। সিঙ্গাপুরে কীভাবে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা নিতেন এবং প্রতি মাসে কত টাকা ক্যাসিনো খেলে ওড়াতেন সেসব বিষয়েও মুখ খুলেছেন তিনি।
সম্রাটের সঙ্গে ক্যাসিনো খেলতে সিঙ্গাপুরে গিয়েছেন প্রভাবশালী কজন নেতা।
সূত্র জানায়, সম্রাটের টাকা-পয়সার হিসাব রাখতেন আরমান। ঢাকায় কাদের কত টাকা দিতে হবে সেটি সম্রাট বলার পর আরমান বাস্তবায়ন করতেন। এ ছাড়া বিদেশে টাকা পাচারের জন্য সম্রাটকে সহায়তা করতেন আরমান ও কাউন্সিলর সাঈদ। সম্রাটের প্রায় সব বিষয়েই জানেন আরমান। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সম্রাট ও আরমানের কাছ থেকে পৃথকভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পৃথকভাবে দেওয়া তাদের দুজনের তথ্য মিলে যাচ্ছে।